সবার জন্য আর দরজা খোলা রাখতে চাইছে না বিজেপি। এবার বিধানসভা নির্বাচনের আগে দরজা বন্ধ করে শুদ্ধিকরণের রাস্তায় হাঁটতে চলেছে গেরুয়া শিবির বলে খবর।
ভোট শেষ না হওয়া পর্যন্ত অন্য দল থেকে আর কাউকে দলে নেওয়া হবে না বলেই ঘোষণা দলের। কৈলাস বিজয়বর্গীয়ই তা স্পষ্ট করেছেন। দল ও সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে তৃণমূল কংগ্রেস থেকে বিজেপিতে যোগদান, ‘মানুষের জন্য কাজ করতে চাওয়ার তাগিদ’ প্রবণতা ক্রমশ বাড়ছিল। এই ফর্মুলা মেনেই গত কয়েক মাস ধরে তৃণমূল কংগ্রেস থেকে বিজেপিতে যোগদান করেছেন বিধায়ক, মন্ত্রী, সাংসদ থেকে শুরু করে ছোট–বড় নেতা।
এই পরিস্থিতিতে 'দলবদলু'-দের অবাধ প্রবেশে অবশেষে রাশ টানল বিজেপি। তৃণমূল কংগ্রেস থেকে আসা নেতা বা জনপ্রতিনিধিদের গেরুয়াকরণে আপাতত রাশ টানলেন স্বয়ং অমিত শাহ। ইতিমধ্যেই আদি–নব্যের লড়াইয়ে বেসামাল বঙ্গ–বিজেপি। নেপথ্যে কারণ একটাই—দলবদল। তাই পার্টিকে ‘তৃণমূলের বি–টিম’ হওয়া থেকে আটকাতে ‘দরজা বন্ধ’ করার সিদ্ধান্তই নিল কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।
এই বিষয়ে কৈলাস বিজয়বর্গীয় সাফ বলেন, ‘নির্বাচনের আগে নতুন করে বিজেপিতে যোগদান আমরা বন্ধ রাখছি। আপাতত আর কাউকে যোগদান করানো হবে না।’ যাঁরা ইতিমধ্যেই বিজেপিতে গিয়েছেন, তাদের তালিকাটা বেশ লম্বা। শুভেন্দু অধিকারী, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়, বৈশালী ডালমিয়া, প্রবীর ঘোষাল, রথীন চক্রবর্তী, বনশ্রী মাইতি, বিশ্বজিত্ কুণ্ডু, সৈকত পাঁজা, দিপালী বিশ্বাস, সুকরা মুণ্ডা, শীলভদ্র দত্ত–সহ আরও অনেকেই।
রবিবার ডুমুরজলা স্টেডিয়ামে যোগদান মেলার পর অনির্দিষ্টকালের জন্য দলবদল পর্বে ছেদ পড়তে চলেছে বলে স্বীকার করে নিয়েছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক কৈলাস বিজয়বর্গীয়। তাঁর স্পষ্ট বার্তা, ‘বিজেপিকে কোনওভাবেই তৃণমূলের বি–টিম হতে দেব না। তাই আপাতত বিজেপির দরজা বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে।’ জাতীয় বিজেপির পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত এই নেতা আরও বলেন, ‘আমাদের কাছে ৪০ জনের বেশি বিধায়কের আবেদন রয়েছে। প্রত্যেকের সম্পর্কে এলাকা ধরে ধরে সমীক্ষা করা হবে। কারও বিরুদ্ধে দুর্নীতি, বালি–কয়লা–গরু কেলেঙ্কারির অভিযোগ থাকলে দলে নেওয়া হবে না’।
এভাবে লকগেট খুলে দেওয়াটা বরাবরই সংঘের না পসন্দ। সূত্রের খবর, জানুয়ারি মাসেই আরএসএসের পক্ষ থেকে বিজেপিকে জানানো হয়। দলের নীতি–আদর্শের সঙ্গে পরিচয় না করিয়ে, স্রোতের মতো লোক নিলে তার দাম চোকাতে হবে। এসব বন্ধ করতে হবে। উল্লেখ্য, জেলাস্তরে ‘দলবদলু’-দের নিয়ে অসন্তোষ ক্রমেই চরম আকার নিচ্ছে। পূর্ব বর্ধমানের পার্টি অফিস জ্বালানোর ঘটনা গেরুয়া শিবিরে আদি–নব্যের দ্বন্দ্বকে বেআব্রু করে দিয়েছিল। তারপর সোনারপুরে রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের সামনেই দুই গোষ্ঠীর হাতাহাতি পরিস্থিতি আরও ঘোরালো করেছে।
এই পরিস্থিতি সামলাতেই এমন সিদ্ধান্ত। রাজনৈতিক মহলের মতে, বেনো জল আটকাতে গেট বন্ধ করতেই হত। কারণ ভোটের মুখে নতুনদের এনে সংগঠন মজবুত করা সম্ভব নয় বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা। ২০১৬ সালে মাত্র তিনটি আসনে জয়লাভ করেছিল বিজেপি। যার মধ্যে ছিলেন খড়্গপুর থেকে জিতে আসা দিলীপ ঘোষও। ২০১৯ সালে তিনি বিধায়ক পদে ইস্তফা দিয়ে লোকসভা ভোটে মেদিনীপুর থেকে জয়ী হন। ওই বছরই বিধানসভা উপনির্বাচনে আরও চারটি আসন জেতে বিজেপি। মোট বিধায়ক সংখ্যা হয় ৬। তারপর থেকে এ পর্যন্ত মোট ২৪ জন বিধায়ক বিভিন্ন দল থেকে বিজেপিতে যোগদান করেছেন। কিন্তু আসন্ন ভোটে তাঁদের কতজন টিকিট পাবেন? উঠছে প্রশ্ন।