তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী তালিকা প্রকাশের পর প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, বারাসত থেকে চিরঞ্জিত চক্রবর্তীকে প্রার্থী করা হলেও কেন দেবশ্রী রায়কে প্রার্থী করল না দল? যেখানে দু’দিন আগেই চিরঞ্জিত বলেছিলেন, ‘বারাসত ছাড়া অন্য কেন্দ্রে আমি প্রার্থী হব না। দল অন্য কেন্দ্রে প্রার্থী করলে রাজনীতিই ছেড়ে দেব।’ সেখানে একই কেন্দ্রে তৃতীয়বার প্রার্থী হলেন চিরঞ্জিত। অথচ দেবশ্রী বলেছিলেন, দলকে বলেছি রায়দিঘি থেকে প্রার্থী হতে চাই না। অন্য কেন্দ্র থেকে প্রার্থী করলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করব। কিন্তু সেখানে দেখা গেল, চিরঞ্জিতের কথা দল শুনলেও দেবশ্রীর আর্জি খারিজ করে দেওয়া হয়েছে।
এখানে একাধিক কারণ তৃণমূল কংগ্রেসের অন্দরে আলোচনা হয়েছে। এক, দেবশ্রী রায় তৃণমূল কংগ্রেসে থেকে বিজেপিতে যোগ দিতে গিয়েছিলেন। সেটা যখন হয়নি তখন ফিরে এসেছিলেন। এই কাজটা দল ভালভাবে মেনে নেয়নি। দুই, রায়দিঘি থেকে তাঁকে টিকিট দেওয়া এবং জেতানো সবটাই দলকে করতে হয়েছিল। সেখানে দেবশ্রী রায়ের ক্যারিশ্মা কাজ করেনি। তিন, সেখানে দেবশ্রী রায় জেতার পর সেভাবে যোগাযোগ না রাখায় সংগঠন শক্তিশালী হয়নি। চার, রায়দিঘি কেন্দ্রে দেবশ্রী রায়ের জন্য সংগঠনে ফাটল ধরেছিল। যাঁরা দিদি, দিদি করতেন দেবশ্রী তাঁদেরকে তোল্লাই দিয়েছে। আর যাঁরা মাঠে নেমে কাজ করেছিলেন তাঁরা ব্রাত্যই থেকেছে। পাঁচ, ওই এলাকায় টোটো–কেলেঙ্কারিতে নাম জড়িয়েছে তাঁর। ফলে মানুষের কাছে এখন দেবশ্রীর কোনও গ্রহণযোগ্যতা নেই।
অন্যদিকে চিরঞ্জিত চক্রবর্তী বেসুরো গাইলেও দলেই ছিলেন। আবার দলের হয়েই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ইচ্ছাপ্রকাশ করেছিলেন। ২০১১ সালে প্রথম বারাসত থেকে তৃণমূল কংগ্রেসের টিকিটে জিতেছিলেন বাংলা সিনেমার জনপ্রিয় নায়ক চিরঞ্জিত। ২০১৬ সালেও দল তাঁকে প্রার্থী করে। তিনি জেতেনও। জেলার প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীকে বারাসত স্টেডিয়ামের আধুনিকীকরণের প্রস্তাব দিয়েছিলেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী বিধায়কের প্রস্তাব মেনে নেওয়ায় নবসাজে সেজে ওঠে বারাসত স্টেডিয়াম। যা শহরের বাসিন্দাদের কাছে গর্বের। এই জন্য বিধায়ককে বাহবাও দেন অনেকে। তাছাড়া বারাসত হাসপাতালের শিশু বিভাগ, হাসপাতালে রোগীর পরিবারের জন্য প্রতীক্ষালয়, নতুন ভবন তৈরির পাশাপাশি রাস্তাঘাটের উন্নয়ন, হাই মাস্ট আলো, স্কুলের পরিকাঠামো উন্নয়নে নিজের বিধায়ক তহবিল থেকে টাকা দিয়েছেন চিরঞ্জিত।
আবার বারাসতের বিভিন্ন জায়গায় সভা, মিছিল, মোটরবাইক র্যালির মতো নানা কর্মসূচিতে তাঁকে দেখা যাচ্ছে। জনসংযোগও বাড়িয়ে চলেছেন তিনি। তাঁর নামে কোনও কেচ্ছা–কেলেঙ্কারি নেই। কোনও দুর্নীতির অভিযোগও নেই। দলের একনিষ্ঠ কর্মী হয়ে কাজ করেছেন। তাই সবদিক বিবেচনা করে তাঁকে ফের টিকিট দেওয়া হল। এমনকী সূত্রের খবর, ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোর দলকে যে রিপোর্ট পেশ করেছেন তাতেও এই অভিনেতা–প্রার্থীর ভাল ইমেজই ফুটে উঠেছে।