বিরোধীদের নবগঠিত ইন্ডিয়া জোটের প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী কে হবেন? এই প্রশ্ন ঘুরছে অনেকেরই মনে। এই বিরোধী দলগুলির মধ্যেও রয়েছে কিছুটা রেশারেশি। তবে এই প্রশ্নকে হাতিয়ার করেই বিরোধীদের মধ্যে ফাটল ধরাতে চাইছে বিজেপি। এই আবহে এই প্রশ্ন নিয়ে সতর্ক থাকতে বললেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গতকাল থেকে মুম্বইয়ে শুরু হয়েছে বিরোধীদের ইন্ডিয়া জোটের তৃতীয় বৈঠক। এই আবহে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল কংগ্রেস সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বেশ গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রস্তাবনা রাখেন গতকালকের আলোচনায়। মমতার সাফ কথা, সময় বেশি নেই। তাই সময় নষ্ট না করে এখন থেকেই প্রচারে নেমে পড়া উচিত বিরোধীদের।
এর আগে কলকাতায় দলীয় সভাতেও মমতা আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন যে লোকসভা নির্বাচন হয়ত আগিয়ে আনা হতে পারে। এদিকে এরই মাঝে আগামী ১৮ থেকে ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পাঁচদিনের বিশেষ সংসদ অধিবেশনের ডাক দিয়েছে সরকার পক্ষ। যা নিয়ে জল্পনার অন্ত নেই। বিভিন্ন রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, সম্ভবত 'এক দেশ, এক ভোট' নীতি কার্যকর করতেই এই বিশেষ অধিবেশন ডাকা হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে এখনই ময়দানে ঝাঁপানোর জন্য জোটসঙ্গীদের কাছে আর্জি রাখলেন মমতা। এদিকে মুম্বইয়ে জোটের দু'দিনের বৈঠকের আজ দ্বিতীয় দিন। আজ ইন্ডিয়া জোটের অফিশিয়াল লোগো প্রকাশ করা হতে পারে বলে জানা যাচ্ছে। এদিকে কোন ফর্মুলায় লোকসভা ভোটে জোটের দলগুলি আসন ভাগাভাগি করে লড়াই করবে, তা নিয়েও আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে।
এদিকে মমতার পরামর্শ, সেপ্টেম্বরের মধ্যেই আসন বণ্টন নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হোক। প্রসঙ্গত, বিরোধীদের জোটে রয়েছে কংগ্রেস ও বামেরাও। বাংলায় তারা আবার তৃণমূলের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে। এই আবহে শুক্রবারের বৈঠকের আগেই রাহুল গান্ধীর সঙ্গে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের গোপন বৈঠক হয়। যা ঘিরে জল্পনা তুঙ্গে। বাংলায় তৃণমূলের সঙ্গে কংগ্রেসের সম্পর্কের উন্নতি হতে পারে বলেও মনে করা হচ্ছে। আর এই সবের মাঝে একটি প্রশ্ন বিরোধী জোটকে বারবার বিদ্ধ করছে। তা হল, বিরোধী জোটের প্রধনমন্ত্রী পদপ্রার্থী কে হবেন? স্বভাবতই কংগ্রেস চাইছে রাহুল গান্ধীকে জোটের মুখ করতে। জোটের সবথকে বড় দল হিসেবে কংগ্রেসের সেই দাবি অমূলক নয়। এদিকে আম আদমি পার্টির তরফে ভাসিয়ে দেওয়া হচ্ছে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের নাম। হাওয়ায় ভাসছে মমতার নামও। এই এত নেতার নাম হাওয়া ভাসতে থাকায় কিছুটা অস্বস্তি তো রয়েছে জোটের অন্দরেই। এ যেন লড়াইয়ের মধ্যে পৃথক প্রতিদ্বন্দ্বিতা। তবে আপাতত এই সব ছেড়ে বিজেপিকে হারানোর দিকে মন দেওয়ার আবেদন জানালেন মমতা। পাশাপাশি তৃণমূল নেত্রীর পরামর্শ, জোটের প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নিয়ে জনসমক্ষে কোনও মন্তব্য করার কোনও প্রয়োজনই নেই। তাতে বিরোধী জোটে চিড় ধরানোর সুযোগ পেয়ে যাবে বিজেপি।
উল্লেখ্য, বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার, উপ-মুখ্যমন্ত্রী তেজস্বী যাদব, রাষ্ট্রীয় জনতা দলের সুপ্রিমো লালু প্রসাদ যাদব, জম্মু ও কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ফারুক আবদুল্লাহ-সহ বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এবং অবিজেপি দলের শীর্ষ নেতারা এই বৈঠকে উপস্থিত হয়েছেন। আছেন কংগ্রেস সর্বভারতীয় সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে, সোনিয়া গান্ধী, রাহুল গান্ধী, তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্ট্যালিন, সমাজবাদী পার্টি নেতা অখিলেশ যাদবরাও। এবারের বৈঠকে আরও দু'টি দল সরকারি ভাবে যোগ দিল ইন্ডিয়া জোটে। এই আবহে জোটসঙ্গীর সংখ্যা বেড়ে হল ২৮।