কেন্দ্রে বিজেপি সরকার গঠন হয়নি। হতে চলেছে এনডিএ সরকার। যার প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেবেন নরেন্দ্র মোদী। বাংলাতেও তৃণমূল কংগ্রেস জিতে নিয়েছে ২৯টি লোকসভা আসন। ফলে ভোট এখানেই শেষ। কিন্তু এবার ভোটে জিতেও আনন্দ নেই। কারণ উল্টে বিধায়কের আচরণের প্রতিবাদে এবার পদত্যাগ করলেন তৃণমূল কংগ্রেস পরিচালিত পঞ্চায়েত প্রধান ও উপপ্রধানরা। এই ঘটনাটি ঘটেছে হুগলিতে। তাঁদের অভিযোগ, চুঁচুড়া বিধানসভায় রচনা বন্দ্যোপাধ্যায় ভোট কম পেয়েছেন বলে ওই বিধানসভার বিধায়ক তাঁদের সঙ্গে ‘গরু–ছাগলের’ মতো ব্যবহার করেছেন। হুগলি লোকসভা কেন্দ্রে তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী রচনা বন্দ্যোপাধ্যায় ৭৬,৮৫৩ ভোটে হারিয়ে দিয়েছেন বিজেপি প্রার্থী লকেট চট্টোপাধ্যায়কে। ২০১৯ সালে হুগলিতে জিতেছিলেন লকেট।
এদিকে এই জয়ের পর হুগলি জুড়ে স্লোগান উঠেছে ‘দিদি নম্বর ওয়ান’। কিন্তু তারপরও এমন পরিস্থিতির কথা শুনতে হচ্ছে রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। সাতটি বিধানসভার মধ্যে তিনটিতে পরাজিত হয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী। হুগলি লোকসভা কেন্দ্রে অন্তর্গত ৭ বিধানসভা মধ্য়ে ৩টিতেই এগিয়ে রয়েছেন বিজেপি প্রার্থী। ভোটের ব্য়বধান সবচেয়ে বেশি চুঁচুড়ায়। ৮ হাজারেও বেশি। এদিন চূঁচুড়ার ব্যান্ডেল,দেবানন্দপুর,কোদালিয়া–১ ও ২ গ্রাম পঞ্চায়েতে প্রধান ও উপপ্রধানের সঙ্গে বৈঠকে বসেন তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ক অসিত মজুমদার। ছিলেন চুঁচুড়া পুরসভার কর্তারাও। সূত্রের খবর, সেখানে বিধায়ক তীব্র ভর্ৎসনা করেন প্রধান, উপপ্রধান এবং অন্যান্য জনপ্রতিনিধিকে। কয়েকজন পঞ্চায়েত সদস্যের দাবি, তাঁদের চরম অপমান করেছেন বিধায়ক। তাই সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েতগুলির প্রধান–উপপ্রধানেরা মগরা বিডিও অফিসে গিয়ে পদত্যাগ করেন। যা নিয়ে চর্চা তুঙ্গে।
আরও পড়ুন: ‘১৫ দিনের মধ্যে বাংলা থেকে চলে যেতে হবে’, রাজ্যপালের বিরুদ্ধে কড়া হুঁশিয়ারি ব্রাত্যর
অন্যদিকে এই ঘটনা ঘটলেও অনুতপ্ত নন বিধায়ক অসিত মজুমদার। আসলে তাঁর উপর দায়িত্ব ছিল। জবাব তাঁকেও দিতে হবে। তাই সমঝে দেওয়ার বদলে কড়কে দেন তিনি। এই বিষয়ে অসিত মজুমদার বলেন, ‘চারজন পঞ্চায়েতের প্রধান ও উপপ্রধানরা পদত্যাগ করেছেন। আমি তাদের ধন্যবাদ জানাই। কারণ, তাঁদের বিবেক আছে। তাঁরা থাকা অবস্থায় দলে পরাজয় হয়েছে। মানুষ বিজেপিকে ভোট দিয়েছে। কেন? সেটা নিয়ে পর্যালোচনা করব।’ চুঁচুড়া পুরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কংগ্রেস কাউন্সিলর ঝন্টু বিশ্বাসের অভিযোগ, ‘দলের কর্মী থেকে কাউন্সিলরদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহারের ফল এটা। কাউন্সিলরদের সঙ্গে কুকুর–ছাগলের মতো ব্যবহার করেন বিধায়ক। তাই মুখ ফিরিয়েছেন। তাই এই পরাজয়। এভাবে দল চালালে একদিন তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়বে সংগঠন।’
এছাড়া বিজেপি নেতা সুরেশ সাউয়ের এই ঘটনায় কটাক্ষ করেন, ‘হারের দায় বিধায়ক কেন নিচ্ছেন না? তিনিই তো চুঁচুড়ার অভিভাবক।’ আর বিজেপি প্রার্থী লকেট চট্টোপাধ্যায় এখন নয়াদিল্লি গিয়েছেন। বাংলার দলের ভরাডুবির পর কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে দ্বারস্থ হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। শুধু হারের কারণ পর্যালোচনা নয়, নয়াদিল্লির নেতাদের তথ্য দেবেন তিনি। লকেট বলেন, ‘মানুষের আশীর্বাদ পেয়েও কেন পরাজয় খতিয়ে দেখতে হবে।’ আবার লকেটের পরাজয়ের খুশিতে মাথা মুণ্ডন করেছেন বিজেপি ত্যাগী দুই তৃণমূল কংগ্রেস কর্মী। শ্যামাকান্ত দাস এবং নিমাই সানা ত্রিবেনী ঘাটে গিয়ে মাথা মুণ্ডন করেন। এঁরা আগে বিজেপি কর্মী ছিলেন। লকেটের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হওয়ায় তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেন। প্রতিজ্ঞা করেন লকেট হারলে মাথা মুণ্ডন করবেন। তাই করলেন।