লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশ হতেই দেখা যায় বাংলায় জোর ধাক্কা খেয়েছে বিজেপি। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে ১৮টি আসন পেয়েছিল গেরুয়া শিবির। আর ২০২৪ সালে তা কমে হয়েছে ১২টি। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের ঘোষিত লক্ষ্য ৩০ তো হলই না। উলটে জেতা আসনগুলি হাতছাড়া হয়ে গিয়ে আসন কমে গেল। তবে এই ফলাফলের মধ্যেও বেশ কিছু ‘ইতিবাচক’ দিক খুঁজে পাচ্ছেন বঙ্গ–বিজেপির নেতারা। অনেকে বলেছেন এই ইতিবাচক দিক বলে কিছু হয় না। ওটা মানুষকে বোঝানোর কৌশল মাত্র।
একুশের বিধানসভা নির্বাচনের তুলনায় বাংলায় বিজেপির ভোট শতাংশ একটু বেড়েছে। ওই বিধানসভা নির্বাচনে রাজ্যে ৭৭টি আসন জিতেছিল বিজেপি। তবে পরে সেটা বেশ কমে যায়। লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল অনুযায়ী, তারা এখন ৯০টি বিধানসভায় এগিয়ে আছে। ১৯টি এমন বিধানসভা আছে যাতে ‘লিড’ এসেছে। কিন্তু ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে আসন সংখ্যা বেশি থাকলেও বিজেপি হেরেছিল একুশের বিধানসভা নির্বাচনে। উত্তরবঙ্গের ৬টি বিধানসভা আসন। জলপাইগুড়ি, ধূপগুড়ি, কালিম্পং, করণদিঘি, হেমতাবাদ, বৈষ্ণবনগর ও মানিকচক আসন তারা লোকসভা নির্বাচনের হিসাবে ফেরাতে পেরেছে। আর দক্ষিণবঙ্গের কৃষ্ণনগর দক্ষিণ, তেহট্ট, হাবড়া, বিধাননগর, জোড়াসাঁকো, শ্যামপুকুর, চুঁচুড়া, বলাগড়, সপ্তগ্রাম বিধানসভায় বিজেপি এগিয়েছে।
আরও পড়ুন: পিনারাই বিজয়নকে কি সরিয়ে দেওয়া হবে? লোকসভার ফলে সিপিএমের অন্দরে গুঞ্জন
এই হিসেবই এখন মানুষের সামনে তুলে ধরছেন শুভেন্দু অধিকারী–সুকান্ত মজুমদাররা এবং তা শুনছেন কর্মীরাও। কিন্তু এই ভোট বেড়েছে বা কমেছে এটা গ্রামের মানুষকে বোঝানো কঠিন। মানুষ বিজেপিকে ভোট দেয়নি এটাই সব ক্ষেত্রে উঠে আসছে। আর বিজেপির বড় সাফল্য বলতে বিরোধী দলনেতার জেলায়। এখানের দুটি আসনেই জিতেছে বিজেপি। আর সেই হিসাবে এখানে বিজেপি ৯টি আসনে এগিয়ে রয়েছে। যা রাজ্য বিজেপির ইতিহাসে প্রথম। তমলুক, পাঁশকুড়া পূর্ব, মহিষাদল, চণ্ডীপুর, নন্দকুমার এবং রামনগর আসনে বিজেপি এগিয়ে আছে। মুর্শিদাবাদের বড়ঞা, জঙ্গিপুর ও সন্দেশখালিতেও এগিয়ে বিজেপি।
এখানেই শেষ নয়, কলকাতা উত্তর, যাদবপুরের মতো তৃণমূল কংগ্রেসের শক্ত ঘাঁটিতে ভোট বেড়েছে বিজেপির। আসন মেলেনি। এই বিষয়ে বিজেপির রাজ্যসভার সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘সবমিলিয়ে আমরা ভাল ফল করেছি।’ কলকাতা পুরসভার ৫১টি ওয়ার্ডে এবং রাজ্যের অধিকাংশ পুরসভায় তৃণমূল কংগ্রেসকে পিছনে ফেলে এগিয়েছে বিজেপি। শিলিগুড়ি, রায়গঞ্জ, ইংরেজবাজার থেকে শুরু করে দক্ষিণের বাঁশবেড়িয়া, গোবরডাঙা, কালনা, কাটোয়ার মতো পুরসভায় এগিয়ে রয়েছে গেরুয়া শিবির। তৃণমূল কংগ্রেস নেতা কুণাল ঘোষের কথায়, ‘লোকসভা নির্বাচনে অন্য সমীকরণ কাজ করে। কিন্তু বিধানসভা এবং পুরসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস সেখানেই আবার ব্যাপক সাফল্য পাবে।’