শুধু হিন্দু ভোটের উপর নয়, মুসলিম ভোটেও থাবা বসাতে মরিয়া বিজেপি। এবার বিজেপি-বিরোধী মুসলিম ভোট টানতে তৃণমূল কংগ্রেসের পাশাপাশি বামেদের সঙ্গে জোট করে ভোটের ময়দানে নেমে পড়েছে আব্বাস সিদ্দিকির দল। এই পরিস্থিতিতে মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায় নিজের ভোট টানতে মুসলিম প্রতিনিধিকেই দাঁড় করিয়েছে গেরুয়া শিবির।
মুর্শিদাবাদে মোট জনসংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশই মুসলিম। সেই মুর্শিদাবাদে এবার পাঁচজন মুসলিম প্রার্থীকে দাঁড় করিয়েছে বিজেপি। এই মুর্শিদাবাদ এমন একটি জেলা যেখানে কংগ্রেসের সংগঠন যথেষ্ট শক্তিশালী। পাশাপাশি তৃণমূলও এখানে প্রার্থী দাঁড় করিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ভোট টানতে পাঁচটি কেন্দ্রে বিজেপির মুসলিম প্রার্থী দাঁড় করানো রাজনৈতিক দিক থেকে তাৎপর্যপূর্ণ। পাশাপাশি আরও মুসলিম অধ্যুষিত জেলা মালদহেও দুটি কেন্দ্রে মুসলিম প্রার্থী দিয়েছে বিজেপি। সেই সঙ্গে উত্তর দিনাজপুরের দুটি কেন্দ্রে মুসলিম প্রার্থী দিয়েছে গেরুয়া শিবির।
যে ন'জনকে মুসলিম প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করানো হয়েছে, তাঁদের মধ্যে মাফুজা খাতুনের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। বাম ঘরানার রাজনীতি থেকে উঠে আসা মাফুজা এবার বিজেপির সাগরদিঘি কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী। কংগ্রেস ও তৃণমূলকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে মাফুজা বলেন, ‘কে বলেছেন য়ে বিজেপি মুসলিমদের সঙ্গে কাজ করতে পারবে না। বিরোধীরা তো ওসব বলে নিজেদের ভোটব্যাঙ্ক বাড়ানোর জন্য।এ ই জেলায় অনেক পরিযায়ী শ্রমিকরা থাকেন। আমি তাঁদের জন্য কাজ করতে চাই। তাঁদের উন্নতি করতে চাই। তৃণমূল পারেনি। তৃণমূল নেতা-কর্মীরা নিজেদের ফায়দা তুলতে গরিব বিড়ি শ্রমিকদের কাজে লাগিয়েছে। তাঁদের কথা ভাবেনি। বিজেপিই পারবে তাঁদের উন্নতি করতে।’
ন'জনের মধ্যে আরও একজন হলেন গোলাম সারওয়ার। তিনি উত্তর দিনাজপুর কেন্দ্রে গোয়ালপোখর কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী। তাঁর বিরুদ্ধে এবার তৃণমূলের হয়ে লড়ছেন তাঁরই ভাই গোলাম রাব্বানি। পারিবারিক বিবাদ এখন ভোটের ময়দানে। ভোটে দাঁড়ানো নিয়ে গোয়ালপোখরের বিজেপি প্রার্থী বলেন, ‘অন্য রাজ্যে গণপিটুনির ঘটনা হয় ঠিকই। কিন্তু এই রাজ্যেও হয়। কিন্তু এই রাজ্যের ঘটনা জানতে পারা যায় না।স্থানীয় গুণ্ডাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতেই আমার এই লড়াই্।’ উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত ভোটের সময়ে গোলাম সারওয়ারকে জেল খাটতে হয়েছিল। তাঁর এই জেল খাটার পিছনে গোলাম রব্বানির হাত ছিল বলেই অভিযোগ।
ভগবানগোলা থেকে বিজেপি প্রার্থী করেছে মেহবুব আলমকে। মেহবুব ১৯৯৮ সালে কাজ করতে জামনগর গিয়েছিলেন। গুজরাতে কাজ করতে যাওয়ার অভিজ্ঞতাকে পাথেয় করে মেহবুব বলেন, 'সবাই বলে বিজেপি নাকি গোমাংস খাওয়া বন্ধ করে দেবে। কিন্তু গোয়ায় কি গোমাংস বন্ধ হয়ে গিয়েছে? সবাই বলছে, মুসলিমদের নাকি বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেবে। আমরা তো এই দেশেরই নাগরিক। ভয়ের কিছু নেই তো।'
বিজেপির মুসলিম প্রার্থী দাঁড় করানোর পিছনে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবদুল মাটিন জানান, বিজেপি জনবিন্যাসের কথা ভেবেই মুসলিম প্রার্থী দাঁড় করিয়েছে। কারণ, বিজেপি জানে সেখানে মেরুকরণের রাজনীতি হবে না। এই সব কেন্দ্রে বুথ কর্মী থেকে শুরু করে তৃণমূল স্তরের কর্মীরা সবাই মুসলিম।