তুলিকা অধিকারী
এখনও পঞ্জাবে আম আদমি পার্টির (আপ) ঐতিহাসিক জয়ের ঘোর কাটেনি। এটা নজিরবিহীন ফলাফল। দেশের মধ্যে একটা আঞ্চলিক দল দুটি রাজ্যের ক্ষমতায় এল। তাতে যে শুধু পঞ্জাবের রাজনীতির ইতিবৃত্ত পালটে গেল, তা নয়, দেশের রাজনীতিই মোড় ঘুরে গেল।
নেতিবাচক ভোট নয়, ‘দিল্লি মডেলেই’ জয় পঞ্জাবে
পঞ্জাবের প্রচুর মানুষ দিল্লিতে আসা-যাওয়া করেন। তাঁরা নিজের চোখেই দেখতে পারছেন যে দিল্লি এখন পুরোপুরি পালটে গিয়েছে। সরকারি স্কুলের পরিকাঠামো থেকে শুরু করে মহল্লা ক্লিনিক - কেজরিওয়াল স্যারের (অরবিন্দ কেজরিওয়াল) শাসনে ভোল পালটে গিয়েছে দিল্লির। প্রচুর উন্নয়নমূলক কাজ হয়েছে।'বিজনেস ব্লাস্টার' তৈরি করা হচ্ছে। স্কুল পড়ুয়াদের এখন থেকেই প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে যে তারা কীভাবে ব্যবসা বা চাকরির জন্য নিজেদের দক্ষতা আরও বাড়াতে পারবে।
সবথেকে বড় কথা, সরকারি স্কুল এতটাই ভালো হয়ে গিয়েছে যে প্রায় ৩.৫ লাখ পড়ুয়াকে বেসরকারি স্কুল থেকে ছাড়িয়ে নিয়েছেন অভিভাবকরা। নিজেদের ছেলেমেয়েকে ভরতি করেছেন সরকারি স্কুলে। এটা তো নজিরবিহীন। সেটা পঞ্জাবের মানুষ সেটা স্বচক্ষে দেখেছেন। এরকমও যে কোথাও হতে পারে, তা বুঝতে পেরেছেন তাঁরা। একজন ধনী ব্যক্তির ছেলেমেয়ে যে স্কুলে পড়ছে, সেই স্কুলে একজন অটোচালক বা সমাজের আর্থিকভাবে দুর্বল মানুষের ছেলেমেয়েও সেখানে পড়ার সুযোগ পাচ্ছে।
শুধু তাই নয়, সরকারি পরিষেবা একেবারে হাতের মুঠোয় চলে এসেছে। সরকারি কাজের জন্য দিল্লিতে আর আমজনতাকে মাথা ঘামাতে হয় না। কারও কাছে হত্যে দিয়ে পড়ে থাকতে হয় না। একটি নম্বরে শুধু ফোন করবেন, লোক আপনার কাছে চলে আসবে। দিল্লি সরকার মানুষের কাছে পৌঁছে গিয়েছে। মাঝের কোনও লোক নেই। দূর হয়েছে দুর্নীতি। সেইসঙ্গে বিনামূল্যে বিদ্যুৎ দেওয়া হচ্ছে।
কেজরিওয়াল স্যার নিজেই বলেছেন, বিধায়ক বা সাংসদরা যখন ভাতা পেতে পারেন, তখন আমজনতাও পেতে পারেন। অর্থাৎ ‘আম আদমির’ জন্য ভাবছে আপ সরকার। সেটা মানুষ বুঝতে পেরেছেন। তাই তাঁরা পরিবর্তনের পক্ষে ভোট দিয়েছেন। ধরাশায়ী হয়েছে কংগ্রেস। বিজেপির তো দেখাই নেই।
পঞ্জাবে তো দীর্ঘদিন শিরোমণি অকালি দল এবং কংগ্রেস ক্ষমতায় ছিল, সেইসময় ঋণের বোঝা বেড়েছে। সেইসঙ্গে পঞ্জাবে বেড়েছে মাদক মাফিয়াদের দৌরাত্ম্য। অকালি দল এবং কংগ্রেস মিলে মাফিয়াদের দৌরাত্ম্য আরও বাড়িয়ে তুলেছে। মানুষ বুঝতে পেরেছেন, ওদের দিয়ে হবে না। তাঁরা এবার পঞ্জাবে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থানের জন্য ভোট দিয়েছেন। অকালি বা কংগ্রেস বিরোধী ভোট দেননি মানুষ, তাঁরা আপকেই ভোট দিতে বদ্ধপরিকর ছিলেন। 'দিল্লি মডেল' চেয়েছেন পঞ্জাবে। তাই কংগ্রেস, বিজেপি, অকালি - কারও শত আক্রমণেও আপকে টলানো যায়নি।
নজর পশ্চিমবঙ্গে, জোর ‘গ্রাউন্ড ওয়ার্ক’-এ
পশ্চিমবঙ্গে এখন পুরোপুরি ‘গ্রাউন্ড ওয়ার্ক’ করছি আমরা। একেবারে তৃণমূল স্তরে কাজ করছি। রাজ্যের বিভিন্ন শহর, শহরতলি এবং গ্রামে নিয়ে আমরা ক্যানোপি কর্মসূচি চালাচ্ছি। সদস্য সংগ্রহ অভিযানের পাশাপাশি পথচলতি মানুষদের কাছে জানতে চাওয়া হচ্ছে, ‘আপনারা সব পরিষেবা পাচ্ছেন? পশ্চিমবঙ্গ বা কেন্দ্রীয় সরকারের যে প্রকল্পগুলি চলছেে, সেগুলি কি আপনারা পাচ্ছেন?’
তুলিকা অধিকারী
এখনও পঞ্জাবে আম আদমি পার্টির (আপ) ঐতিহাসিক জয়ের ঘোর কাটেনি। এটা নজিরবিহীন ফলাফল। দেশের মধ্যে একটা আঞ্চলিক দল দুটি রাজ্যের ক্ষমতায় এল। তাতে যে শুধু পঞ্জাবের রাজনীতির ইতিবৃত্ত পালটে গেল, তা নয়, দেশের রাজনীতিই মোড় ঘুরে গেল।
নেতিবাচক ভোট নয়, ‘দিল্লি মডেলেই’ জয় পঞ্জাবে
পঞ্জাবের প্রচুর মানুষ দিল্লিতে আসা-যাওয়া করেন। তাঁরা নিজের চোখেই দেখতে পারছেন যে দিল্লি এখন পুরোপুরি পালটে গিয়েছে। সরকারি স্কুলের পরিকাঠামো থেকে শুরু করে মহল্লা ক্লিনিক - কেজরিওয়াল স্যারের (অরবিন্দ কেজরিওয়াল) শাসনে ভোল পালটে গিয়েছে দিল্লির। প্রচুর উন্নয়নমূলক কাজ হয়েছে।'বিজনেস ক্লাস্টার' তৈরি করা হচ্ছে। স্কুল পড়ুয়াদের এখন থেকেই প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে যে তারা কীভাবে ব্যবসা বা চাকরির জন্য নিজেদের দক্ষতা আরও বাড়াতে পারবে।
সবথেকে বড় কথা, সরকারি স্কুল এতটাই ভালো হয়ে গিয়েছে যে প্রায় ৩.৫ লাখ পড়ুয়াকে বেসরকারি স্কুল থেকে ছাড়িয়ে নিয়েছেন অভিভাবকরা। নিজেদের ছেলেমেয়েকে ভরতি করেছেন সরকারি স্কুলে। এটা তো নজিরবিহীন। সেটা পঞ্জাবের মানুষ সেটা স্বচক্ষে দেখেছেন। এরকমও যে কোথাও হতে পারে, তা বুঝতে পেরেছেন তাঁরা। একজন ধনী ব্যক্তির ছেলেমেয়ে যে স্কুলে পড়ছে, সেই স্কুলে একজন অটোচালক বা সমাজের আর্থিকভাবে দুর্বল মানুষের ছেলেমেয়েও সেখানে পড়ার সুযোগ পাচ্ছে।
শুধু তাই নয়, সরকারি পরিষেবা একেবারে হাতের মুঠোয় চলে এসেছে। সরকারি কাজের জন্য দিল্লিতে আর আমজনতাকে মাথা ঘামাতে হয় না। কারও কাছে হত্যে দিয়ে পড়ে থাকতে হয় না। একটি নম্বরে শুধু ফোন করবেন, লোক আপনার কাছে চলে আসবে। দিল্লি সরকার মানুষের কাছে পৌঁছে গিয়েছে। মাঝের কোনও লোক নেই। দূর হয়েছে দুর্নীতি। সেইসঙ্গে বিনামূল্যে বিদ্যুৎ দেওয়া হচ্ছে।
কেজরিওয়াল স্যার নিজেই বলেছেন, বিধায়ক বা সাংসদরা যখন ভাতা পেতে পারেন, তখন আমজনতাও পেতে পারেন। অর্থাৎ ‘আম আদমির’ জন্য ভাবছে আপ সরকার। সেটা মানুষ বুঝতে পেরেছেন। তাই তাঁরা পরিবর্তনের পক্ষে ভোট দিয়েছেন। ধরাশায়ী হয়েছে কংগ্রেস। বিজেপির তো দেখাই নেই।
পঞ্জাবে তো দীর্ঘদিন শিরোমণি অকালি দল এবং কংগ্রেস ক্ষমতায় ছিল, সেইসময় ঋণের বোঝা বেড়েছে। সেইসঙ্গে পঞ্জাবে বেড়েছে মাদক মাফিয়াদের দৌরাত্ম্য। অকালি দল এবং কংগ্রেস মিলে মাফিয়াদের দৌরাত্ম্য আরও বাড়িয়ে তুলেছে। মানুষ বুঝতে পেরেছেন, ওদের দিয়ে হবে না। তাঁরা এবার পঞ্জাবে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থানের জন্য ভোট দিয়েছেন। অকালি বা কংগ্রেস বিরোধী ভোট দেননি মানুষ, তাঁরা আপকেই ভোট দিতে বদ্ধপরিকর ছিলেন। 'দিল্লি মডেল' চেয়েছেন পঞ্জাবে। তাই কংগ্রেস, বিজেপি, অকালি - কারও শত আক্রমণেও আপকে টলানো যায়নি।
নজর পশ্চিমবঙ্গে, জোর ‘গ্রাউন্ড ওয়ার্ক’-এ
পশ্চিমবঙ্গে এখন পুরোপুরি ‘গ্রাউন্ড ওয়ার্ক’ করছি আমরা। একেবারে তৃণমূল স্তরে কাজ করছি। রাজ্যের বিভিন্ন শহর, শহরতলি এবং গ্রামে নিয়ে আমরা ক্যানোপি কর্মসূচি চালাচ্ছি। সদস্য সংগ্রহ অভিযানের পাশাপাশি পথচলতি মানুষদের কাছে জানতে চাওয়া হচ্ছে, ‘আপনারা সব পরিষেবা পাচ্ছেন? পশ্চিমবঙ্গ বা কেন্দ্রীয় সরকারের যে প্রকল্পগুলি চলছেে, সেগুলি কি আপনারা পাচ্ছেন?’|#+|
অনেকেই অভিযোগ করেন যে তাঁরা বিভিন্ন প্রকল্পের সুযোগ-সুবিধা পান না। সেক্ষেত্রে তাঁদের আমরা সাহায্য করি। বীরভূমে যেমন কেউ কেউ ‘কৃষক বন্ধুর’ টাকা পাচ্ছিলেন না। আমরা ডেপুটেশন দেওয়ার পর সমস্যা মিটে গিয়েছে। মানুষ বুঝতে পারছেন যে আমরা শুধু রাজনীতি করি না। আমরা কাজের রাজনীতি করি। সেই বার্তাটাই আমরা সকলকে পৌঁছে দিতে চাই। শুধু সদস্য সংগ্রহ করলাম। আর বিপদের সময় মানুষের পাশে দাঁড়ালাম না - এরকম নীতি নয় আমাদের। সেইসঙ্গে মানুষকে ‘দিল্লি মডেলের’ কথা বোঝাতে চাই। একটা সরকার চাইলে কীভাবে রাজ্যকে আমূল পালটে দিতে পারে, তা মানুষকে বোঝাচ্ছি আমরা।
নজর ২০২৩ সালের পঞ্চায়েত ভোটে
আগামী বছরের পঞ্চায়েত ভোটে লড়াইয়ের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। তবে সব জায়গায় আমরা লড়তে পারব না। কারণ পশ্চিমবঙ্গে প্রচুর পঞ্চায়েত আছে। সেটা একবারেই সম্ভব হবে না। যেখানে যেখানে আমাদের সংগঠন মজবুত হবে, সেখানে সেখানে লড়াই করা হবে। বিষয়টা একেবারে স্পষ্ট, যেখানে যেখানে সংগঠন শক্তিশালী হবে, সেখানে সেখানে ২০২৩ সালে পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত ভোটে আমরা লড়তে চলেছি। তবে একটা কথা বলতে পারি, প্রায় ২,০০০ কিলোমিটার দূরে থেকেও পঞ্জাবের জয় পশ্চিমবঙ্গের আপ কর্মীদের মনোবল বাড়িয়ে দিল। আমাদের কাছে ‘বুস্টার’ হল। যা আমাদের আরও জোরদারভাবে ঝাঁপিয়ে পড়তে সাহায্য করবে।
অরবিন্দ কেজরিওয়াল কি বিরোধী ‘মুখ’?
কেজরি স্যার সবসময় একটা কথা বলেন, ‘আমরা সবসময় প্রশ্ন করি যে কে বিরোধী মুখ হবেন, কে বিজেপিকে হারাবে।’ কিন্তু আমরা ক্ষমতায় এলে কী করব, সেটা একমাত্র আম আদমি পার্টিই বলে থাকে। একমাত্র আমরাই গ্যারান্টি দিয়ে বলি যে এটা করব, এটা দেব - একমাত্র আপের কর্মী-সমর্থকরাই বলতে পারেন। সেটা করেও দেখান। তবে পঞ্জাবের জয়ের পর প্রমাণ হয়ে গেল, এখন দেশের যা অবস্থা, তাতে একমাত্র যোগ্য ব্যক্তি হিসেবে কেজরি স্যার দেশের হাল সামলাতে পারবেন।
(আপের উত্তর ২৪ পরগনার জেলা সভাপতি হলেন তুলিকা অধিকারী, লেখনীর মতামত একান্ত ব্যক্তিগত)।