২০২৪ লোকসভা নির্বাচনে বাংলার হাই প্রোফাইল কেন্দ্র ব্যারাকপুর। তৃণমূল কংগ্রেসের প্রেস্টিজ ফাইট বলা চলে। গত লোকসভায় এই কেন্দ্রে অর্জুন সিংকে টিকিট দেয়নি তৃণমূল কংগ্রেস, তিনি চলে গেছিলেন দিল্লি। সেখান থেকে বিজেপির টিকিট নিয়ে এসে ব্যারাকপুরে পদ্মফুল ফুুটিয়েছিলেন ভাটপাড়ার প্রাক্তন বিধায়ক। এরপর কিছুদিন বিজেপিতে থাকার পর ফের পুরোনো দলে প্রত্যাবর্তন করেন এই হেভিওয়েট নেতা। আশা ছিল, এবারে নিজের কেন্দ্র থেকেই লোকসভার টিকিট পাবেন তিনি। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন ব্রিগেডের সভা থেকে নাম ঘোষণা করেছিলেন, তখন তিনি শুনতে পান অন্য একজনের নাম, তিনি পার্থ ভৌমিক। এরপর ফের একবার ফুল বদল করে বিজেপিতে অর্জুন। এবারও সেখান থেকেই লড়বেন তিনি। ফলে একেবারে সামনা সামনি টক্কর অর্জুন-পার্থর। যদিও লোকসভা নির্বাচনের আগে HT বাংলায় রাজ্যের মন্ত্রী তথা তিনবারের বিধায়ক পার্থ ভৌমিক বলছেন, গত লোকসভার ভুল আর হবে না এবার।
২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে ব্যারাকপুরের সেই সময়ের সাংসদ দীনেশ ত্রিবেদীকে ১৪ হাজারের কিছু বেশি ভোটে হারিয়ে দিয়েছিলেন অর্জুন সিং। সেই সময় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দীনেশ ত্রিবেদীকে টিকিট দিতে গিয়ে অর্জুনকে ব্রাত্য করলেও, পরে তৃণমূলকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বিজেপিতে চলে যান দীনেশ। পার্থ ভৌমিক অবশ্য অনেক বেশি আস্থাভাজন দিদির। দল পরিবর্তন বা দলের হার, কোনও সম্ভাবনাই দেখছেন না তিনি। হাসতে হাসতে ব্য়ারাকপুরে জোড়াফুল ফোটাবেন, আশায় নৈহাটির বিধায়ক।
HT বাংলাকে একান্ত সাক্ষাৎকারে জানালেন এবারের অভিজ্ঞতার কথা-
প্রশ্ন- সামনে চেনা শত্রু অর্জুন সিং, লড়াই কঠিন হবে?
পার্থ ভৌমিক- মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রচুর পরিমাণ উন্নয়নমূলক প্রকল্প আছে, মানুষের প্রতি সামাজিক দায়িত্ব পালন করেছে তৃণমূল, তাই মানুষের থেকে ভালো সাড়া পাচ্ছি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি মানুষের আস্থার দিক থেকেই এগিয়ে আছে তৃণমূল।
প্রশ্ন- ব্যারাকপুর বারবার উত্তপ্ত হয়েছে ২০১৯-এর পর, এবারও ভোটের পর তাই হবে?
পার্থ ভৌমিক- এখনও পর্যন্ত কোনও গন্ডগোল হয়নি ব্যারাকপুরে। আমি প্ররোচনায় পা দিতে রাজি নই। আমার প্রচুর ব্যানার, পোস্টার ছিঁড়েছে। কিন্তু আমি আমাদের ছেলেদের বলেছি মানুষ শান্তি চায়। আইন আছে, আইনের পথে চলতে হবে। কেউ যেন পাল্টা কিছু উত্তর দিতে গিয়ে, ওদের ফাঁদে পা না দেয়।
প্রশ্ন- ব্যারাকপুরে তাহলে ভোটের পর শান্তি থাকবে বলছেন?
পার্থ ভৌমিক- অর্জুন যতদিন বিজেপিতে ছিল ততদিন শান্তি ছিল। তৃণমূলে আসার পরই বেশি গোলমাল পাকিয়েছে। আবার বিজেপিতে গেছে। মানুষ কিন্তু গুন্ডামি, মস্তানি পছন্দ করে না। ব্যারাকপুরের নাগরিক সমাজ ইতিমধ্যে দুটি পদযাত্রা করেছে, সেখানে স্লোগান ছিল গুন্ডাগিরি নয়,শান্তি চাই।
প্রশ্ন- শাহজাহানের সঙ্গে জমি নিয়ে আপনার নাম জড়ানো হয়েছে…
পার্থ ভৌমিক- ব্যারাকপুরের মানুষ আমার ক্যারেক্টার জানে। কে কোথায় জমি কিনছে ,সেসব খবর অর্জুন সিং রাখে, এসব নিয়ে ওর লেনাদেনা। আমি এসবের মধ্যে কোনওদিনই থাকি না। জানিনা এখন দালালি করছে কিনা।
প্রশ্ন- দেবদূত ঘোষ বলছে বামেরা বিকল্প, বামের ভোট কি ফ্যাক্টর?
পার্থ ভৌমিক- দাবি করতেই পারে, কিন্তু মানুষই বিচার করবে। তবে এটা সিপিআইএমের পরীক্ষা। ভোট ফেরাতে পারলে সিপিআইএম বাঁচবে, কারণ ওদের ঠিক করতে হবে বামের ভোট রামে দেবে, নাকি পার্টি টাকে বাঁচাবে। ওদের তো অস্তিত্ব সঙ্কটে, সেটা বাঁচানোর জন্য ওদের লড়তে হবে।
প্রশ্ন- ভোট মেশিনারি আপনার হাতে আছে? অর্জুন সিং কিন্তু ভোট করাতে জানে…
পার্থ ভৌমিক- গতবার তৃণমূল কংগ্রসের অনেক বিধায়ক দলে থেকেও বিজেপির হয়ে কাজ করেছিল, এবার সেরকম নেই। গতবার বিধানসভায় প্রমাণ হয়ে গেছে মানুষ চাইলে, কেউ কিছু করতে পারে না। আর ভোট মেশিনারিটা আমরাও যথেষ্ট ভালো বুঝি, সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে অর্জুন সিং কোনও সুবিধা করে উঠতে পারবে না।
আরও পড়ুন-অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে তৃণমূল, মুখ্যমন্ত্রীকে কুকথা বলার নালিশ
আত্মবিশ্বাসের দিক থেকে পার্থ ভৌমিক বেশ ভালো জায়গাতেই রয়েছেন। কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না,অর্জুন সিংও সেই সময় থেকেই তৃণমূল করে আসছেন যখন বামেদের রমরমা ছিল। ফলে ভোট করা এবং করানো দুই রপ্ত করা রয়েছে তাঁর। বলে বলে ছেলেকে জিতিয়েছেন, নিজে জিতে এসেছে। তৃণমূল কংগ্রেসের মতোই এটা অর্জুন সিংয়েরও প্রেস্টিজ ফাইট, সেখানে এক ইঞ্চিও জমি ছাড়বে না তিনি। তবে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, বিজপুরের সুবোধ অধিকারী এবং জগদ্দলের বিধায়ক সোমনাথ শ্যামের ভূমিকাই এক্ষেত্রে খেলা ঘুরিয়ে দিতে পারে পার্থ ভৌমিকের। কারণ এই দুই এলাকার কিছু হিন্দিভাষী ভোট যদি কেটে দেওয়া যায়, সেক্ষেত্রে পার্থর বিজয়রথ ব্যারাকপুরে ৪জুন বেরোতেই পারে।