সেই ২০১৯ সাল থেকেই বিজেপির গড় বলে পরিচিত উত্তরবঙ্গ। কিন্তু এবার লোকসভা ভোটের ফলাফল যেন আগের সব হিসেবকে ওলটপালট করে দিচ্ছে। উত্তরবঙ্গে কতটা দাগ কাটতে পারবে তা নিয়ে ইতিমধ্য়েই সংশয় দেখা দিয়েছে বিজেপির অন্দরেও। ৪২ আসনের মধ্যে ৩১টি আসনে এগিয়ে রয়েছে তৃণমূল। ১০টি আসনে এগিয়ে রয়েছে বিজেপি।
এবার বালুরঘাট থেকে দাঁড়িয়েছেন বিজেপি প্রার্থী সুকান্ত মজুমদার। তিনি বিজেপির রাজ্য সভাপতি। কার্যত তাঁর এবার মর্যাদার লড়াই। কিন্তু পিছিয়ে পড়ছেন সুকান্ত মজুমদার। এই আসনে এগিয়ে যাচ্ছেন তৃণমূল প্রার্থী বিপ্লব মিত্র।
অন্যদিকে জলপাইগুড়ি আসনে বিজেপি প্রার্থী জয়ন্ত কুমার রায় এগিয়ে রয়েছেন বলে খবর।
আলিপুরদুয়ারে এগিয়ে রয়েছেন বিজেপির মনোজ টিগ্গা।
এমনকী কোচবিহার আসনের প্রতি গোটা দেশের নজর রয়েছে। এই আসনে দাঁড়িয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিক। তিনি তাঁর আসন ধরে রাখতে পারবেন কি না তা নিয়েও সংশয় দেখা দিয়েছে। মাঝেমধ্যেই পিছিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
তবে দার্জিলিংয়ে এগিয়ে রয়েছেন বিজেপি প্রার্থী রাজু বিস্ত। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই ফলাফল কোথায় গিয়ে দাঁড়ায় সেটাই দেখার।
মালদা দক্ষিণে এগিয়ে কংগ্রেস প্রার্থী ইশা খান চৌধুরী।
বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, মাত্র ২৫ শতাংশ ভোট গণনা করা হয়েছে। এখনও তো পুরো রাউন্ড গণনা করা হয়নি। গতবার তিনটি রাউন্ডে পিছিয়ে ছিলাম আমরা। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের মার্জিন নিয়ে চিন্তাভাবনা করে লাভ নেই। তিনি কোথায় থাকবেন সেটা দেখা যাক। তিনি জেলে থাকবেন নাকি বাইরে থাকবেন সেটা দেখা যাক।
কেন উত্তরবঙ্গে দলের শক্ত ঘাঁটিতেও ফাটল ধরতে শুরু করল?
১) ২০১৯ সালে উত্তরের সংখ্য়াগরিষ্ঠ আসনে বিজেপি জিতলেও এলাকায় দেখা যায়নি সেই বিজেপি এমপিদের।
২) গোটা রাজ্য়ের মতোই উত্তরবঙ্গেও একাধিক ক্ষেত্রে উন্নয়নের সুফল পেয়েছেন সাধারণ মানুষ। লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের প্রভাব সর্বোপরি।
৩) চা বলয়ে চা সুন্দরীর মতো একাধিক প্রকল্প ফ্লপ খেলেও রাজ্য সরকারের তরফে ভোটের আগে চা সুন্দরী এক্সটেনশনের নাম করে নির্দিষ্ট টাকা অ্য়াকাউন্টে দেওয়া হয়েছিল। তার সুফলও পড়েছে ইভিএমে।
৪) গোটা উত্তরবঙ্গ জুড়ে বিজেপির সংগঠন একেবারে নড়বড়ে হয়ে গিয়েছিল।
৫) এলাকায় না থাকা, কেন্দ্রীয় বাহিনীর প্রহরায় থাকা বিজেপি এমপিদের সঙ্গে সাধারণ মানুষের দূরত্ব ক্রমশ বেড়ে গিয়েছে। অন্য়দিকে আপদে বিপদে মানুষের পাশে থেকেছে তৃণমূল।
৬) এবার দার্জিলিংয়ে গোর্খাল্যান্ড ইস্যুর তুলনায় ভূমিপূত্র ইস্যু প্রাধান্য পেয়েছে। সেক্ষেত্রে এবার বিজেপি প্রার্থীর মার্জিন শেষ পর্যন্ত কোথায় যায় সেটাও দেখার।
৭) রাজবংশী ভোট নিয়ে নানা কৌশল, গ্রেটার নেতা অনন্ত রায়কে রাজ্যসভায় পাঠিয়ে মন জয় করার চেষ্টা করলেও শেষ পর্যন্ত সেই সমীকরণেও ফাটল ধরে। অন্যদিকে নিশীথ প্রামাণিকের এলাকায় না থাকা অথচ দ্বন্দ্ব ভুলে সংঘবদ্ধভাবে তৃণমূলের লড়াইয়ের জেরে চাপে পড়তে পারে বিজেপি।