তাঁদের দু’জনের মধ্যে মতপার্থক্য চরমে। রাজনীতির ময়দানে কেউ কাউকে এক ইঞ্চি জমি ছেড়ে দিতে নারাজ। একে অন্যের বিরুদ্ধে সপ্তমে চড়াচ্ছেন মেজাজ। একজন আক্রমণ করছেন অন্যকে গদ্দার, মীরজাফর বলে। আর অন্যজন আক্রমণ শানাচ্ছেন, বেগমকে হারাবো, উৎখাত করব বলে। এই প্রবল পরস্পর পরস্পরকে আক্রমণের মধ্যে দিয়ে জমি আন্দোলনের ধাত্রীভূমি নন্দীগ্রাম তপ্ত হয়ে উঠছে প্রত্যেকদিন। কিন্তু তার মধ্যেও দেখা গেল চূড়ান্ত সৌজন্য। যা কেউ ভাবতেও পারছেন না। আসলে রাজনীতির ময়দান এবং সৌজন্য দুটোর জায়গা যে আলাদা তা আবার প্রমাণ করলেন তিনি। হ্যাঁ, এই যুযুধান প্রতিপক্ষ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং শুভেন্দু অধিকারী। তবে সৌজন্যের নিরিখে কিন্তু দ্বিতীয় দফার নির্বাচনের আগেই ফুল মার্কস পেয়ে গেলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। হ্যাঁ, শুভেন্দুর প্রতিই দেখা গেল মমতা–ময়ী সৌজন্য। যা অপলক দৃষ্টিতে দেখল গ্রামবাংলা।
ঠিক কী ঘটেছে? বিরুলিয়া বাজারেই সোমবার সন্ধ্যায় মুখোমুখি পড়ে যায় মমতা–শুভেন্দুর কনভয়। কেউ কারও সঙ্গে মুখোমুখি পড়ে যাননি, দু’জনেই ছিলেন গাড়ির ভেতরেই। কিন্তু সামনে শুভেন্দুর কনভয় রয়েছে জানতে পেরেই অভাবনীয় নির্দেশ দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি নির্দেশ দেন, শুভেন্দুর কনভয়কেই যেন আগে যেতে দেওয়া হয়। সেই মতোই সেখান থেকে আগে বেরিয়ে যান শুভেন্দু অধিকারী। তারপর নিজের গন্তব্যে যান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
উল্লেখ্য, এই বিরুলিয়া বাজারে মুখ্যমন্ত্রীর আঘাতের ঘটনায় তিনি সরাসরি শুভেন্দুর দিকেই তোপ দেগেছেন। শুভেন্দুর নাম না করে তিনি বলেছেন, ‘তোর নির্দেশেই আমার পায়ে আঘাত।’ কিন্তু যখন সৌজন্যের প্রশ্ন এল, তখন কিন্তু মমতাকেই এগিয়ে যেতে দেখা গেল। এটাই প্রকৃত নেত্রীর পরিচয় বলে মনে করছেন গ্রামবাংলার মানুষজন। ২০১১ সালে রাজ্যের ক্ষমতা পরিবর্তনের সময় বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য–সহ শীর্ষ বাম নেতাদের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। তারপর সেখানে দেখা হতেই হাসি মুখে করজোড়ে নমস্কার করেছিলেন। যে ছবি ভাইরাল হযেছিল। তখন ভুলে গিয়েছিলেন রাজনৈতিক সংঘাত। আজ আবার একটা ভোটের মুখে দাঁড়িয়ে সেই সৌজন্যই ফিরিয়ে আনলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যা নজির হয়ে থাকবে রাজ্য–রাজনীতিতে।