কার্যত কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ চলত দু’জনের মধ্যে। নয়া দলে যোগ দিয়ে সেই সমীকরণই বদলে গেল। একদা সাপে—নেউলে সম্পর্কের দুই নেতা হয়ে গেলেন 'দাদা—ভাই'। রবিবার নরেন্দ্র মোদীর ব্রিগেডের সভামঞ্চে অর্জুনের ‘বড় ভাই’ হয়ে গেলেন দীনেশ ত্রিবেদী। অতীতের যাবতীয় তিক্ততা ভুলে ব্রিগেডের সভামঞ্চ থেকে সদ্য দলে যোগ দেওয়া দীনেশ ত্রিবেদীকে ‘বড় ভাই’ বলে সম্বোধন করলেন বিজেপির ব্যারাকপুরের সাংসদ অর্জুন সিং।
২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে ব্যারাকপুর থেকে তৃণমূলের টিকিটে লড়তে চেয়েছিলেন অর্জুন৷ কিন্তু মমতা বন্দোপাধ্যায় আস্থা রাখেন দীনেশের উপরেই৷ তখন থেকেই দু্’জনের মধ্যে ব্যারাকপুর আসন নিয়ে বিবাদ চরমে ওঠে। এরপরই দল বদলে ফেলেন অর্জুন। যোগ দেন গেরুয়া শিবিরে৷ বিজেপির টিকিট হাতে পেতেই ঝাঁপিয়ে পড়েন ভোটের ময়দানে৷ হাতেনাতে ফলও মেলে। ভোটের ফল যায় তাঁর দিকেই৷ কারণ ব্যারাকপুরের অলিগলি চেনা অর্জুনের সঙ্গে পেরে ওঠেননি দীনেশ।ব্যারাকপুরের মানু্ষ শেষ পর্যন্ত ভরসা রাখেন অর্জুনের উপরেই। দু’বারের সাংসদকে হারিয়ে সেখানে পদ্ম ফুটিয়ে তোলেন অর্জুন৷এর আগে, অবশ্য দীনেশ ত্রিবেদী ও অর্জুন সিং একসঙ্গেই তৃণমূলের ছাতার তলায় ছিলেন।
২০০৯ সাল রাজ্যের পালাবদল তখনও হয়নি। সে বছরই ব্যারাকপুর লোকসভা আসনে তৃণমূলের টিকিটে জেতেন দীনেশ। ব্যারাকপুরের মানুষের অভিযোগ ছিল, দীনেশ এলাকার সাংসদ হলেও তাঁকে কোনওদিনও সেখানে দেখা যায়নি। সেই সময় তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় দ্বিতীয় ইউপিএ সরকারের রেলমন্ত্রী ছিলেন৷ ২০১১ সালে বাম জামানার পতন ঘটিয়ে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী পদে আসীন হন তিনি। তারপর রেলের দ্বায়িত্ব তাঁর আস্থাভাজন দীনেশের উপরেই ছাড়েন মমতা৷ কিন্তু রেলমন্ত্রী থাকাকালীন সেই দলনেত্রীর সঙ্গেই বিবাদে জড়ান দীনেশ৷ রেলের ভাড়া বাড়ানো নিয়ে দু’জনের মধ্যে মতবিরোধ তৈরি হয়৷ যার জেরে রেলমন্ত্রিত্ব হারাতে হয় দীনেশকে৷ তারপরই সেই দায়িত্ব বর্তায় মমতার সেই সময়কার আর এক আস্থাভাজন মুকুল রায়ের উপর৷ তবে এতকিছুর পরও তৃণমূলের প্রতি আনুগত্য ভোলেননি দীনেশ৷ যার ফলও মেলে হাতেনাতে৷ ২০০৯ সালের পর ২০১৪ সালেও ব্যারাকপুর থেকে দলের টিকিট পান দীনেশ৷ জিতে দ্বিতীয়বারের জন্য সাংসদ হন তিনি।এরপর আসে উনিশের লোকসভা ভোট৷ সেখান থেকেই অর্জুন—দীনেশের সম্পর্কে চিড় ধরে।
এই প্রতিকূল পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়েও দীনেশকে মনোনীত সদস্য হিসাবে রাজ্যসভায় সাংসদ করে পাঠান মমতা বন্দোপাধ্যায়৷ তবে তারপরও সমস্যা মেটেনি, তা সম্প্রতি স্পষ্ট হয়। সবাইকে অবাক করে রাজ্যসভায় দাঁড়িয়েই নিজের সাংসদ পদ থেকে ইস্তফা দেন দীনেশ৷এরপরই বিজেপিতে যোগদান করেন তিনি৷
কৌতূহল সৃষ্টি হয় এখান থেকেই। এই নয়া দলে যোগ দেওয়ার পর একদা প্রতিপক্ষ দুই নেতার ব্যারাকপুর আসনের সেই তিক্ততা কোন দিকে গড়ায়, সেদিকেই নজর ছিল প্রত্যেকের। যার জবাব রবিবার নিজেই দিয়ে দিলেন অর্জুন৷ ব্রিগেডের মঞ্চে তিনি বুঝিয়ে দিলেন, পুরনো সব বিবাদ এখন ইতিহাসের পাতায় নাম লিখিয়েছে৷ দীনেশকে ‘বড় ভাই’ বলে সম্বোধন করেন অর্জুন৷ এমনকী, সভামঞ্চে ভাষণ শেষে অর্জুন নিজেই বলেন, ‘এখন থেকে তাঁরা দু’জনে একসঙ্গেই রয়েছেন।’এদিন অর্জুন সিংয়ের এই আচরণ তিক্ত সম্পর্কের কাটা ‘ঘা’—এ মলম লাগালেন বলেই মনে করছে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।