সন্দেশখালি ঘাটে নৌকা থামে। একে একে লোকজন নামছেন। এটাই সেই বহু চর্চিত সন্দেশখালি। কিছুটা এগিয়েই হিন্দিতে লেখা রেখা পাত্রকে বিপুল ভোটে জয়ী করার আহ্বান। কংক্রিটের সরু রাস্তা। যান বাহন বলতে টোটো। সেই টোটো চালকই প্রশ্ন করলেন ‘কোথায় যাবেন? আমি সব দেখিয়ে দেব। ’
বাস্তবিকই সন্দেশখালির এই হিংসার ঘটনার পরে টোটো চালকরাই এখন ঘুরিয়ে দেখান শাহজাহান বাহিনীর অত্যাচারের নানা চিহ্ন। ঠিক যেমন করে পর্যটনস্থলে ঘুরিয়ে দেখানো হয়।
টোটো যেতে থাকে বিজেপি প্রার্থী রেখা পাত্রের বাড়ির দিকে। একটা জায়গায় গিয়ে টোটো থেমে যায়। এরপর আর যাওয়া যাবে না। সেখান থেকে পায়ে চলা পথ। ইঁট বেরিয়ে কাদায় পিচ্ছিল। বেড়ার দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকতেই…
এই বাড়ির বধূকে ফোন করেছিলেন নরেন্দ্র মোদী। এই বাড়ির বধূ মঞ্চে বসেন প্রধানমন্ত্রীর পাশে। ছিটেবেড়ার দেওয়াল। মাটির উঠোন। কাদা প্যাচপ্যাচ করছে। বাড়ির বেড়ার দেওয়ালের কিছুটা অংশ নেই। দারিদ্রের ছাপ স্পষ্ট। কোনওরকমে দিন গুজরান হয়। নুন আনতে পান্তা ফুরোয় অবস্থা। আর সেই বাড়ির বাসিন্দারাই রুখে দাঁড়িয়েছিলেন সন্দেশখালির অত্যাচারের বিরুদ্ধে। সেই বাড়ি সহ গোটা এলাকার নারীরা রুখে দাঁড়িয়েছিলেন। বলেছিলেন এই অত্য়াচার মানব না। শেখ শাহজাহান, শিবু হাজরাদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে গর্জে উঠেছিলেন তাঁরা। আন্দোলন শুরু হয়েছিল। সেই বাড়ির বধূই এবার বিজেপিতে লড়ার টিকিট পেয়েছেন।
এদিকে একাধিক রাজনৈতিক দলের মনোনয়নের হলফনামা দেখলে চোখ কপালে ওঠে। আর বিজেপি প্রার্থীর বাড়ির এই হতশ্রী অবস্থা!
তবে অবাক হওয়ার এখানেই শেষ নয়। রেখা পাত্রের জা সাগরী পাত্রের সঙ্গে কথা হয়।
লক্ষ্মীর ভাণ্ডার পান?
সাগরী বলেন, আগে পেতাম। এখন কয়েক মাস আর পাই না। আমরা আন্দোলন করেছিলাম বলে দিদি লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের টাকা বন্ধ করে দিয়েছে।
বাড়ির যুবকরা পেটের টানে ভিনরাজ্যে কাজ করেন। কোনওরকমে দিনগুজরান করে এই পরিবার। এখন সামনের দিকে তাকিয়ে থাকা। এই অত্যাচারের অবসান কি হবে?
এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে গোটা সন্দেশখালি। স্থানীয় একাধিক মহিলারা বলেন, আমরা দিদির দলই করতাম। কিন্তু এই অত্যাচারের জন্য আমরা প্রতিবাদের রাস্তায় যেতে বাধ্য় হয়েছিল। পিঠে বানাতে ডাকবে। ফোন করে ডাকবে। অত্যাচার করবে। না মানলেই মিথ্যে মামলা। এসব কতদিন সহ্য করব?
তৃণমূল নেতা অচ্যুতানন্দ নস্কর বলেন, কী হয়েছে বলতে পারব না। তবে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার কারোর বন্ধ করা হয়নি। মিথ্যে বলছেন তিনি।
ফিরে আসার পথে জেটিঘাটে ভেসে আসে সুর, খেলা হবে…