চোখ বন্ধ করে থাকলে পৃথিবী থেমে আছে মনে করলেও পৃথিবী কিন্তু থেমে থাকে না। তাই বাস্তবকে এড়িয়ে গেলেও যেটা বাস্তব সেটা থেকেই যায়। আর এই কাজকে ভাবের ঘরে চুরি করার সামিল ধরা হয়। সিপিএমের এখন এমন অবস্থাই হয়েছে। কারণ লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলে দেখা গিয়েছে বঙ্গ–সিপিএমের অঙ্গ শোভায় বুক ভরা শূন্যতা রয়েছে। কিন্তু সেটা তাঁরা যেন দেখতেই চাইছেন না। রবিবার প্রথম বৈঠক হয় সিপিএম পলিটব্যুরোর। লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলের পর সোমবার এই বৈঠকের প্রেস বিবৃতি প্রকাশ করেছে নয়াদিল্লির একে গোপালন ভবন। কিন্তু সেই বিবৃতিতে বাংলা নিয়ে কিছু উল্লেখ করা হয়নি। যা বিস্ময়কর।
সিপিএম পলিটব্যুরোর বৈঠকের পর একটি বিবৃতি দেওয়া হয়েছে। লোকসভা নির্বাচন ও তার ফলাফল সম্পর্কে সেখানে নানা কথা আছে। যেখানে নিজেদের ভরাডুবির কথা এড়িয়ে গিয়ে ২০১৪ ও ২০১৯ সালে বিজেপির যে ‘উত্থান’ দেখা গিয়েছিল সেটা এবার থমকে গিয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ‘ইন্ডিয়া’ জোটের ফলাফল নিয়েও উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছে পলিটব্যুরো। তারপরই ‘বামেদের পারফরম্যান্স’ শীর্ষক অনুচ্ছেদে লেখা হয়েছে, ‘বাম দলগুলি সামান্য হলেও লোকসভায় তাদের উপস্থিতি বৃদ্ধি করতে পেরেছে। বামেদের মোট আটজন সাংসদ সংসদে যাচ্ছেন। তাঁদের মধ্যে চারজন সিপিএম, দু’জন সিপিআই এবং দু’জন সিপিআই (এমএল) থেকে। তবে পলিটব্যুরো হতাশ কেরলের ফলাফল নিয়ে।’
আরও পড়ুন: ভারত–বাংলাদেশ ট্রেন পরিষেবা বাতিল করা হয়েছে, বন্ধন–মৈত্রী–মিতালি আপাতত বন্ধ
এই ফলাফলের পর এমন বিবৃতি থেকে স্পষ্ট বঙ্গ–সিপিএমের শূন্যতার বিষয়ে চোখ বন্ধ করে নিয়েছে শীর্ষ নেতারা। এভাবেই বাস্তবকে এড়িয়ে গেলেন সীতারাম ইয়েচুরিরা। এই বিবৃতিতে কেরলের নাম ঘুরে–ফিরে বারবার এলেও বাংলার নাম একবারও নেওয়া হয়নি। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচন, ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচন এবং ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বঙ্গ–সিপিএমের সব অঙ্কের ফল শেষে শূন্যই হয়েছে। বরং এই সিপিএমের ভোট পেয়ে একবার আইএসএফ এবং এবার কংগ্রেস একটি আসন লাভ করে। আর সিপিএম সেখানে শূন্য এ বুকে হয়ে বসে রয়েছে। যেখান থেকে বেরিয়ে আসতে পারছে না সিপিএম।
তাহলে বাস্তব থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া কেন? উঠছে প্রশ্ন। এই বিষয়ে পলিটব্যুরোর সদস্য নীলোৎপল বসু বলেছেন, ‘বাংলার পরিস্থিতি কেরলের থেকে অনেক কঠিন। আমরা পলিটব্যুরোর বৈঠকে এই কঠিন পরিস্থিতিতে বাংলার যে লড়াই তাকে অভিনন্দন জানিয়েছি। কিন্তু কেরল নিয়ে আমাদের আরও ভাল হওয়ার আশা ছিল। সেটা হয়নি। ওখানে ভোটও কমেছে।’ আসলে এখানে দুটি বিষয় কাজ করেছে। এক, বাংলাকে পলিটব্যুরো গুরুত্ব দিল না। দুই, সীতারাম ইয়েচুরির সঙ্গে বঙ্গ–সিপিএমের সম্পর্ক ভাল। তাই বাংলা নিয়ে বিবৃতি দিলে উঠে আসবে সমালোচনার ঝড়। তার থেকে ভাল বিষয়টি ঢেকে রাখা। তাহলেই এড়িয়ে যাওয়া যাবে। এভাবে কি বাস্তবকে এড়ানো যায়? প্রশ্ন উঠছে। যদিও ২০১৯ সালে কেরল থেকে একটি আসন জিতেছিল সিপিএম। এবারও একটি আসন জিতেছে। ২০১৯ সালে সংসদে তিনজন সাংসদ ছিল। এবার সেটা বেড়ে চার হয়েছে। রাজস্থানের সিকর লোকসভা কেন্দ্র জেতায়।