ত্রিপুরা বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারপর্ব প্রায় শেষ মুহূর্তে। ১৪ ফেব্রুয়ারি সেখানে প্রচার শেষ হচ্ছে। ১৬ ফেব্রুয়ারি ভোট। এই মাঝের দু'দিন সন্ত্রাস চালাতে পারে চালতে পারে বিজেপি। তেমনটাই অশঙ্কা করছে তৃণমূল।
ত্রিপুরায় ৬০ টি আসনের মধ্যে ২৮টিতে প্রার্থী দিয়েছে তারা। এই ২৮টি আসনে সাফল্য আনতে ওই সব বিধানসভা এলাকায় জোরদার প্রচার চলছে। শুক্রবার ত্রিপুরার কমলপুরে দলীয় প্রার্থীদের সমর্থনে সভা করেছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এরপর কদমতলায় কুর্তি এলাকায় আরও একটি সভা করেন তিনি। দু'টি সভাতেই মানুষের জমায়েত দেখে নির্বাচনে ভালো ফলের ব্যাপারে আশাবাদী তৃণমূল।
এই মুহূর্তে দলের প্রচারে ত্রিপুরায় রয়েছেন তৃণমূল ছাত্র পরিষদের রাজ্য সম্পাদক সুপ্রিয় চন্দ। তিনি হিন্দুস্থান টাইমস বাংলাকে বলেন, 'অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভায় মানুষের জমায়েতই বলে দেয় মানুষ বিজেপিকে আর চায় না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেদিন পদযাত্রা করেছিলেন, সে দিন পদযাত্রায় যত না আমাদের কর্মী সমর্থক ছিলেন তার চারগুণ মানুষ স্বতস্ফুর্ত ভাবে সেই মিছিলে অংশগ্রহণ করেছিলেন। এর কতটা প্রভাব ভোটে পড়বে তা বলা না গেলেও। সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ বলে দিচ্ছে তাঁরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চান, চান তৃণমূল কংগ্রেসকে।'
তাঁর কথায়, 'কদমতলা কুর্তি, কমলপুর, বক্সনগর, চন্ডীপুর, কৈলাশহরের মতো পার্বত্য এলাকায় মানুষের ব্যাপক জনসমর্থন পাচ্ছে তৃণমূল। সমতলের দু'টি আসনেও তৃণমূলের যথেষ্ট সমর্থন রয়েছে। বিধানসভা নির্বাচনে দারুণ ফল আশা করছি।' নির্বাচনে ইস্যু প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, 'রাস্তাঘাটের অবস্থা বেহাল। শিক্ষক নিয়োগ নিয়েও এখানে সমস্যা রয়েছে। প্রায় ১০,৭২৯ নিয়োগ নিয়ে জটিলতা রয়েছে। স্বাস্থ্য পরিষেবা কার্যত তলানিতে। এলাকায় এলাকায় আয়ুষকেন্দ্র থাকলেও তা তালা মারা থাকে। পর্যটন কেন্দ্রগুলির উন্নয়নে সরকারের নজর নেই। আমার এখানে মডেল বাংলাকে তুলে ধরছি। বাংলা যে ভাবে স্বাস্থ্য-শিক্ষা-পর্যটন শিল্পে উন্নতি করেছে আমরা তাকেই তুলে ধরতে চাইছি।'
ত্রিপুরায় বাম-কংগ্রেস জোট করে নির্বাচনে লড়াই করছে। ৪৬টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে বামেরা, কংগ্রেসের প্রার্থী সংখ্যা ১৩। এই জোটকে 'সুযোগ সন্ধানী' জোট বলে মন্তব্য করেন সুপ্রিয় চন্দ। প্রসঙ্গত, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও ত্রিপুরার সভা থেকে বলেন, 'ত্রিপুরায় একরকম রাজনীতি আর বাংলায় আরেক রকম রাজনীতি। সিপিএমের বন্ধুরা বছরের পর বছর ক্ষমতায় ছিলে। কোন কাজটি করেছ? কংগ্রেসের বন্ধুদের জিজ্ঞেস করি। ওদের মধ্যে দু একজন আছে, চার বছর ক্ষমতায় থাকার জন্য দল পাল্টায়। আবার যেই ভোট আসে তখন আবার দল পাল্টায়। কারণ তাঁদের ক্ষমতায় থাকতে হবে। এই হচ্ছে এদের অবস্থা। আগের বার সিপিএমের কমরেডরা বিজেপি হয়ে গিয়েছিলেন, এবার তারা আবার বলছে লড়ছি।'
ত্রিপুরার বিধানসভা নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর জনজাতি সংগঠন তিপ্রা মোথা। নির্বাচনে ৪২টি আসনে তারা প্রার্থী দিয়েছে। ত্রিপুরায় আদিবাসী ভোট ৩২ শতাংশ। স্বাভাবিক ভাবে 'কিং মেকার'-এর ভূমিকা নিতে পারে প্রদ্যোৎ বিক্রম মাণিক্য দেববর্মনের দল। তৃণমূল-সহ বিরোধী সব দলই তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলছে। ভোটের পর নানা সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে। তবে সুপ্রিয়র কথায়, ‘যে যেভাবেই লডুকরা না বিজেপি রুখে দেওয়াই হল প্রধান কাজ।' পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে 'নো ভোট টু বিজেপি' স্লোগান কার্যকরী হয়েছিল। সেই স্লোগান এখানেও কার্যকরী হোক চাইছেন তাঁরা।
তবে প্রচার শেষের পর শাসকদলের সন্ত্রাসের আশঙ্কা করছে তৃণমূলে। সুপ্রিয়র কথায়, 'আগের নির্বাচনগুলিতে যে ভাবে সন্ত্রাস চালিয়েছে বিজেপি, মনোনয়ন জমা দিতে দেয়নি, বিভিন্ন এলাকায় কার্যত বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় জয়লাভ করেছে, সেই ভাবে সন্ত্রাস চালাতে পারে তারা।' তবু মানুষে আস্থা রেখেই ত্রিপুরায় উল্লেখযোগ্য ফলের আশায় তৃণমূল।