শেয়ার বাজার যে বিজেপির জয়ে বেশি খুশি হবে, সেটা কোনও গোপন খবর নয়। ২০০৪-এ বিজেপির অপ্রত্যাশিত হারের পর ধস নেমেছিল বাজারে। এবারে এখনও পর্যন্ত সব ওপিনিয়ন পোল বলছে যে অনেকটাই এগিয়ে এনডিএ। যদিও বিরোধীরা বসে নেই। ইন্ডিয়া ব্যানারে সব প্রধান বিরোধী দলরা একজোট হয়ে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ-তে কড়া টক্কর দেবে এটাই প্রত্যাশিত। তবে তার কী প্রভাব পড়তে পারে বিএসই-তে। সেই নিয়েই একটি রিপোর্ট তৈরি করেছে মর্গ্যান স্ট্যানলি। সেই রিপোর্টের পূর্বাভাস নিশ্চিত ভাবেই রক্তচাপ বাড়াবে খুচরো বিনিয়োগকারীদের।
ভোটের আগে শেয়ার বাজার ১০ শতাংশ বাড়তে পারে এই আশায় যে বড় জয় পাবে বিজেপি। ভোটের পর ফলাফল যেমন হয় তার ওপর নির্ভর করে সূচক বাড়তে পারে ৫ শতাংশ, আবার ৪০ শতাংশ ধসে যেতে পারে। বর্তমানে সূচক ৬৫ হাজারে আছে। ফলে মে মাস অবধি এটা ৭২ হাজারে পোঁছে যেতে পারে বলে মনে করে ব্রোকারেজ সংস্থাটি। রিপোর্টের নাম, ওয়ান বিলিয়ন ভোটস-উইল দে প্লিজ দ্য মার্কেট। ফলে বোঝাই যাচ্ছে মার্কের মতিগতি বোঝার চেষ্টা করা হয়েছে এখানে। ২০০৪-এ একটি ট্রেডিং সেশনে ১৭ শতাংশ পড়়েছিল সূচক। এখানে ৪০ শতাংশ কমে ৪৩১৫৫ হয়ে যেতে পারে বলে মর্গ্যানের আশঙ্কা। ভোটের আগে সরকার জনমোহিনী বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নিতে পারে বলে সংস্থা মনে করছে। বিজেপি যদি একাই ২৬০ অর্থাৎ সংখ্যাগরিষ্ঠতার খুব কাছে থাকে, তাহলে তিন মাসে সূচক পাঁচ শতাংশ বাড়বে বলে অনুমান। যদি বিজেপি ২৪০ পেয়ে জোটসঙ্গীদের সঙ্গে সরকার গড়ে, তাহলে ৫-৭ শতাংশ বাজার পড়বে। অন্যদিকে বিজেপি যদি ২২৫ পেয়ে সরকার বানায় বা ইন্ডিয়া সরকার বানায়, তাহলে সূচক ২০-২৫ শতাংশ কমবে। তারপর ধীরে ধীরে আবার সরকারের পারফরমেন্সের ওপর ভিত্তি করে সূচক বৃদ্ধি পেতে পারে বলে রিপোর্টে জানানো হয়েছে।
কিন্তু এর থেকেও একটা খারাপ পরিস্থিতি হতে পারে বাজারের নজর থেকে। যদি বিজেপি হারে কিন্তু ইন্ডিয়া জোট ক্ষমতায় আসে যেখানে কংগ্রেস ২০০-র কম আসন পেয়েছে তাহলে বাজারে ধস নামতে পারে। ৩০-৪০ শতাংশ সূচক কমতে পারে যদি এটা লগ্নিকারীরা মনে করেন যে নয়া সরকার দুর্বল, কোনও বড় সিদ্ধান্ত নিতে অক্ষম। মোদ্দা কথা হল বাজারের পছন্দ স্থায়িত্ব, তাই তারা চাইছে বিজেপি আসুক। ইন্ডিয়া এলে কংগ্রেস যদি খুব বেশি আসন না পায়, তাহলে সরকার চালনার ক্ষেত্রে অনেক টালবাহানা হতে পারে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে বিশেষ করে, সেটাই মূলত চিন্তা বাজারের। এরপরে ডিসেম্বরে আছে বেশ কিছু রাজ্যে ভোট। সেখানে বিজেপি ও কংগ্রেস কী করে, সেটা থেকে কিছুটা লোকসভার আন্দাজ পাওয়ার চেষ্টা করবে বাজার। এরপর ইন্ডিয়া জোট কতজায়গায় আসন সমঝোতা করতে পারল, বাংলা সহ কটা রাজ্যে ফ্রেন্ডলি ফাইটের পথে গেল, সবটা বুঝে বাজারের এই সমীকরণ বদলাতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
তবে রিপোর্টে এটাও বলা হয়েছে যে এগুলি কিছুটা হলেও সাময়িক চিন্তা উদ্বায়ী বাজেটের। জোট সরকার হলেই যে আর্থিক বৃদ্ধি ও সমৃদ্ধি আসে না, সেটা আদৌ বলা যায় না। ১৯৯০ সালের পর থেকে ভারতের আর্থিক বৃদ্ধির হার যথেষ্ট ঈর্ষণীয়। সেখানে সবসময় যে এক দলের সরকার ছিল তা নয়। ফলে মোটের ওপর যে দলই ক্ষমতায় থাকুক, দ্য ইন্ডিয়া স্টোরি যে অটুট থাকবে সেটি নিয়ে ভরসা আছে বাজারের।