উত্তরপ্রদেশ রাজ্যের ৮০টি লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ লোকসভা কেন্দ্র রায়বরেলি। কংগ্রেসের দীর্ঘদিনের শক্তগড় হিসাবে পরিচিত রায়বরেলি থেকে ১৯৬৭ থেকে ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন ইন্দিরা গান্ধী। ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের আগে এক নজরে দেখে নেওয়া যাক রায়বরেলি কেন্দ্রের নির্বাচনী ইতিহাস এবং পরিসংখ্যানে। বাছরাওয়ান, হরচাঁদপুর, রায়বরেলি, সারেনি, ঊনচাহার বিধানসভা কেন্দ্রগুলি নিয়ে রায়বরেলি লোকসভা কেন্দ্রটি গঠিত। ১৯৫২ সাল থেকেই এই লোকসভা কেন্দ্রে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। ২০১৯ সালে জিতেছিলেন সোনিয়া গান্ধী।
তবে এবার আর তিনি প্রার্থী নন। বয়সের ভারে রাজ্যসভা দিয়ে সংসদে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। অনেক বিচার বিবেচনার পর গান্ধী নেহরু পরিবারের এই খাসতালুক থেকে প্রার্থী হয়েছেন রাহুল গান্ধী। ইতিমধ্যেই ওয়েনাড় থেকে তিনি ভোটে লড়েছেন। কিন্তু এবার পঞ্চম দফায় ২০ মে দ্বিতীয় পরীক্ষা রায়বরেলি থেকে। গতবার পাশের আসন আমেঠি থেকে লড়ে হেরে মুখ পুড়েছিল রাহুলের। এবার আর তাই আমেঠি নয়, আসন বদলে অপেক্ষাকৃত সহজ রায়বরেলিতে চলে এসেছেন। বিপক্ষে বিজেপির দীনেশ প্রতাপ সিং ও বিজেপির ঠাকুর প্রসাদ যাদব। দীনেশ গতবারও বিজেপির প্রার্থী ছিলেন, বিপুল ভোটে হেরেছিলেন সোনিয়ার কাছে। তবে একদা কংগ্রেসি দীনেশ বিনা যুদ্ধে হারতে রাজি নন। তাই প্রচারে ঝড় তুলেছেন তিনি। অন্যদিকে রায়বরেলিতে এসে আবেগপূর্ণ বার্তা দিয়েছেন সোনিয়া গান্ধী। কার্যত নিজের ছেলেকে রায়বলেরিতে জিম্মায় সঁপে দিয়েছেন তিনি।
১৯৫২ এবং ১৯৫৭ সালের লোকসভা নির্বাচনের রায়বরেলি কেন্দ্র থেকে জাতীয় কংগ্রেসের পক্ষ থেকে ফিরোজ গান্ধী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এবং জয়ী হন। ১৯৬২ সালের নির্বাচনে বৈজনাথ কুরাইল এই কেন্দ্র থেকে সাংসদ নির্বাচিত হন। ১৯৬৭ এবং ১৯৭১ সালের নির্বাচনে এই কেন্দ্র থেকে ইন্দিরা গান্ধী জয়ী হয়েছিলেন। ১৯৭১ সালে রাজনারায়ণকে পরাজিত করে ইন্দিরা গান্ধী সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন। সেই জনতা দলের রাজনারায়ণের কাছেই হারতে হয় ইন্দিরা গান্ধীকে। প্রধানমন্ত্রী হয়েও হেরে যাওয়ার উদাহরণ ভারতের ইতিহাসে বিশেষ নেই। তবে ১৯৮০ লোকসভা নির্বাচনে ইন্দিরা গান্ধী ফের একবার এই কেন্দ্র থেকে বিপুল ভোটে জয়যুক্ত হন। ১৯৮৪ এবং ১৯৮৯ সালে যথাক্রমে অরুণ নেহেরু এবং শিলা কৈল রায়বরেলি কেন্দ্র থেকে সাংসদ নির্বাচিত হন।
১৯৯৬ এবং ১৯৯৮ সালের নির্বাচনে এই কেন্দ্র থেকে কংগ্রেসকে হারিয়ে ভারতীয় জনতা পার্টির অশোক সিং জয়লাভ করেছিলেন। তবে ১৯৯৯ সালে লোকসভা নির্বাচনে আসনটি ফের জাতীয় কংগ্রেসের দখলে ফেরে। সতীশ শর্মা এই কেন্দ্র থেকে জয়ী হয়েছিলেন সেবার। ২০০৪ সালের পরবর্তী সময়ে এই কেন্দ্রে নিজের শক্ত ঘাঁটি বানিয়েছেন সোনিয়া গান্ধী। ২০১৪ এবং ২০১৯ এর গেরুয়া ঝড়ের মাঝে এই কেন্দ্রটি দখলে রাখেন সোনিয়া গান্ধী। পরবর্তী প্রত্যেকটি নির্বাচনে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ করে জনসমর্থন কমতে থাকে তাঁর, অন্যদিকে ভারতীয় জনতা পার্টির ভোট বৃদ্ধি পায়। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে ৫৬ শতাংশ ভোট পেয়ে এই কেন্দ্র থেকে সোনিয়া গান্ধী জয়ী হন।
রায়বরেলি লোকসভা কেন্দ্রের বিধানসভা কেন্দ্রগুলিতে গত নির্বাচনের ফলাফল এক ঝলকে দেখে নেওয়া যাক। ২০২২ সালের বিধানসভা নির্বাচনে উত্তরপ্রদেশে ভারতীয় জনতা পার্টি ভালো ফলাফল করলেও এই পাঁচটি বিধানসভা কেন্দ্রের চারটি কেন্দ্রেই এসপি জয়ী হয়েছিল। কেবলমাত্র রায়বরেলি বিধানসভা কেন্দ্রে অদিতি সিংহ বিজেপির পক্ষ থেকে জয়ী হন। এই কেন্দ্রটিতে অবিজেপি দলগুলি, যেমন জাতীয় কংগ্রেস এবং এসপির জনসমর্থন আছে বলেই মনে করা হয়। সেই কারণেই রাহুল গান্ধী এই আসন থেকে এবার প্রার্থী। অখিলেশের ভরসায় কী ফের উত্তরপ্রদেশ থেকে সাংসদ হতে পারবেন রাহুল, সেই উত্তর জানা যাবে ৪ জুন।