লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। কিন্তু বাকি শরিকদের সমর্থনে এনডিএ সরকার গড়ে উঠবে। এটা সত্যিই প্রকৃত এনডিএ সরকার। কারণ বিজেপি এখন সংখ্যালঘু। এই আবহে বাংলার দিকে তাকালে বিজেপি জিতেছে ১২টি আসন। আগের বারের থেকে ৬টি আসন কমেছে। আর ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে সামান্য ব্যবধানে বিজেপি জিতেছিল বর্ধমান–দুর্গাপুর আসনটি। এবার ওই আসনে প্রার্থী করা হয় দিলীপ ঘোষকে। দলের বড় অংশ ওই আসনে জয় পাবে বলে নিশ্চিত ছিল। এমনকী আরএসএস’ও যে রিপোর্ট পেয়েছিল তাতে ওই আসনকে ‘এ+’ অর্থাৎ নিশ্চিত জয় বলে চিহ্নিত করেছিল। কিন্তু ওই কেন্দ্রেই বড় ব্যবধানে হারল বিজেপি।
এদিকে বর্ধমান পূর্ব আসনেও তৃণমূল কংগ্রেসের জয়ের ব্যবধান ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনের তুলনায় দ্বিগুণ হয়েছে। এটার অর্থ বিজেপির সংগঠন সেখানে নেই। আর থাকলেও তা অত্যন্ত দুর্বল। ওই লোকসভা কেন্দ্রে হেরেছেন হরিণঘাটার বিজেপি বিধায়ক তথা কবিয়াল অসীম সরকার। কিন্তু অন্তর্দ্বন্দ্ব এবং সাংগঠনিক দুর্বলতাতেই কি এমন বিপর্যয়? এই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। বিজেপির অন্তর্ঘাত হতে পারে বলেও অনেকে মনে করছেন। যদিও বিজেপির বেশিরভাগ লোকসভা আসনেই হার হয়েছে। এমনকী দুই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এবার হেরে গিয়েছেন। যদিও বর্ধমান–দুর্গাপুর আসনে পরাজয়ের পিছনে চক্রান্ত এবং কাঠিবাজি আছে বলে মনে করেন দিলীপ ঘোষ। আর তাঁর জমানায় বিজেপির ছিল ১৮ আসন। এখন সুকান্ত–শুভেন্দু জুটির আমলে জুটেছে ১২ আসন।
আরও পড়ুন: কংগ্রেসের সঙ্গে ভবিষ্যতে কোনও জোট নয়, নির্বাচনী পরাজয়ের পর সিদ্ধান্ত ফব– আরএসপি’র
অন্যদিকে ৬টি আসনে বিজেপির হার এবং হেভিওয়েট প্রার্থীরা হেরেছে। তবে দিলীপ ও অসীমের পরাজয়ের পিছনে সাংগঠনিক দুর্বলতাকে পরাজয়ের অন্যতম কারণ বলে মনে করেছেন বঙ্গ–বিজেপির নেতারা। মেদিনীপুর কেন্দ্র থেকে দিলীপকে বর্ধমান– দুর্গাপুর আসেন পাঠানোর সিদ্ধান্ত ভুল কিনা সেটা নিয়েও জোর চর্চা শুরু হয়েছে। দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘এই সিদ্ধান্ত ঠিক না ভুল সেটা বাংলার মানুষ বলবেন। আমাকে দল যে কাজ দিয়েছে সেটা নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করেছি। কখনও কোথাও ফাঁকি দিইনি। আমি অত্যন্ত পরিশ্রম করেছি। সেখানে আমি যা লড়াই দিয়েছি, তাতে একটা লড়াই হয়েছে। আমাদের পরিশ্রমের ফাঁক ছিল না। বাকি নেতৃত্ব ভাববে। চক্রান্ত–কাঠিবাজি থাকবেই। এটা রাজনীতির অঙ্গ। রাজনীতিতে সবাই কাঠি নিয়ে ঘুরতে থাকে।’
এছাড়া বেশ কিছু ইস্যু বিজেপির বিপক্ষে গিয়েছে। সিএএ, এনআরসি, ইউনিফর্ম সিভিল কোড, বেকারত্ব, ১০০ দিনের কাজের টাকা বকেয়া, আবাস যোজনার টাকা না আসা এবং ১৫ লক্ষ টাকা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে না আসা হারের বড় কারণ বলে অনেকে মনে করছেন। তার সঙ্গে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের মূল্যবৃদ্ধি আর একটি কারণ। এগুলির সঙ্গে যুক্ত হয় আদি–নব্য নেতাদের দ্বন্দ্ব। সেখান থেকেই অন্তর্ঘাত হয়ে থাকতে পারে বলে মনে করছেন বঙ্গ–বিজেপির নেতারা। তবে অসীম সরকারের কথায়, ‘সাংগঠনিক দুর্বলতার জন্য হেরেছি। তৃণমূল কংগ্রেসকে হারানোর জন্য যে শক্তি দরকার ছিল সেটা আমাদের কাছে ছিল না। বর্ধমান পূর্ব লোকসভার সাতটি বিধানসভা কেন্দ্রই তৃণমূলের দখলে।’