ভোট যে কত বড় বালাই। তা আরেকবার প্রমাণ করলেন করোনা ভ্যাকসিনের গবেষক বিজেপি প্রার্থী। ভোটের নামে করোনার বিধি-নিষেধ শিকেয় তুলেছেন সব প্রার্থীরাই। সে ক্ষেত্রে পূর্বস্থলী উত্তরের বিজেপি প্রার্থী গোবর্ধন দাস এই বিষয়ে কিছুটা সর্তকতা অবলম্বন করবেন বলে ভোটাররা আশা করেছিলেন। কিন্তু সেই আশায় জল ঢেলে দিয়েছেন তিনি।
কেন গোবর্ধন বাবুর কাছে এই বাড়তি প্রত্যাশা করেছিলেন সাধারণ মানুষ?
এর মূল কারণ হল, ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের এই প্রাক্তনী করোনা ভ্যাকসিন তৈরির কাজে যুক্ত রয়েছেন। সে কারণেই বিজ্ঞানী গোবর্ধনবাবু ভোটের প্রচারে অন্তত সচেতনতার বিষয়টি মেনে চলবেন বলেই ধরে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তা তো দুরস্থ উল্টে গোবর্ধন বা তাঁর আশেপাশে অনুগামীদের কারোর মুখেই মাস্ক লক্ষ্য করা যায়নি।
আর সামাজিক দূরত্ব লাটে উঠেছে ভোটের প্রচারে নেমে। যদিও প্রচার বিধি মেনে সচেতনতা প্রচারের কাজ চলছে বলেই দাবি গোবর্ধনবাবুর।
বিশ্বভারতী থেকে রসায়নে স্নাতক হওয়ার পর জেএনইউ থেকে বায়োটেকনোলজিতে স্নাতকোত্তর হন বিজেপির এই প্রার্থী। তারপরে চণ্ডীগড়ের ইনস্টিউট অফ মাইক্রোবিয়াল টেকনোলজি থেকে পিএইচডিও করেন এই বিজ্ঞানী। তারপর কর্মসূত্রে ১২ বছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ছিলেন গোবর্ধনবাবু। এরপর ৬ বছর ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণার কাজও করেন। তারপর একটি ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারক সংস্থা সঙ্গেও জড়িয়েছেন তিনি। কর্মসূত্রে তিনি সিনিয়র বিজ্ঞানী হিসেবে কাজ করেছেন রাষ্ট্রপুঞ্জে। বর্তমানে মলিকিউলার মেডিসিনের অধ্যাপক গোবর্ধনবাবু প্রতিষেধক তৈরির গবেষণায় নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। শুধু তাই নয়, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের সাহায্যে বিসিজি ভ্যাকসিনের সঙ্গে ভাইরাসের প্রোটিনের মিশ্রণ ঘটিয়ে চলেছে তার সংস্থা। ঘটনাচক্রে গোবর্ধন বাবুই সেই সরডাঙ্গা অদূরে নিমদহের আদি বাসিন্দা। পূর্বস্থলীর মানু্ষের প্রশ্ন, এত সচেতন মানুষ কীভাবে করোনা বিধি উপেক্ষা করে প্রচারে মেতে উঠেছেন?
এ প্রসঙ্গে গোবর্ধনবাবু বলেন, ‘ আসলে ছবি তোলার সময় সকলে কাছে চলে আসছেন। সেই সময়ে মাস্ক খুলে ফেলছেন তারা। অনেক সময় এইরকম আমারও হয়। তবে যতদূর সম্ভব সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার চেষ্টা করছি। সেই কারণে মনোনয়ন জমা দেওয়ার দিনেও দু’টি গাড়িতে ভাগ হয়ে গিয়েছিলাম আমরা। ঘরোয়া মিটিং—পথসভায় করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আসা ও রোগীর সংখ্যা বাড়ার কথা জানাচ্ছি। এই পরিস্থিতিতে যে সকলের মাস্ক পরা, নিয়মিত হাত ধোওয়া উচিত সেটাও বলা হচ্ছে।’
গোবর্ধন জানিয়েছেন, তাঁর গবেষণা শেষ পর্যায়ে। ভোটে ব্যস্ত হয়ে পড়ায়, কাজ আপাতত থমকে রয়েছে। সাফল্য মিললে ওই ভ্যাকসিন একবার নিলে জীবনভর করোনায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকবে না—বলে তাঁর দাবি। বিজেপি সরকার গঠন করলে, সকলের জন্য ভ্যাকসিন আবশ্যিক করার পরামর্শ দেবেন বলে জানান তিনি। কিন্তু সে সব তো ভোটের পরে। তার আগে সুযোগ পেয়েও ব্যতিক্রমী হয়ে উঠতে পারলেন না—প্রতিষ্ঠিত এই টিকা বিজ্ঞানী।