কেন্দ্রে বিজেপি সরকার গঠন হয়নি। হতে চলেছে এনডিএ সরকার। যার প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেবেন নরেন্দ্র মোদী। বাংলাতেও তৃণমূল কংগ্রেস জিতে নিয়েছে ২৯টি লোকসভা আসন। ফলে ভোট এখানেই শেষ। কিন্তু বাংলার দিকে যদি তাকানো যায় তাহলে এক্সিট পোল একটি বিষয় মিলিয়ে দিয়েছে। তা হল–বামেরা শূন্য পাবে। এবারের লোকসভা নির্বাচনে পেয়েছেও তাই। আর চূড়ান্ত ব্যর্থ হয়ে সোশ্যাল মিডিয়া টিপ্পনি কাটতে শুরু করেছেন বামেদের অনেকেই। তাতেই তপ্ত হয়ে উঠেছে নেটপাড়া। এমনকী এই টিপ্পনী যেহেতু ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ প্রকল্পকে খোঁচা মেরে তাই সেটা গোটা পশ্চিমবঙ্গে আলোড়ন ফেলেছে।
বিষয়টি ঠিক কী ঘটেছে? এবারের লোকসভা নির্বাচনের আগে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পের ভাতা বৃদ্ধি করেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর এবার এই নির্বাচনে মহিলারা ঢেলে ভোট দিয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসকে। তাতেই বেশিরভাগ লোকসভা কেন্দ্রে তৃতীয় স্থানে পৌঁছেছে সিপিএম। এই ফলাফল দেখার পর ফেসবুকে একটি ভিডিযো পোস্ট করেন শ্রীলেখা মিত্র। তিনি অভিনেত্রী হলেও বামপন্থী। সেখানে তিনি লেখেন, ‘ব্যাস! আর তো কিছু চাই না। মাসে মাসে হাজার টাকা করে পেলেই বৌদিরা খুশি।’ এই মন্তব্য যে সরাসরি ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ প্রকল্পকে খোঁচা দিয়ে তা বুঝতে কারও অসুবিধা হয়নি। তারপরই আছড়ে পড়েছে মহিলাদের প্রতিবাদ।
আরও পড়ুন: জেডিইউ’র চাহিদা পূর্ণমন্ত্রীর বাইরে আরও অনেক কিছু, বিহারে কি বিজেপির ভাগ কমবে?
তারপর ঠিক কী ঘটল? এখানেই সিপিএমের নেতা–নেত্রীরা থেমে থাকেননি। বরং কড়া ভাষায় আক্রমণ করতে থাকেন। অনেকেই লিখেছেন, ‘শিক্ষা হেরেছে ভিক্ষা জিতেছে।’ এই কথার অর্থ হল বাংলার মহিলারা যাঁরা এই ভাতা নেন তাঁরা ‘ভিখিরি’। এটাই বাংলার মহিলারা মেনে নিতে পারেননি। নেটপাড়াতেই সিপিএমকে তুলোধনা করেন বহু মহিলা এবং জানিয়ে দেন, ৩৪ বছর সিপিএম কি করেছিল। মেয়েদের কথা তারা ভাবেনি। আর আজ যখন মহিলাদের কথা মুখ্যমন্ত্রী ভাবছেন তখন তাঁর প্রকল্পকে কটাক্ষ করা হচ্ছে এবং মহিলাদের আক্রমণ করা হচ্ছে। এই জন্যই সিপিএম শূন্য পেয়েছে। আসলে সৃজন ভট্টাচার্য, দীপ্সিতা ধরদের উপর সিপিএম অনেকটা আশা করেছিল। আর আশানুরুপ ফল না হওয়ায় এমন আক্রমণ করতে শুরু করেছেন তাঁরা।
আর কী জানা যাচ্ছে? এবারের লোকসভা নির্বাচনে সিপিএম ২৩টি আসনে প্রার্থী দেয়। যার মধ্যে ২১টি আসনে সিপিএম প্রার্থীদের জামানত জব্দ হয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেসের সরকার শুধুমাত্র লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্প করেনি। আরও প্রকল্প করেছে—স্বাস্থ্যসাথী, খাদ্যসাথী, কন্যাশ্রী, সবুজসাথী, রূপশ্রী–সহ আরও অনেক কিছু। সেগুলির মিলিত ডিভিডেন্ট পাচ্ছে মা–মাটি–মানুষের সরকার। আর সেটা মেনে নিতে পারছেন না সিপিএম–বিজেপি নেতারা। এই বিষয়ে কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ সদস্য মিতালি বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘সকলের আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্য থাকে না। তাই বলে তাঁদের অপমান করা উচিত নয়। নির্বাচনী প্রচারে বামেরা বলেছিল ভাতা দ্বিগুণ করবে ক্ষমতায় এলে। আর এখন ভিক্ষা বলছে। যে মহিলারা লক্ষ্মীর ভাণ্ডার পান তাঁরা ভিখিরি। ছিঃ।’ পরিস্থিতি বেগতিক দেখে সিপিএম নেতা নীলোৎপল বসু বলেন, ‘ভিক্ষার কাছে শিক্ষা হেরে গেল এই জাতীয় কথা গরিব বিরোধী। গণতন্ত্র বিরোধীও।’