হিন্দু ভোট নিজেদের ঝুলিতে পুরতে করতে আরও একটি রাজনৈতিক দলের উৎপত্তি হল। সবথেকে বড় বিষয় হল, এই দল বিজেপির খেলা বিগড়ে দিতে পারে। রবিবার বাংলার হিন্দু সংগঠন হিন্দু সংহতি নিজেদের দলের ঘোষণা করেছে। এই সংগঠন নিজেদের রাজনৈতিক দলের নাম ‘জন সংহতি’ রেখেছে। হিন্দু সংহতির নজর রাজ্যের হিন্দু ভোটারদের উপর। দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তাঁরা রাজ্যে ১৭০টি আসনে প্রতিদ্বন্দিতা করতে পারে। আর সেদিকে তাকিয়েই এই রাজনৈতিক দলের উদ্ভব বলে মনে করা হচ্ছে। ২০১৭ সালে বাংলার এক অপ্রীতিকর ঘটনার হাত ধরে তপন ঘোষ ও হিন্দু সংহতি মঞ্চ খবরে এসেছিল। কট্টর দক্ষিণপন্থী এই সংগঠন এককালে ছিল স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। এখন একুশের ভোটে তারাই রাজনৈতিক দল হিসাবে নির্বাচনী যুদ্ধে নামছে। সুতরাং বাংলার নির্বাচনে যেমন আরও একটি দল নাম লেখাল, তেমনই রাজনৈতিক সমীকরণ পালটে গেল বলে মনে করছেন রাজনৈতিক কুশীলবরা।
গত ১৪ ফেব্রুয়ারি হিন্দু সংহতি নিজেদের প্রতিষ্ঠা দিবস পালন করে। আর সেদিনই তারা রাজ্যের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার কথাও ঘোষণা করে। ২০০৮ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি এই সংগঠন হিন্দু নেতা তপন ঘোষের হাত ধরে অস্তিত্বে এসেছিল। তপন ঘোষ রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের প্রাক্তন প্রচারক ছিলেন। আর গত বছর তিনি করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রয়াত হন। ২০১৭ সালে বসিরহাট দাঙ্গার সময় তপন ঘোষের নাম সংবাদে চলে আসে। কারণ তখন সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও পোস্টকে ঘিরে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে জেলার রাজনৈতিক বাতাবরণ। এমনকী একজন মারাও গিয়েছিল।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের নির্বাচনে হিন্দু সংহতি বিজেপিকে সমর্থন করেছিল। কিন্তু বিধানসভা নির্বাচন আসতেই এই সংগঠন হাওয়া মোরগের মতো নিজেদের দিক বদলে নেয়। আর এখন তাঁরা বিজেপির হিন্দু ভোট ব্যাঙ্কে থাবা বসানোর জন্য তেড়েফুঁড়ে লেগেছে। হিন্দু সংহতি মঞ্চ প্রতিষ্ঠা হয় ২০০৮ সালে। ধীরে ধীরে বাংলার বুকে এই কট্টর হিন্দুত্ববাদী সংগঠন নিজের শাখা খোলে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে। এখন বিধানসভা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে সব অঙ্ক ঘেঁটে দিতে চাইছে বলে মনে করা হচ্ছে।
এই বিষয়ে হিন্দু সংহতির প্রধান দেবতনু ভট্টাচার্য বলেন, ‘হিন্দু সংহতি একটি স্বাধীন সংগঠন হিসাবে কাজ করে চলেছে। আর জন সংহতি একটি রাজনৈতিক দল হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেছে। আমরা এই বিধানসভা নির্বাচনে উত্তরবঙ্গে ৪০টি আসন এবং দক্ষিণবঙ্গে ১৩০টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করব। এখনও আমাদের অন্য কোনও দলের সঙ্গে জোট করার কোনও পরিকল্পনা নেই। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে আমরা বিজেপিকে সমর্থন করেছিলাম। কিন্তু হিন্দুরা এখন বিজেপির উপর বিশ্বাস রাখতে পারছেন না। বিজেপি ক্ষমতায় এলে বাংলার মানুষকে তার দাম দিতে হবে।’
রাজ্যে এখন মতুয়া ভোট পাওয়ার জন্য বারবার আসতে দেখা গিয়েছে। গুরুচাঁদ ঠাকুরের মূর্তি বসাতে দেখা গিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসকে। সুতরাং তারাও মতুয়া ভোট পেতে চায়। এই রাজ্যে ২০০টির বেশি আসন পাবে বিজেপি বলে দাবি করেছেন অমিত শাহ। সেখানে পালটা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ২২১টি আসন নিয়ে ক্ষমতায় ফিরবে তৃণমূল কংগ্রেস। সুতরাং ভোটব্যাঙ্ক এখানে একটা ফ্যাক্টর। এই বিষয়ে দেবতনু ভট্টাচার্য বলেন, ‘বিজেপি নাগরিকত্ব আইন আর এনআরসি নিয়ে মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। অসম আর ত্রিপুরার অনেক হিন্দু সংগঠনই আমাদের সম্পর্কে আছে। অসমের ডিটেনশন ক্যাম্পে হিন্দুরা মারা যাচ্ছেন। বাংলার মতুয়া সম্প্রদায়কে ভোট পাওয়ার জন্য ব্যবহার করছে বিজেপি।’
এই জন সংহতি সম্পর্কে তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ সৌগত রায় বলেন, ‘হিন্দু সংহতি কোনও রাজনৈতিক কাজ করেনি। সুতরাং নির্বাচনে কোনও প্রভাব পড়বে না। এটা একমাত্র ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতিকে ক্ষতি করতে পারে।’ বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘গণতান্ত্রিক কাঠামোয় যে কোনও রাজনৈতিক দল অংশ নিতে পারে। কিন্তু এই নির্বাচনে শুধুমাত্র বিজেপি–তৃণমূল কংগ্রেসের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে।’