উত্তর কলকাতায় এবার লোকসভা নির্বাচনে জোর লড়াই। ত্রিমুখী লড়াইতে সম্মুখ সমরে তিন বর্ষিয়ান নেতা। একেবারে 'হাম কিসিসে কম নেহি' ব্যাপার যাকে বলে। একদিকে তৃণমূল কংগ্রেসের দীর্ঘদিনের সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন তৃণমূল থেকে বিজেপিতে যোগ দেওয়া তাপস রায়। কংগ্রেসের এখানে প্রার্থী প্রদীপ ভট্টাচার্য। ফলে ভোটে লড়াই এখানে সমানে সমানেই হবে। গতবার এই কেন্দ্রে বিজেপির রাহুল সিনহার থেকে প্রায় ১ লক্ষ ২৭ হাজার ভোট বেশি পেয়ে জিতেছিলেন তিনি। কিন্তু এবার তাঁর সামনে কড়া চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ছেন তাপস রায়, যার বিরুদ্ধে কার্যত যুদ্ধ ঘোষণা করেই তিনি দল ছেড়েছেন। উত্তর কলকাতায় বিজেপির প্রার্থী মুখোমুখি হলেন HT বাংলার। সেখানেই তিনি জানালেন, এবারের লোকসভা ভোটে আদৌ উত্তর কলকাতায় বিজেপি পদ্মফুল ফোটাতে পারবে কিনা।
HT বাংলার তরফে তাপস রায়কে প্রশ্ন করা হয়,
এতদিন তৃণমূলে ছিলেন, এবার বিজেপিতে। মানুষ আদৌ গ্রহণ করছে?
তাপস রায়- এই নির্বাচন আমার নির্বাচন নয়। কারণ এটা ভারত গড়ার নির্বাচন। ভারতকে বিশ্বগুরু করার নির্বাচন। মোদীজির নির্বাচন। এটা রাজ্যের বা পুরসভা তৈরির জন্য নয়। মানুষের আশা আকাঙ্খাকে পূরণ করার নির্বাচন, আর সেখানে আমি মানুষের ভালো সাড়া পাচ্ছি।
এই কেন্দ্রে তো সিপিআইএম আর তৃণমূলই জিতেছে বেশি বার, আপনারা পারবেন?
তাপস রায়- স্বাধীনতার পর থেকে তো কংগ্রেস কেন্দ্রে সরকারে ছিল। বাংলায় ৩৪ বছর সিপিআইএম ছিল, তাঁর আগে পাঁচ বছর কংগ্রেসও ছিল,তাহলে ওদের কি হল? একটা অ্যান্টি এসটাব্লিশমেন্ট হয়। যিনি প্রার্থী তাঁকে দেখা যায় না, কেন্দ্রের বিরুদ্ধে প্রশ্ন করেন না। আর ভোট চাইলেই মানুষ ভোট দেবে?
প্রার্থীর বিরুদ্ধে আপনারা কোন ইস্যুতে ভোট চাইবেন?
তাপস রায়-এখানে দলও দুর্নিতিগ্রস্ত, প্রার্থীও দুর্নীতিগ্রস্ত। এমএলএ জেলে, ভাইস চ্যান্সেলর জেলে, বীরভূমের জেলা সভাপতি জেলে, শিক্ষা দফতরের আধিকারিকরা জেলে। সন্দেশখালি রয়েছে, শাহজাহান রয়েছে, বগটুই রয়েছে, কোনটা নিয়ে বলব? বাংলার আইনশৃঙ্খলা খুব খারাপ জায়গায়। আর যে প্রার্থী এখানে তিনি তো ৫০ বছর আগেও কংগ্রেস আমলে একটা স্ক্যাম হয়েছিল উইটব্র্যান্ড স্ক্যাম, সেখানেও জড়িত ছিল, সকলে তো শুধু রোজ ভ্যালির কথা জানে।
এবার তো বড় পরীক্ষা,কারণ ৭টা কেন্দ্র নিয়ে লড়াই…?
তাপস রায়-৯৯ সালে কংগ্রেসের হয়ে নির্বাচন করেছি, এরপর বহু রথী মহারথীর নির্বাচন করেছি। গত কয়েকবছর ধরে যারা পার্লামেন্টে গেছে তাঁরাও তো এমএলএ থেকেই এমপি হয়েছে। তাই এই কাজটা আমার কাছে এমন কিছু নয়।
আপনার পুরোনো দল বিশ্বাসঘাতকতা করেছে?
তাপস রায়-তৃণমূল দল আমার যোগ্যতা অনুযায়ী আমায় জায়গা দেয়নি, সম্মান দেয়নি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কান ভাঙাত আশে পাশের লোকেরা। সেদিক থেকে ভালোই হয়েছে। বঞ্চনা সহ্য হয়, অপমান সহ্য হয় না। আর কেন আমি চোর চোর শুনতে যাব, আমি তো কোনও দুর্নীতিতে জড়িয়ে নেই।
উত্তর কলকাতায় বাম ভোট কতটা ফ্যাক্টর?
তাপস রায়- আমি বামেদের ভোটও পাবে। তৃণমূলের ওপর যারা বিতশ্রদ্ধ, তাঁদেরও ভোটও পাব। যাদের চোখের জল ফেলেছে তৃণমূল, তাদের ভোট পাব।
আপনি দাবি করেছে যে সুদীপ বাবু নাকি আপনার বাড়িতে ইডি পাঠিয়েছিল?
তাপস রায়-আমায় সৌগত রায় অনেকদিন আগেই বলেছিল, দিল্লিতে দেখা হয়েছিল ওর সঙ্গে সুদীপের। তখন বলেছিল সৌগত রায়কে যে একদিন সুযোগ পাই, তাপসকে দেখাবো। কারণ আমি তার কয়েকদিন আগেই বলেছিলেন যে ও কালিমালিপ্ত, দুর্নীতিগ্রস্ত। ও তাই চেষ্টা করল নিজের একটু পরিচিতি কাজে লাগিয়ে আমার বাড়িতে কেন্দ্রীয় এজেন্সি পাঠাতে। এল তো, কিছু পেল? আমার ৫২ বছরের জীবনে কোনওদিন আমি স্ক্যামের সঙ্গে জড়িত থাকিনি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তো এসেছিলেন তাঁর হয়ে প্রচারে, শুনেছেন আমার নামে কিছু বলেছে ১৩ বছরে। ২ তারিখ, ৪ তারিখ আর ৭ তারিখ ওর বাড়িতে আলোচনা হয়েছিল আমার বাড়িতে এজেন্সি পাঠানো নিয়ে। আমাকে বলেছিল সবাই, বাবুদা আপনি সাবধানে থাকবেন, আপনার বাড়িতে পুলিশ আসবে।
হাইকম্যান্ডকে জানিয়েছিলেন ?
তাপস রায়- আমার দলের এমএলএ এমপিরা সবাই বলেছিল,কিন্তু শেখ শাহজাহানকে নিয়ে বিধানসভায় যিনি এত কিছু বলতে পারেন আমার হয়ে পারেননি। তাপস রায়কে একবার ডেকে প্রশ্ন করতে পারে না যে কি হল? বা আমার মেয়ে, স্ত্রীকে ফোন করতে পারলেন না তিনি। দুটো মহিলানেত্রী পাঠাতে পারলেন না, উনি সবই জানতেন। আর কিছু হই না হই, ওনার সঙ্গে তো এতদিন রাজনীতি করেছি। ওনার সঙ্গে ছাত্রযুব আন্দোলন করেছি, ওনার সমবয়সী। একবার ফোন করতে পারলেন না। ওনার মনে হয়েছে শাহজাহানের জন্য করা উচিত।
আপনার প্রতিদ্বন্দ্বী এটা করেছে জেনেও কেন ব্যবস্থা নিল না দল?
তাপস রায়- মমতাদিকে উনি ভালো বুঝিয়ে রাখতে পারেন। মমতাও বোঝা বয়ে নিয়ে চলা অভ্যস রয়েছে। আশে পাশে সব বিধায়ক, এমপিদের দেখুন সব তো বোঝা। আর উনি বহিরাগত নিয়ে কথা বলেন কীর্তি আজাদ, শত্রুঘ্ন সিহনা, ইউসুফ পাঠান এরা কি ভূমিপুত্র? তৃণমূলে এখন যে যা পারছে, করছে।
আরও পড়ুন-Mamata Banerjee: 'হয় শুধরে নেবে নাহলে…' সোনারপুরের কাউন্সিলরদের একাংশকে সতর্ক করলেন মমতা
কলকাতা উত্তরে ভোটের ব্যবধান গতবার যা ছিল, সেই অনুযায়ী যদি দেখা যায় তাহলে তাপস রায়ের পদ্ম ফোটানো একেবারে অসম্ভব নয়। কারণ গতবারের ব্যবধানের নিরিখে তিনি যদি ৭০ হাজার ভোটও বেশি তুলতে পারেন, সঙ্গে তৃণমূলের কিছু ভোট যদি প্রদীপ ভট্টাচার্য কেটে দেন, তাহলে তাপস রায় জিতে আসতে পারেন। তবে ভুলে গেলে হবে না, এই সিটে দীর্ঘদিন জিতে আসায় হাতের তালুর মতোই কেন্দ্রকে চেনেন সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। ফলে প্রেস্টিজ ফাইটে তিনিও এক ইঞ্চি জমি ছাড়বেন না কাউকেই।