বুথফেরত সমীক্ষা যদি কিছু মিলিয়ে থাকে তা হল, বামেরা একটি আসনও পাবে না। এই এক্সিট পোল কিন্তু লোকসভা নির্বাচনে মিলেছে। আর কংগ্রেস ৪২টি আসনের মধ্যে একটি আসন পেয়েছে। লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশের পর এই বিপর্যয়ের কারণ খুঁজতে শনিবার বৈঠকে বসেছিলেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলী। দলীয় সূত্রে খবর, এই বৈঠকে দলের অসহায়তার কথা তুলে ধরেছেন লালপার্টির নেতারা। আর তাই রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলী এখনই কোনও দিকনির্দেশ করছে না। আজ, রবিবার সিপিএমের পলিটব্যুরোর বৈঠক আছে। তারপর জুন মাসের ১৯–২০ তারিখ সিপিএমের রাজ্য কমিটির বৈঠক বসবে। তার আগে আবার একবার বৈঠকে বসবে রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলী। তখনই কোন কোন প্রশ্নে পর্যালোচনা করা হবে সেটা নির্ধারিত হতে পারে।
২০১১ সালে ক্ষমতা থেকে চলে যায় বামফ্রন্ট সরকার। তখন শূন্য ছিল না সিপিএম। তারপর ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ভাল ফল করে বিরোধী দল হয়। কিন্তু ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচন থেকে শূন্য হতে থাকে সিপিএম। একুশের বিধানসভা নির্বাচন হওয়ার সময়ও সেই শূন্যতা বৃদ্ধি পায়। তারপর থেকে যতগুলি নির্বাচন হয়েছে ততই শূন্যের দিকে এগিয়ে গিয়েছে সিপিএম। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল বলছে, সিপিএম মহাশূন্য। শনিবার সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠকে সে কথা উঠেছে। তৃণমূল ও বিজেপি দুই দলেরই বিরোধিতা করা হলেও ফল মেলেনি। তাতেই তৃতীয় হয়েছে বামেরা। এক সিপিএম নেতা বৈঠকে বলেন, ‘আমরা অসহায়। আমাদের আর কিছু হওয়ার ছিল না।’ এই কথার পাশাপাশি একুশের নির্বাচনের তুলনায় কিছু আসনে ভোটবৃদ্ধি পেয়েছে এমন তথ্যই তুলে ধরা হয়েছে বলে সূত্রের খবর।
আরও পড়ুন: উত্তর কলকাতা আসন জিততে স্ট্র্যাটেজি নেন স্বয়ং মমতা, বৈঠকে বকা খেলেন দেবাংশু
সিপিএম ইন্ডিয়া জোটে আছে। অথচ এই রাজ্যে তৃণমূল কংগ্রেসের বিরোধিতায় নেমে পড়ে। দোসর হয় কংগ্রেস। কিন্তু তাতে সিপিএমের কোনও লাভ হয় না। বরং কংগ্রেস একটি আসন জিতেছে। বাম–কংগ্রেস জোটকে বাংলার মানুষ ভালভাবে নেয়নি বলেই এমন ফলাফল হয়েছে। এমন তথ্যও উঠে আসে বৈঠকে। তবে বিজেপি সম্পর্কে নরম হতে চাইছেন না সিপিএম নেতারা। আবার তৃণমূল কংগ্রেস সম্পর্কে নরম মনোভাব নিলে পার্টিতে কেউ থাকবেই না। এই পরিস্থিতিতে দোটানায় পড়েছে সিপিএম। কিন্তু ইন্ডিয়া জোটে থেকে তৃণমূল কংগ্রেসের বিরোধিতা বাংলায় করলে কেমন ফল হয় তাও দেখেছেন সিপিএম নেতারা। তাই এই নিয়ে আরও আলোচনা প্রয়োজন বলে মনে করেন সিপিএম নেতারা।
ইতিমধ্যেই বামফ্রন্টের দুই শরিক আরএসপি এবং ফরওয়ার্ড ব্লক সিদ্ধান্ত নিয়েছে আর কংগ্রেসের সঙ্গে ভবিষ্যতে তাঁরা জোটে যাবেন না। এটা নিয়েও চিন্তায় বেড়েছে বড় শরিকের। আর সিপিএম সূত্রে খবর, সিপিএম রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর অধিকাংশ নেতাই শনিবারের বৈঠকে নিজেদের হতাশা ব্যক্ত করেছেন। আলোচনার অভিমুখ খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। বেঙ্গল লাইনের ভরাডুবি কেন? সেটা উত্তর এখনও মেলেনি। অথচ শুরু হয়েছে পলিটব্যুরো বৈঠক। সিপিএমের ভবিষ্যৎ কী? এই প্রশ্ন এখন উঠতে শুরু করেছে। তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে খোঁচা দেওয়া হয়েছে। সেটা হল—শূন্যের সঙ্গে শূন্য যোগ করলে শূন্যই হয়।