মহারাষ্ট্রের দক্ষিণভাগে অবস্থিত মুম্বই দক্ষিণ লোকসভা কেন্দ্রটি ৪৮ টি লোকসভার মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি আসন। বর্তমানে এই কেন্দ্রটি থেকে শিবসেনা (উদ্ধব বাবাসাহেব ঠাকরে)-এর পক্ষ থেকে অরবিন্দ গণপতি সাওয়ান্ত সাংসদ রয়েছে। মুম্বই দক্ষিণ লোকসভা কেন্দ্রটিতে ১৯৫২ সাল থেকেই লোকসভা ভোট অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। ২০০৮ সালের আসন পুনর্বিন্যাসের পর এই লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত ছটি বিধানসভা কেন্দ্র হল ওরলি, শিবাদি, বাইকুল্লা, মালাবার হিল, মুম্বাদেবী ও কোলাবা। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের তথ্য অনুসারে এই কেন্দ্রের মোট ভোটার ছিল ১৫ লক্ষ ৫৪ হাজারের বেশি।
এবার দক্ষিণ মুম্বইয়ের এই লড়াই কিছুটা ব্যতিক্রমী। ১৯৭৭ এর পর প্রথমবার কোনও দেওরা লড়াই করছেন না এই আসন থেকে। প্রথমে মুরলি দেওরা ও তারপর তাঁর ছেলে মিলিন্দ, বারবার এই আসন থেকে লড়েছেন। কখনো জিতেছেন, কখনো হেরেছেন কিন্তু বারংবার লড়াইয়ে থেকেছেন। এবার সেই ধারায় ছেদ পড়ল। প্রত্যাশা ছিল এনডিএ-র থেকে হয়তো টিকিট পাবেন কংগ্রেস ছেড়ে আসা মিলিন্দ। কিন্তু শেষ পর্যন্ত শিবসেনা ভরসা রেখেছে দলের নেত্রী যামিনী যাদবের ওপর। অন্যদিকে শিবসেনা উদ্ধবের হয়ে লড়াইয়ে মোদী সরকারে মন্ত্রী থাকা পরিচিত মুখ অরবিন্দ সাওয়ান্ত।
লোকসভা নির্বাচনের ইতিহাস ঘাটলে দেখা যাবে এই কেন্দ্রটি জাতীয় কংগ্রেস, বিজেপি, জনতা দল, শিবসেনা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলেরই প্রভাব থেকেছে। ১৯৫২ থেকে ১৯৬২ সাল পর্যন্ত কেন্দ্রটি জাতীয় কংগ্রেসের দখলে ছিল। ১৯৬৭-এর নির্বাচনে সম্মিলিত সমাজতান্ত্রিক দলের পক্ষ থেকে জর্জ ফার্নান্ডেজ এই কেন্দ্র থেকে সাংসদ নির্বাচিত হন। ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের কৈলাস নারায়ণ ১৯৭১ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলেন। ১৯৭৭ এবং ১৯৮০-এর নির্বাচনে জনতা দলের পক্ষ থেকে রতন সিংহ রাজদা এই কেন্দ্রের সাংসদ নির্বাচিত হন৷ ১৯৮৪ সাল থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত জাতীয় কংগ্রেসের পক্ষ থেকে মুরলি দেওরা ছিলেন মুম্বই দক্ষিণ কেন্দ্রের সাংসদ। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে প্রথম ভারতীয় জনতা পার্টি এই আসনটিতে জয়লাভ করে। ১৯৯৮ সালে ফের মুরলি দেওরা জাতীয় কংগ্রেসের পক্ষ থেকে এই কেন্দ্রে সাংসদ নির্বাচিত হন। ১৯৯৯ সালে ভারতীয় জনতা পার্টির পক্ষ থেকে জয়বন্তি বেন মেহতা এই কেন্দ্র থেকে জয়লাভ করেন।
২০০৪ সালে বিজেপির প্রার্থী পরাজিত হন জাতীয় কংগ্রেসের প্রার্থী মিলিন্দ দেওরার কাছে। তিনি দ্বিতীয়বারের জন্য এই কেন্দ্রে জয়লাভ করেন ২০০৯ সালে। ২০১৪ সালে এই কেন্দ্রটি জাতীয় কংগ্রেসের হাতছাড়া হয়, এই কেন্দ্র থেকে জয়লাভ করেন অরবিন্দ গণপতি সাওয়ান্ত৷ ২০১৯ সালেও ফের তিনি দ্বিতীয়বারের জন্য এই কেন্দ্রে জয়লাভ করেন। অন্যদিকে বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফলের দিকে চোখ রাখলে দেখা যাবে মালাবার হিল এবং কোলাবা কেন্দ্র দুটিতে বিজেপির প্রার্থীরা জয়ী হয়েছিলেন গত মহারাষ্ট্র বিধানসভা নির্বাচনে। ওরলি এবং শিবাদি কেন্দ্রদুটিতে শিবসেনা (উদ্ধব বাবাসাহেব ঠাকরে) পক্ষ থেকে আদিত্য ঠাকরে এবং অজয় চৌধুরী জয়ী হন। বাইতুল্লা কেন্দ্র থেকে ইয়ামিনি যাদব জয়ী হন শিবসেনার পক্ষ থেকে। মুম্বাদেবী কেন্দ্রটিতে আমিন প্যাটেল জাতীয় কংগ্রেসের পক্ষ থেকে বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছিলেন গত নির্বাচনে।
সবমিলিয়ে এই আসন বারবার হাতবদল হয়েছে। মহারাষ্ট্রে কিছুদিন বাদেই বিধানসভা ভোট। তার আগে এটা ড্রেস রিহার্সাল। শিবসেনার কোন ভাগের জোর বেশি, কতটা ক্ষমতাশালী বিজেপি, সেটার একটা পরীক্ষা হবে এখানে। তারমধ্যে যে আসনগুলির ওপর সবচেয়ে বেশি নজর থাকবে, তার মধ্যে অন্যতম হল এই আসন। স্বয়ং আদিত্য ঠাকরে ওয়ারলি থেকে বিধায়ক। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই দুই পক্ষই জিততে চাইবে এই প্রেস্টিজ ফাইট।