নন্দীগ্রামের ভোট প্রচার থেকেই তিনি হয়ে উঠেছিলেন ঘরের মেয়ে। তাও আবার গ্রামবাংলার। যদিও তিনি কলকাতার মেয়ে। আসলে গ্রামীণ মানুষকে তিনি আপন করে নিয়েছিলেন। শুনেছিলেন মানুষের জীবন যন্ত্রণার কথা। উপলব্ধি করেছিলেন, এই সমস্যার সমাধান করতে ক্ষমতার অলিন্দে যাওয়া প্রয়োজন। তাই নন্দীগ্রাম থেকে সংযুক্ত মোর্চার প্রার্থী হয়েছিলেন তিনি। হ্যাঁ, তিনি মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়। বাংলার ঘরের মেয়ে। যিনি দু’জন হেভিওয়েট প্রার্থীর বিরুদ্ধে একা মাঠে টক্কর দিয়েছেন। সিপিআইএমের পতাকা হাতে গ্রামের মানুষের মুখে কথা বলে হাসি ফুটিয়েছেন। সাহস জুগিয়েছেন। এখন বিধানসভা নির্বাচনের বাকি অংশে তাঁকেই দলের সবাই চাইছেন। এবার তাঁর অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ থেকে একটি চিঠির কথা জানা গিয়েছে। এই চিঠি লিখেছেন আলিপুরদুয়ার জেলার অবসরপ্রাপ্ত বৃদ্ধা শিক্ষিকা শিপ্রা চৌধুরী।
কী লিখেছেন তিনি? চিঠি শুরু করেছেন, মীনাক্ষি,
তোমরা একঝাঁক উজ্জ্বল মুখ। আর আমি অগণিত মানুষের একজন–৮৪ বছরের বৃদ্ধা। এই দীর্ঘ জীবনে চলার পথে বেশ কিছু অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আবছা স্মৃতি, মন্বন্তর, মহামারী, স্বাধীনতার অব্যবহিত পূর্বের রক্তক্ষয়ী দাঙ্গা, দেশভাগ, খণ্ডিত দেশের স্বাধীনতা এবং স্বাধীনতা পরবর্তী বামপন্থীদের ওপর অবর্ণনীয় অত্যাচার, নির্মম নিপীড়ন প্রত্যক্ষ করেছি। সারকথা যেটা–দুর্বলের ওপর অত্যাচার একইভাবে ঘটে চলেছে। শুধুই ক্ষমতা কুক্ষিগত করার উগ্র বাসনা, নিজেদের আখের গোছানোর জন্য মানুষে মানুষে, সম্প্রদায়ে সম্প্রদায়ে বিভেদ সৃষ্টি করা আর মানুষের দৈনন্দিন জীবনের মূল সমস্যা থেকে মুখ ফিরিয়ে থাকা। সত্যি বলছি খুব কষ্ট হয়। নিজের অক্ষমতায় নিজেকেই ধিক্কার দিতে ইচ্ছে করে। মানুষের জন্যে আমারও তো মানুষ হিসেবে কিছু করার ছিল। যদি তোমাদের মতো ঝাঁপিয়ে পড়তে পারতাম। যাক সে কথা।
তারপর তিনি লিখছেন, বড় আশা করে তোমাদের দিকে তাকিয়ে আছি। তোমরা জানো মানুষই শেষ কথা বলে। মানুষের ওপর বিশ্বাস হারানো পাপ। তাই তো দেখি তোমরা যখন পথে নেমেছ পথের দু’ধার থেকে তোমাদের ওপর শুভেচ্ছা, ভালোবাসা, আশীর্বাদের ঢল নেমেছে। দু’টো প্রবল শক্তি যখন পেশিবল আর অসদুপায়ে অর্জিত অগাধ ধন নিয়ে আস্ফালন করছে, স্বভাব ধর্মে যখন দু’টো শক্তির মধ্যে এতটুকুও পার্থক্য নেই, তখন তোমরা যা করছ তার জবাব নেই।
এরপর ওই শিক্ষিকা লিখেছেন, রক্ত অনেক ঝরবে। সহজে কাঙ্খিত ফল হয়তো মিলবে না। কিন্তু শুভ শক্তির জয় হবেই। প্রবীণরা অভিজ্ঞ, প্রাজ্ঞ, বহুদর্শী এবং দূরদর্শী তাঁদের দেখানো পথে তোমাদের নিজস্ব চিন্তাধারা, যুগোপযোগী দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে মানুষের জীবনের সুখ–দুঃখ, ব্যাথা–বেদনার সাথী হয়ে যথাসম্ভব বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের অঙ্গীকার নিয়ে পথ চলো। তোমরা বোধে বুদ্ধিতে দীপ্ত, শানিত ছুরির ফলার মতো। তোমরা স্থিতধী, সংবেদনশীল। জয় তোমাদের হবেই।
তোমাদের জয় হোক। জয় হোক গণতান্ত্রিক চেতনাসম্পন্ন মানুষের।
শিপ্রা চৌধুরী
(প্রাক্তন শিক্ষিকা, আলিপুরদুয়ার গার্লস হাই স্কুল)
প্রধাননগর, শিলিগুড়ি।
৩১.০৩.২০২১