রাজ্যে লোকসভা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ পর্ব যখন মধ্যগগনে তখন তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ করল বিজেপি। বৃহস্পতিবার এক সাংবাদিক বৈঠকে বিজেপি নেতা জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায় দাবি করেন, তৃণমূল সরকারের ১২ বছরের শাসনে রাজ্যে মসজিদের সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ২.৫ গুণ। একই সঙ্গে করদাতাদের টাকায় কেন ইমাম – মোয়াজ্জেমদের ভাতা দেওয়া হচ্ছে সেই প্রশ্ন তোলেন তিনি। এমনকী এই ভাতা দিয়ে কী লাভ হচ্ছে তা সমীক্ষা করে দেখার দাবিও জানান তিনি।
আরও পড়ুন: তৃণমূল সরকারের জমানায় জারি ৫ লক্ষ OBC শংসাপত্র বাতিল বলে ঘোষণা করল হাইকোর্ট
পড়তে থাকুন: আদালতের রায় মানি না, OBC সংরক্ষণ চলছে, চলবে, প্রকাশ্য মঞ্চে ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর
এদিন জগন্নাথবাবু বলেন, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ওবিসি এ শ্রেণিতে ১০ শতাংশ সংরক্ষণ দিয়েছিলেন। আর ওবিসি বি শ্রেণিতে ৭ শতাংশ সংরক্ষণ ছিল সনাতনী ওবিসিদের জন্য। তবে মুসলিমরাও তার সুযোগ পেতেন। কালকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হাইকোর্টের আদেশকে বিজেপির আদেশ বলে দাবি করে বলেন, এই আদেশ তিনি মানেন না। তিনি মুসলিমদের সংরক্ষণ দেবেন। অবাক করার বিষয়, ওবিসি বি শ্রেণিতে সনাতনী ওবিসিদের জন্য যে ৭ শতাংশ সংরক্ষণ ছিল তা নিয়ে তিনি একটি কথাও বললেন না। হাইকোর্টের রায়ে মুসলিমদের সংরক্ষণ বাতিল হয়ে যাওয়ায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ব্যথিত। একই সঙ্গে নির্দ্বিধায় তিনি হিন্দু সন্ন্যাসীদের ওপর আক্রমণ চালাচ্ছেন। ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করার অভিযোগ করলেও আসলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করছেন।’
রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে গোপনে ইমাম – মোয়াজ্জিন ভাতা বাড়ানোর অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, ‘রাজ্য সরকার চুপিসাড়ে ২ মাস আগে থেকে রাজ্যের প্রায় ৭০ হাজার ইমাম – মোয়াজ্জিনের ভাতা বাড়িয়ে দিয়েছে। এই ভাতা বাড়ানোর জন্য বাজেট বরাদ্দ ছিল না। সরকার আদালতে জানিয়েছে, সরকার কিছু দেয় না। ওয়াকফ বোর্ড দেয়। এই সরকার যে ওয়াকফ বোর্ডকে যে অনুদান দেয় তা হঠাৎ করে বাজেট বরাদ্দ না থাকা সত্বেও বাড়িয়ে দিয়েছে। অগাস্টে ইমাম – মোয়াজ্জেনদের সম্মেলন করে মুখ্যমন্ত্রী তাদের ভাতা বাড়ানোর কথা বলেছিলেন। কিন্তু কাউকে কিছু না জানিয়ে ভোটের ঠিক আগে আগে ইমাম – মোয়াজ্জিনদের ভাতা বাড়িয়ে দিয়েছে। এজন্য এবছর রাজ্য সরকারের খরচ হতে চলেছে ২০০ কোটি টাকা। প্রায় ৪০ হাজার ইমাম মাসে ৩ হাজার টাকা ও ২৭ হাজার মোয়াজ্জিন ১,৫০০ টাকা ভাতা পাচ্ছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ২০১৫ সাল থেকে এখনও পর্যন্ত প্রায় ১৪০০ কোটি টাকা ইমাম মোয়াজ্জিনদের ভাতা দিতে খরচ করেছেন।’
সন্ন্যাসীদের আক্রমণ করায় মমতাকে পালটা আক্রমণ করে তিনি বলেন, ‘ভোটের আগে ইমাম – মোয়াজ্জিনদের তিনি ঘুষ দিচ্ছেন, আর হিন্দু সন্ন্যাসীদের জন্য তিনি ফতোয়া জারি করছেন। হিন্দু সন্ন্যাসীদের বিরুদ্ধে রাজনীতির কথা বলার অভিযোগ তুলছেন। আর তিনি ইমাম – মোয়াজ্জিনদের পকেটে টাকা গুঁজে দিয়ে তাদের রাজনীতির ময়দানে নামাচ্ছেন।’
আরও পড়ুন: পিছিয়ে থাকা সম্প্রদায়ের সংরক্ষণ ছিনতাই করে মুসলিমদের দিয়েছেন মমতা: অমিত শাহ
এর পরই বিস্ফোরক দাবি করে জগন্নাথবাবু বলেন, ‘যখন ইমাম ভাতা চালু হয়, তখন ১৬ হাজার ইমাম ভাতা পেতেন। একটি মসজিদে একজনই ইমাম ইমামতি করেন। আজকে মসজিদের সংখ্যা সরকারি হিসাবে ৪০ হাজার। অর্থাৎ ১২ বছরে পশ্চিমবঙ্গে মোট ২৪ হাজার মসজিদ তৈরি হয়েছে। যে রাজ্যে পুলিশ রাম নবমীর মিছিলকে অনুমতি দেয় না, নতুন দুর্গাপুজোর অনুমতি দেয় না সেখানে রাজ্য সরকারের মসজিদ তৈরির অনুমতি দেওয়ার নীতি কী? এই মসজিদগুলি কি সীমান্ত এলাকায় তৈরি হচ্ছে? মুসলিমদের কোন সম্প্রদায় এই মসজিদগুলি তৈরি করছে?’