লোকসভা নির্বাচন শেষ হয়ে ফলাফল প্রকাশ হয়ে গিয়েছে। আর তাতেই দেখা যাচ্ছে ঘাসফুল ঝড় অব্যাহত বাংলায়। বিজেপির জায়গা যে বাংলা নয় তা বারবার প্রমাণ হয়েছে। একুশের বিধানসভা নির্বাচন, পুরসভা নির্বাচন, পঞ্চায়েত নির্বাচন এবং ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচন প্রমাণ করেছে বাংলার মানুষ দিদির গ্যারেন্টিতেই ভরসা রাখছেন। এখানে মোদীর গ্যারেন্টি বা ম্যাজিক কোনওটিই কাজ করেনি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়–অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের যুগলবন্দীতে বাংলায় বাজিমাত করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। আর এই আবহে হেরে গিয়ে বিস্ফোরক কিছু কথা বললেন বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ।
এবার বর্ধমান–দুর্গাপুরের লোকসভা কেন্দ্র থেকে প্রার্থী করা হয়েছিল দিলীপ ঘোষকে। যেখানে মেদিনীপুরের জয়ী সাংসদ ছিলেন দিলীপ ঘোষ। এই অদলবদলের পিছনে কি চক্রান্ত বা কাঠিবাজি ছিল? এই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। আজ, বুধবার ইকোপার্কে এসে প্রাতঃভ্রমণ করছিলেন দিলীপ ঘোষ। তারপরই চিরাচরিত মেজাজে মুখোমুখি হন সাংবাদিকদের। দিলীপের নেতৃত্বে ১৮টি আসন এসেছিল। কিন্তু সুকান্ত–শুভেন্দু জুটি নিয়ে এল ১২টি আসন। সেখানে দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘পার্টি চলতে থাকে। লড়াই চলতে থাকে। নেতা পাল্টে যায়। এটা ঠিক আমরা ২০২১ পর্যন্ত এগিয়েছি। বহু কর্মী শহিদ হয়েছেন। আমরা ১৮ সংসদ এবং ৭৭ বিধায়ক পেয়েছিলাম। ওখানেই আমাদের গ্রোথ আটকে গিয়েছে। ভোটের শতাংশ একই আছে। আর গ্রোথ হয়নি। আমরা গত ৩ বছরে এগোতে পারিনি। আমরা যে গতিতে এগোচ্ছিলাম সেটা সারা দেশে আলোচনার বিষয় ছিল। সবাই অনেক আশা করেছিলাম। কিন্তু সব কর্মীরা নামেনি। গতি রুদ্ধ হয়ে গেলে কর্মীরা হতাশ হবেন।’
তাহলে কি পদ থেকে অপসারণ এবং আসন বদল বড় কারণ? এবার দিলীপ ঘোষের আসন বদল করা হয়েছিল। তার উপর সর্বভারতীয় সহ–সভাপতির পদও কেড়ে নেয় পার্টি। তারপর থেকে বিজেপি হেরো পার্টিতে পরিণত হয়। গোটা বিষয়টি নিয়ে দিলীপের বক্তব্য, ‘অসম্ভব কিছু না। সব সিদ্ধান্তের প্রভাব পড়ে। বাংলার মানুষ বলবেন এসব ঠিক হয়েছে না ভুল হয়েছে। আমাকে দল যখন যা বলেছে আমি নিষ্ঠার সঙ্গে করেছি। পুরো ইমানদারি দিয়ে করেছি। ফাঁকি রাখিনি। এবার বর্ধমানে হেরে যাওয়া, কঠিন সিট ছিল। যাঁরা সেখানে সেদিন ছিলেন তাঁরাও মেনেছেন একটা জায়গায় অন্তত লড়াই হয়েছে। দলের পলিসির ওপর অনেক কিছু নির্ভর করে। যাঁরা আমাকে ওখানে পাঠিয়েছেন তাঁরা ভাববেন।’
আরও পড়ুন: বাংলায় উপনির্বাচনের সংখ্যা বাড়ল, একাধিক বিধানসভার আসন এখন বিধায়কশূন্য
দিলীপ ঘোষ একবার আন্দামানে পাঠানো হয়েছিল। তখন লোকসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি চলছিল। এই বিষয়টি নিয়ে দিলীপ ঘোষের কথায়, ‘কালাপানি কাকে বলে আমি জানি। চক্রান্ত এবং কাঠিবাজি রাজনীতির অঙ্গ। আমি ব্যাপারটা সেভাবেই নিয়েছি। তার পরেও যথেষ্ট পরিশ্রম করেছি। কিন্তু সফলতা আসেনি। রাজনীতিতে সবাই কাঠি নিয়ে ঘুরতে থাকে। আমি যেটুকু রাজনীতি বুঝি, দেশে বহুবার এরকম উত্থান পতন হয়েছে। রাজীব গান্ধীর মৃত্যুর পর বিজেপি দুটো আসন পেয়েছিল। অটলবিহারী বাজপেয়ীর মতো লোককে হারতে হয়েছিল। তখন মমতার মাত্র ৮টা সিট ছিল। উনি বাড়িয়ে ক্ষমতায় এসেছেন। ব্যক্তিগত রেষারেষির এবং ভুল পলিসির জন্য এভাবে হাজার হাজার কর্মীর আত্মত্যাগ বিফলে চলে গেলে পরবর্তীকালে তাদের দলের কাজে লাগানো মুশকিল হবে। মানুষের পার্টির ওপর আস্থা চলে যাবে।’
রামমন্দির ইস্যু, সন্দেশখালি ইস্যু থাকলেও হেরেছে বিজেপি। ভাল ফল করেছে ইন্ডিয়া জোট। এই বিষয়গুলি নিয়ে দিলীপ ঘোষের মত, ‘রামমন্দির আন্দোলন যখন প্রথম শুরু হয় তখন ওখানে সিপিআই জিতত। তারপর বিনয় কাটিহারকে ওখানে নিয়ে এসে জেতা যায়। রামমন্দির নিয়ে এতো আন্দোলন এবং মন্দির বানিয়ে দেওয়া, তারপরেও কেন হেরেছি? কারণটা পৌরাণিক। অযোধ্যার লোক রামকে ছাড়েনি। সীতাকে বনবাসে পাঠিয়েছে। মোদী কে? যোগী কে? আর নাইডু এবং নীতীশবাবুর মতো পাল্টিরাম যাঁরা আছেন তাঁদের ওপর ভরসা করা মানেই বেইমানি। বারবার ঠকতে হয়। এরা বিজেপির সাপোর্ট নিয়ে জেতে। তারপর বিজেপি ছেড়ে অন্যের সঙ্গে হাত মেলান। এটা দল দেখবে। তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায় কেউ বিশ্বাস করে না। আর সন্দেশখালি আন্দোলনটা রাজনৈতিক ছিল না। সাধারণ মানুষের আন্দোলন ছিল। পরে এটাকে বিজেপি টেকআপ করে। আমরা তাদের ন্যায় দেওয়ার চেষ্টা করেছি। এখন ওই মহিলারা ওখানে আর থাকতে পারবে কিনা জানি না।’