এই বিধানসভায় তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন নয়না বন্দোপাধ্যায়। অন্য দিকে, বিজেপির হয়ে দাঁড়াচ্ছেন দেবব্রত মাঝি। বাম-কংগ্রেস-ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্টের (আইএসএফ) তরফে দাঁড়াচ্ছেন কংগ্রেসের সন্তোষ পাঠক।
কলকাতা হল পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী ও বৃহত্তম শহর। এই শহরটি হুগলি নদীর পূর্ব পাড়ে অবস্থিত। জনসংখ্যার হিসেবে বৃহত্তর কলকাতা ভারতের তৃতীয় সর্বাধিক জনবহুল মহানগর। সুতানুটি, ডিহি কলকাতা ও গোবিন্দপুর নামে তিনটি গ্রাম নিয়ে মূল কলকাতা শহরটি গড়ে ওঠে। সপ্তদশ শতাব্দীর শেষভাগ পর্যন্ত এই গ্রামগুলির শাসনকর্তা ছিলেন মুঘল সম্রাটের অধীনস্থ বাংলার নবাবেরা। ১৬৯০ সালে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি নবাবের কাছ থেকে বাংলায় বাণিজ্য সনদ লাভ করেছিল। এরপর কোম্পানি কলকাতায় একটি দুর্গবেষ্টিত বাণিজ্যকুঠি গড়ে তোলে। ১৭৫৬ সালে নবাব সিরাজদ্দৌলা কলকাতা জয় করেছিলেন। কিন্তু পরের বছরই কোম্পানি আবার শহরটি দখল করে নিয়েছিলেন। এর কয়েক দশকের মধ্যেই কোম্পানি বাংলায় যথেষ্ট প্রতিপত্তি অর্জন করেছিল। ১৭৯৩ সালে ‘নিজামৎ’ বা স্থানীয় শাসনের অবলুপ্তি ঘটিয়ে এই অঞ্চলে পূর্ণ সার্বভৌমত্ব কায়েম করেছিল।
চৌরঙ্গী বিধানসভা কেন্দ্র হল রাজধানী কলকাতার একটি বিধানসভা কেন্দ্র। সীমানা পুনর্নির্ধারণ কমিশনের নির্দেশিকা অনুযায়ী, ১৬২ নং চৌরঙ্গী বিধানসভা কেন্দ্রটি নিম্নলিখিত ওয়ার্ডগুলি দিয়ে গঠিত হয়। এই বিধানসভার অন্তর্গত কলকাতা পুরনিগমেক ওয়ার্ড নম্বর ৪৪, ৪৫, ৪৬, ৪৭, ৪৮, ৪৯, ৫০, ৫১, ৫২, ৫৩ ও ৬২। চৌরঙ্গী বিধানসভা কেন্দ্রটি কলকাতা উত্তর লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত।২০০৯ সালের সাধারণ নির্বাচনের আগে এই কেন্দ্রটি কলকাতা দক্ষিণ লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত ছিল।
২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে এই কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী নয়না বন্দোপাধ্যায় জিতেছিলেন৷ তাঁর প্রাপ্ত ভোট ছিল ৫৫ হাজার ১১৯৷ দ্বিতীয় স্থানে ছিলেন কংগ্রেসের সৌমেন্দ্রনাথ মিত্র। তাঁর প্রাপ্ত ভোট সংখ্যা ছিল ৪১ হাজার ৯০৩৷ তৃণমূল প্রার্থী নয়না বন্দোপাধ্যায় তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কংগ্রেসের সৌমেন্দ্রনাথ মিত্রকে ১৩ হাজার ২১৬ ভোটে পরাজিত করেছিলেন।
২০০৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের সুব্রত বক্সি চৌরঙ্গী বিধানসভা কেন্দ্র থেকে তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সিপিআইএমের নারায়ণ জৈনকে পরাজিত করেছিলেন। ২০০১ ও ১৯৯৬ সালে এই কেন্দ্র থেকে জয়লাভ করেছিলেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়। ২০০১ সালে তিনি তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী হিসেবে জেডিএসের শাহিদ হোসেনকে ও ১৯৯৬ সালে কংগ্রেস প্রার্থী হিসেবে জনতা দলের মনতোষ পালকে পরাজিত করেছিলেন। ১৯৯১ সালে কংগ্রেসের সিদ্ধার্থশঙ্কর রায় সিপিআইএমের অশোক মিত্রকে এই কেন্দ্র থেকে পরাজিত করেছিলেন। ১৯৮৭ সালে কংগ্রেসের দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায় সিপিআইএমের বাদশা আলমকে এখান থেকেই পরাজিত করেছিলেন। ১৯৮২ সালে কংগ্রেসের শিশির বসু চৌরঙ্গী কেন্দ্র থেকে সিপিআইএমের জাহিরুল হককে পরাজিত করেছিলেন।
১৯৭২ ও ১৯৭১ সালে কংগ্রেসের শংকর ঘোষ এই কেন্দ্র থেকে জিতেছিলেন। ১৯৬৯ ও ১৯৬৭ সালে কংগ্রেসের সিদ্ধার্থশঙ্কর রায় এই কেন্দ্র থেকে জিতেছিলেন। ১৯৬২ সালে কংগ্রেসের ড. বিধানচন্দ্র রায় এই কেন্দ্র থেকে জয়লাভ করেছিলেন। ১৯৫১ সালে ভারতের প্রথম নির্বাচনের সময় অবশ্য চৌরঙ্গী নামে কোনও বিধানসভা কেন্দ্রের অস্তিত্ব ছিল না। ১৯৫৭ ও ১৯৫১ সালের নির্বাচনে চৌরঙ্গীর জায়গায় ফোর্ট নামে একটি বিধানসভা কেন্দ্র ছিল। ১৯৫৭ সালে কংগ্রেসের মৈত্রেয়ী বসু ও ১৯৫১ সালে কংগ্রেসের নরেন্দ্রনাথ সেন এই কেন্দ্র থেকে জিতেছিলেন।