পুরুলিয়া লোকসভা কেন্দ্রটি পুরুলিয়া জেলার সাতটি বিধানসভা কেন্দ্র নিয়ে গঠিত। এগুলি হল- বলরামপুর, বাঘমুন্ডি, জয়পুর, পুরুলিয়া, মানবাজার (এসটি), কাশীপুর ও পারা (এসসি)। এর মধ্যে মানবাজার বিধানসভা কেন্দ্রটি তপশিলি উপজাতিদের জন্য সংরক্ষিত। পারা বিধানসভা কেন্দ্রটি তপশিলি জাতির প্রার্থীদের জন্য সংরক্ষিত। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের তথ্য অনুযায়ী এই কেন্দ্রের মোট ভোটদাতা ১৪ লক্ষ ৭৫ হাজার ১১২ জন। সর্বশেষ লোকসভা নির্বাচনে কেন্দ্র থেকে সাংসদ নির্বাচিত হন ভারতীয় জনতা পার্টি জ্যোতির্ময় সিংহ মাহাতো। এবারও তিনি প্রার্থী। বিপক্ষে তৃণমূলের রাজ্যের মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো ও কংগ্রেসের বর্ষীয়ান নেতা নেপাল মাহাতো। লড়াইয়ে আছেন ফরওয়ার্ড ব্লকের ধীরেন্দ্র নাথ মাহাতোও। ষষ্ঠ দফায় ২৫ মে এখানে ভোটগ্রহণ করা হবে।
দেশের দ্বিতীয় লোকসভা নির্বাচনে ১৯৫৭ সাল থেকেই এই কেন্দ্রটিতে লোকসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। ১৯৫৭ সালে লোকসভা নির্বাচনে এই কেন্দ্রটি থেকে নির্দল প্রার্থী বিভূতিভূষণ দাশগুপ্ত জয় লাভ করেন। ১৯৬২ সালের লোকসভা নির্বাচনে পুরুলিয়া কেন্দ্রটি থেকে লোক সেবক সংঘের ভজহরি মাহাতো ৭ হাজারের বেশি ভোটে জয়ী হন।
৩৭ বছর টানা জিতেছিল ফরওয়ার্ড ব্লক
১৯৬৭ সালের লোকসভা নির্বাচনে এই কেন্দ্রটি থেকে নির্দল প্রার্থী বি মাহাতো বিজয়ী হন। ১৯৭১ সালের লোকসভায় পুরুলিয়া কেন্দ্র থেকে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের দেবেন্দ্রনাথ মাহাতো জয়ী হন। ১৯৭৭ সালে এই কেন্দ্রটি জাতীয় কংগ্রেসের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয় অল ইন্ডিয়া ফরওয়ার্ড ব্লক। চিত্তরঞ্জন মাহাতো এই কেন্দ্রে ১ লক্ষ ১৬ হাজারের বেশি ভোটে জয়যুক্ত হন৷ ১৯৭৭ থেকে ১৯৯১ সালের লোকসভা নির্বাচন পর্যন্ত এই কেন্দ্রে ফরওয়ার্ড ব্লকের চিত্তরঞ্জন মাহাতো পরপর পাঁচবার সাংসদ পদে নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালে এই কেন্দ্র থেকে ফরওয়ার্ড ব্লকের বীরসিংহ মাহাতো জয়লাভ করেন। ১৯৯৮ সালের নির্বাচনে ফের বীরসিংহ মাহাতো জয়যুক্ত হন ১ লক্ষ ৫৭ হাজারের বেশি ভোটে। ১৯৯৯ সালের নির্বাচনে আরও কুড়ি হাজার বেশি ভোটের মার্জিনে জয়ী হন তিনি।
২০০৪ সালে প্রতিদ্বন্দ্বীকে হারিয়ে বীরসিংহ মাহাতো এক লক্ষের বেশি ভোটে জয়ী হন। ২০০৯-এর লোকসভা নির্বাচনে ফরওয়ার্ড ব্লকের পক্ষ থেকে নরহরি মাহাতো ১৯ হাজারের কিছু বেশি ভোটে জয়ী হন। এই নির্বাচনে ৭২ শতাংশ মানুষ ভোটদানে অংশগ্রহণ করেছিলেন। ২০১৪ সালে পুরুলিয়া লোকসভা কেন্দ্রে তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী ডঃ মৃগাঙ্ক মাহাতো ১ লক্ষ ৫৩ হাজার ৮০০-এর বেশি ভোটে জয়ী হোন। এই নির্বাচনে ৮১ শতাংশ মানুষ ভোটদানে অংশগ্রহণ করেন। ২০১৯ সালের লোকসভায় কেন্দ্রটি হাতছাড়া হয় তৃণমূল কংগ্রেসের। ভারতীয় জনতা পার্টির জ্যোতির্ময় সিংহ মাহাতো ১ লক্ষ ২৪ হাজারের বেশি ভোটে এই কেন্দ্রে জয়যুক্ত হন। এই লোকসভা নির্বাচনে ভোটদানের হার ছিল ৭৭.৬ শতাংশ।
এবারের লড়াইয়ে আঙ্গিক
গত কিছু বছরে কুড়মি আন্দোলন ক্রমশই জোরদার হয়েছে পুরুলিয়ায়। তফসিলিদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার জন্য এই আন্দোলনের পালে আরও হাওয়া দিতে এবার ভোটের ময়দানে আদিবাসী কুড়মি সমাজের প্রার্থী হয়েছেন অজিত মাহাতো। বিজেপির দাবি, তৃণমূল ভোট কাটানোর জন্য দাঁড় করিয়েছে অজিতকে। অন্যদিকে কড়া লড়াই হচ্ছে জ্যোতির্ময় মাহাতো ও শান্তিরাম মাহাতোর মধ্যে। কংগ্রেসের নেপাল মাহাতো ও ফরওয়ার্ড ব্লকের প্রার্থীও ময়দানে আছেন। শেষ অবধি তারা কার ভোট টানবেন, চূড়ান্ত ফলাফল হয়তো তার ওপরেই নির্ভর করবে। অন্যদিকে অজিতের সংখ্যার ওপরেও থাকবে নজর।
২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে এই অঞ্চলের ফলাফল কেমন হয়েছিল, আসুন জেনে নেওয়া যাক। বলরামপুর বিধানসভার কেন্দ্রে ভারতীয় জনতা পার্টির বানেশ্বর মাহাতো বাঘমুন্ডি কেন্দ্রে জয়ী হন। জয়পুর বিধানসভা কেন্দ্রটিতে ভারতীয় জনতা পার্টির নরহরি মাহাতো ১২ হাজার ২০০ ভোটে জয়যুক্ত হন। পুরুলিয়া আসনটিও ভারতীয় জনতা পার্টির দখলে যায়। সুদীপ কুমার মুখার্জি ৭০০০ ভোটে পরাজিত করে তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থীকে। মানবাজার বিধানসভা কেন্দ্রটিতে তৃণমূল কংগ্রেসের সন্ধ্যা রাণী টুডু জয়যুক্ত হন। কাশীপুর এবং পাড়া দুটি বিধানসভাতেই ভারতীয় জনতা পার্টির পক্ষ থেকে যথাক্রমে কমলাকান্ত হাঁসদা এবং চাঁদ বাউরী জয়ী হন। অর্থাৎ লোকসভা এবং বিধানসভা নির্বাচনের নিরিখে এই কেন্দ্রটিতে ভারতীয় জনতা পার্টি, তৃণমূল কংগ্রেসের তুলনায় অনেকটাই এগিয়ে রয়েছে সাম্প্রতিক নির্বাচনগুলিতে। তবে শান্তিরাম মাহাতোকে নামিয়ে ও কুড়মি আন্দোলনের প্রেক্ষিতে কিছুটা হলেও অনিশ্চিত হয়ে উঠেছে বিজেপির এই আসনটি।