মাত্র তিন দফার ভোট শেষ হয়েছে বাংলায়। এখনও বাকি পাঁচ দফার নির্বাচন। ফলাফল জানা যাবে ২ মে। তার আগেই শহরে এসে সাংবাদিক সম্মেলন করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ জানিয়ে দিলেন, এই তিন দফার নির্বাচনে ৬৩টি থেকে ৬৮টি আসনে জয়ী হবে বিজেপি। শুক্রবার তিনি দাবি করেন, ‘মোদীর জয়প্রিয়তাকে ভয় পাচ্ছেন দিদি। ক্ষমতায় আসার এক সপ্তাহের মধ্যে প্রত্যেক কৃষকের অ্যাকাউন্টে ১৮ হাজার টাকা দেওয়া হবে।’
এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গড়ে তাঁর জনসংযোগ কর্মসূচি রয়েছে। তার আগেই দুই দলের মধ্যে তেতে উঠেছে রাজনৈতিক হিংসা। এখানে প্রার্থী হয়েছে বিজেপির পক্ষ থেকে অভিনেতা রুদ্রনীল ঘোষ। আর তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। তিনি পোড়খাওয়া রাজনীতিবিদ। এই প্রসঙ্গে এদিন শাহ বলেন, ‘আমাদের কর্মীদের উপরে লাগাতার হামলা হচ্ছে। গতকাল ভবানীপুর পুলিশ থানায় ছিলেন কর্মীরা। তখনও হামলা হয়েছে। হামলার নিন্দা করে একটাও মন্তব্য করেননি কেউ। মৌনতাই সম্মতির লক্ষণ। রাজনৈতিক কর্মীদের উপরে হামলা হলে সকলে মিলে নিন্দা করে। কিন্তু তৃণমূল কংগ্রেস তা করেনি।’
শুধু তৃণমূল কংগ্রেসকে রাজনৈতিক আক্রমণ করে থেমে থাকেননি তিনি। এদিন প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি শোনা যায় অমিত শাহের মুখ থেকে। তিনি দাবি করে বলেন, ‘ক্ষমতায় এলে প্রত্যেক কৃষককের অ্যাকাউন্টে ১৮ হাজার করে দেওয়া হবে। বিজেপি সরকার ক্ষমতায় এলে প্রত্যেক বাড়িতে কমপক্ষে একজনকে চাকরি দেওয়া হবে। উত্তরবঙ্গে কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলা হবে।’ সুতরাং কৃষকদের মন পেতে চাইছেন শাহ তা তাঁর মন্তব্য থেকে পরিষ্কার। নয়া কৃষি আইন নিয়ে গোটা দেশে আন্দোলন এখনও অব্যাহত। কিছুতেই রফাসূত্রে বেরিয়ে আসছে না। তার মধ্যে বাংলায় এসে কৃষকদের পক্ষে দেওয়া প্রতিশ্রুতি নির্বাচনী বৈতরণী পার করার কৌশল বলে মনে করছেন রাজনৈতিক কুশীলবরা।
কেন্দ্রীয় বাহিনী এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্য নিয়ে ইতিমধ্যেই নোটিশ পাঠিয়েছে নির্বাচন কমিশন। সেখানে এই বিষয় নিয়ে আক্রমণ করলেন অমিত শাহ। তিনি বলেন, ‘কেন্দ্রীয় বাহিনীকে ঘিরে ফেলার নির্দেশ দিচ্ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এমন কথা আমি গোটা রাজনৈতিক জীবনে কখনও শুনিনি। প্রতিবারের মতো রিগিং করে জিততে চাইছেন বলেই এমন কথা বলছেন। তবে এবার নির্বাচনে হিংসা কম হয়েছে। যেটুকু হয়েছে তাও যাতে না হয় সেটা দেখার জন্য নির্বাচন কমিশনকে আবেদন করব। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের নির্দেশে বিরক্ত করা হচ্ছে বলা হচ্ছে। কিন্তু আমি বলে দিই, নির্বাচনের সময় আধা সামরিক বাহিনী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের নিয়ন্ত্রণে থাকে না। নির্বাচন কমিশন নিয়ন্ত্রণ করে।’
এরপরই তিনি শহর কলকাতার মানুষের সমর্থন পেতে একগুচ্ছ পরিকল্পনার কথা বলেন। নিরাপত্তা থেকে উন্নয়ন সবই টেনে এনেছেন নিজের বক্তব্যে। তিনি বলেন, ‘কলকাতা হবে দেশের সাংস্কৃতিক রাজনীতি। শহরের সব গলিতে থাকবে সিসিটিভি ক্যামেরা। তার জেরেই কমবে দুষ্কৃতীদের দৌরাত্ম্য। একটা সময় ছিল যখন কলকাতাকে সিঙ্গাপুরের ডেভেলপমেন্ট মডেল বলা হতো। এই শহর সিটি অব জয় হয়ে থাকবে। কলকাতা সিটি অব ফিউটার হবে। কলকাতার পরিকাঠামোর উন্নতি করা হবে। কলকাতাকে ইউনেস্কোর হেরিটেজ সিটি করব। বাংলার সংস্কৃতির যা হাল দিদি করেছেন! সেখান থেকে নতুন করে সব সাজিয়ে তোলা হবে। নোবেল পুরষ্কারের মতো রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পুরস্কার এবং অস্কারের মতো সত্যজিৎ রায় পুরস্কার চালু হবে।’
এদিন প্রধানমন্ত্রীর বার্তাকে ঘুরিয়ে ভোটের কথা জানান দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্কের কথাও শোনা গেল তাঁর কথায়। তিনি জানান, সংখ্যালঘুদের একজোট হওয়ার আর্জি জানিয়েছেন দিদি। এতে স্পষ্ট উনি সংখ্যালঘু ভোটও হারাচ্ছেন। না হলে এই ধরনের আবেদন করবেন কেন! এই সবের জায়গায় হারের কারণ বিশ্লেষণ করুন, কেন আপনার বিরুদ্ধে বাংলার জনতা? আইনশৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে। এখানে অনুপ্রবেশকারীদের অবাধ প্রবেশ। কলকাতার বাঙালিবাবুরাও চিন্তা করছেন কলকাতার পরিস্থিতি কী হবে! মহিলারা নিরাপদ নন। মহিলাঘটিত অপরাধে ১ থেকে ৫ নম্বরে দাঁড়িয়ে বাংলা। তোলাবাজি সিন্ডিকেট ও দুর্নীতির সীমা পার করে ফেলেছে।
এরপর তিনি সরাসরি বিজেপিকে ভোট দেওয়ার আহ্বান করেন। সেখানে তিনি বলেন, ‘ভারতীয় জনতা পার্টির সরকার গঠনের পর কলকাতা, উত্তরবঙ্গ এবং বাংলার সংস্কৃতির বিকাশের জন্যে রোডম্যাপ রয়েছে আমাদের। সুরক্ষিত বাংলার জন্য বাকি পাঁচ দফায় বিজেপিকে ভোট দিন। সোনার বাংলার নির্মাণের জন্য ভোট দিন বিজেপিকে। অনুপ্রবেশকারী সমস্যার নিরসন করতে পারে আমরাই পারি। আর শরণার্থীদের পুনর্বাসন করব এবং মোদীজির নেতৃত্বে সোনার বাংলার নির্মাণ করব।’
এই রোডম্যাপ বলতে গিয়ে তিনি জানান, ৭০০ কিলোমিটার রাস্তা তৈরি করে উত্তরবঙ্গের সঙ্গে কলকাতাকে জুড়ব। শিলিগুড়িতে তৈরি হবে মেট্রো রেল। চা–পার্ক তৈরি করা হবে। সেখানে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ হবে গবেষণার জন্য। দশম শ্রেণি পর্যন্ত রাজবংশী ভাষায় পড়াশুনোর ব্যবস্থা করা হবে। আদিবাসীদের পাট্টা দেওয়া হবে। উত্তরবঙ্গকে অবহেলা করা হয়েছে। কোনও উন্নয়ন হয়নি। রাজবংশী, গোর্খাদের কথা ভাবেননি। চা ও তামাক চাষের জন্য কিছু করেননি। উত্তরবঙ্গ বিকাশ বোর্ড স্থাপন করা হবে। নারায়ণী সেনা ব্যাটলিয়ন হবে সিআরপিএফে। বাংলার সব প্রান্তের মানুষ বিজেপির সঙ্গে।