২০০৬ সালের জুলাই মাস। সিঙ্গুরে কৃষকদের থেকে জমি অধিগ্রহণ শুরু করে রাজ্য সরকারের ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন। তখনকার রিপোর্ট অনুযায়ী, কৃষকদের থেকে প্রতি একরে ১৪.৭৫ লাখ থেকে ১৭.৫ লাখ টাকা পর্যন্ত দরে জমি নিচ্ছিল রাজ্য সরকার। গড়ে জমি দেওয়া কৃষকের পকেটে ঢুকেছিল একর প্রতি ১৬ লাখ টাকা করে। তবে ধীরে ধীরে টাটার প্রস্তাবি কারখানার বিরুদ্ধে শুরু হয় আন্দোলন। পরে সেই আন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করে। প্রায় ৭০ শতাংশ তৈরি হয়ে যাওয়া কারকানা ফেলে রেখে টাটারা সিঙ্গুর ত্যাগ করে। ২০১১ সালে সেই আন্দোলনের ওপর ভর করে রাজ্যে 'পরিবর্তন' ঘটান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ২০১৬ সাল থেকে সিঙ্গুরের কৃষকদের জমি ফেরত দেওয়ার কাজও শুরু হয়। (আরও পড়ুন: সিঙ্গুরনামা: ন্যানো বন্ধ হলেও সানন্দে আছে কোকাকোলা-মাইক্রন; সিঙ্গুরে শুধুই হতাশা)
আরও পড়ুন: সিঙ্গুরনামা: 'মানুষের বাড়ি ভেঙে কলকাতায় মেট্রো হয়, আর এখানে হয় আন্দোলন'
রিপোর্ট অনুযায়ী, ‘অনিচ্ছুক’ চাষিদের ৪০০ একর জমি ফেরানোকে কেন্দ্র করেই 'জনপ্রতিরোধ' গড়ে উঠেছিল সিঙ্গুরের বেড়াবেড়ি, গোপালনগর এবং খাসেরভেড়ির মতো এলাকায়। এর মধ্যে বেশ কিছুটা জমি 'ছেড়ে দিতে' রাজি হয়েছিল টাটা গোষ্ঠী এবং রাজ্য সরকার। দাবি করা হয়, সেই জমি ছেড়ে দেওয়া হলে 'সমস্যা' থাকত আর মাত্র ৮০ একরের মতো জমি নিয়ে। এই আবহে বর্তমানে, সিঙ্গুর আন্দোলনের এক যুগ বাদে সেখানকার মানুষের অনেকেরই বক্তব্য, কিছুটা আমরা এগিয়ে এলে, কিছুটা ওরা এগিয়ে এলে এখানেই কারখনা হতে পারত। অনেকেই আবার নিজেদের 'ভুল' বুঝতে পারছেন। তাদের কথায়, আমাদের এখন বয়স বেড়েছে। আমাদেরে ছেলেপুলেরা আর চাষ করতে চায় না। তারা এখন কাজের খোঁজে কলকাতায় চলে যায়। তবে এখন যদি কোনও সংস্থার কারখানা হয়, তাহলে তাতে তাদের আপত্তি থাকবে না।
আরও পড়ুন: সিঙ্গুরনামা: NH2 দিয়ে ছুটবে স্বপ্ন? 'টাটাহীন' সিঙ্গুর তাকিয়ে NHAI'র কাজের দিকে
আরও পড়ুন: সিঙ্গুরনামা: টাটা গিয়েছিল সানন্দে, গুজরাটের সেই জায়গার আজ কী হাল?
তবে এখন যদি নতুন করে কোনও শিল্প এখানে হয়ও, সিঙ্গুরের জমির দাম আর আগের মতো নেই। সময়ের সঙ্গে সব কিছুরই দাম বেড়েছে। আর জমির দাম তো সর্বত্র লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে গত এক, দেড় দশকে। তবে সিঙ্গুরে এখন মোটামুটি কী দাম রয়েছে জমির? ২০১৬ সালে সুপ্রিম কোর্ট রাজ্যকে সিঙ্গুরের জমি ফেরাতে নির্দেশ দেয়। আর এরপরই একলাফে সেই সময় জমির দাম তিনগুণ বেড়ে গিয়েছিল বলে দাবি করা হয়। আধা তৈরি হওয়া কারখানা ভেঙে ফেলার কাজ শুরু হয়। দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে সংলগ্ন সেই জমি চড়া দামে কেনার জন্যে মাঠে নামেন অনেক দালাল। এক এক বিঘা জমির দাম তখন ৯ থেকে ১২ লাখ টাকা পর্যন্ত চড়ে। তবে এ তো হল 'বাজার দর', তাও আবার আজ থেকে ৮ বছর আগের। আর সরকারি রেট অনুযায়ী, গতবছর পর্যন্ত সিঙ্গুরের তালভোমরা মৌজার 'ল্যান্ড ব্যাঙ্কে' থাকা ৬.৩২ একর জমি (কমার্শিয়াল) বা প্রায় ১৯ বিঘা জমির মূল্য ছিল ৪ কোটি ৭৭ লাখ ৭৯ হাজার ২০০ টাকা। এর অর্থ, প্রতি এর জমির দাম ৭৫ লাখ ৬০ হাজার টাকা করে। অবশ্য সেই জমি বিক্রি না হওয়ায় সরকার পরবর্তীতে কিছুটা তার দাম কমিয়েছে। তবে এই যদি সরকারি রেট হয়, তাহলে 'বাজার মূল্য' যে আরও অনেকটাই বেশি হবে, তা বলাই বাহুল্য।