বামফ্রন্ট–কংগ্রেসের সঙ্গে জোট প্রক্রিয়া চলার সময় আইএসএফ–কে মালদহ–মুর্শিদাবাদের একটি আসনও দিতে পারবে না বলে কড়া বার্তা দিয়েছিল কংগ্রেস। এবার ব্রিগেড সমাবেশের মঞ্চ থেকে যেন প্রতিশোধ নিলেন ভাইজান বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ নিজের দলের কর্মী–সমর্থকদের উদ্দেশ্যে বামফ্রন্টের শরিক দলের প্রার্থীদের ভোট দিতে বললেও কংগ্রেসের হয়ে তেমন বার্তা দিলেন না আইএসএফ প্রধান আব্বাস সিদ্দিকি (ভাইজান)। এমনকী কড়া বার্তাও দিলেন কংগ্রেসকে। আর তা ঘিরেই এত বড় মঞ্চে ক্ষণিকের জন্য পরস্পরের মতানৈক্যের ছবি প্রকাশ্যে চলে এল।
এদিন নিজের বক্তব্যের শুরুতেই আব্বাস সিদ্দিকি বলেন, ‘আমার ভালোবাসার মানুষ মহম্মদ সেলিম, বিমান দা এবং বাম শরিক দলের প্রত্যেকটা নেতা–কর্মীকে অভিনন্দন জানাই। আমরা বামফ্রন্টকে একটা তালিকা দিয়েছিলাম। সেটা বিচার–বিবেচনা করে এবং মানুষের ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিয়ে আমাদের দাবিকে তাঁরা মেনে নিয়েছেন। তাই যেখানে যেখানে বামফ্রন্টের শরিক দল প্রার্থী দেবে, আগামী দিনে রক্ত দিয়ে হলেও মাতৃভূমিকে স্বাধীন করব। আগামী দিনে এই বিজেপি সরকার আর বিজেপির বি–টিম তৃণমূল কংগ্রেসকে উৎখাত করব।’
রবিবার বারবেলায় ব্রিগেড সমাবেশের মঞ্চে দাঁড়িয়ে তৃণমূল কংগ্রেস–বিজেপির বিরুদ্ধে নির্বাচনী বার্তা দিতে গিয়ে আব্বাসের এই মন্তব্যেই বোঝা গেল কংগ্রেসকেই তিনি কাঠগড়ায় তুলছেন। কারণ, বামফ্রন্টের সঙ্গে আসনরফা হয়ে গেলেও, কংগ্রেস সেভাবে আব্বাসের দলকে জায়গা ছেড়ে দিতে রাজি নয়। আব্বাস সিদ্দিকির ভাষণে সেই অভিযোগের রেশ পেতেই বক্তব্যের মাঝেই মঞ্চ ছেড়ে চলে যেতে উদ্যত হন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরী। কিন্তু বেগতিক বুঝে তাঁকে বুঝিয়ে তা আটকে দেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু। যা সকলেই মঞ্চের নীচ থেকে পর্যবেক্ষণ করেছেন। সুতরাং ব্রিগেড সমাবেশ ভরে উঠলেও জোটের ফাঁক থেকেই গেল বলে মনে করছেন রাজনৈতিক কুশীলবরা।
এই পরিস্থিতিতে থেমে থাকেননি ভাইজান। তাঁর কথায়, ‘বিমান দা নিজের দলকে বুঝিয়ে আমাদের জন্য ৩০টি আসন ছেড়েছেন। তাই তাঁকে আমরা অনেক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আপনাদের মনে একটা প্রশ্ন আসতেই পারে— আপনি বললেন, যেখানে যেখানে বাম শরিক দল দাঁড়াবে, সেখানে তাঁদের ভোট দেবেন, তা হলে কংগ্রেসের কথা বললেন না কেন? আমি স্পষ্ট করে বলছি, ভাগিদারি করতে এসেছি। অনেক হয়েছে আর নয়, ভাগিদারি চাই। পিছিয়ে পড়া আদিবাসী, দলিত, ওবিসি, মুসলিম—পিছিয়ে পড়া মানুষের হক বুঝে নিতে হবে। এই ভাগিদারিতে এসেছি।’
বিধানসভা নির্বাচনের লড়াই এখন তৃণমূল কংগ্রেস–বিজেপির বিরুদ্ধে। বিজেপির গায়ে আবার হিন্দুত্বের তকমা। ফলে তার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্টের গুরুত্ব অন্যরকম। তাই সম্ভবত বাম–কংগ্রেস জোটে এবার নতুন শরিক আব্বাসের আইএসএফ। কিন্তু বামেদের মতো কংগ্রেসও কি ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্টকে গুরুত্ব দিতে রাজি? এই প্রশ্ন আজ তুলে দিল ব্রিগেড মঞ্চে আব্বাস–অধীরের আচরণ। যা জোটে জট পাকাতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।