রবিবাসরীয় ব্রিগেড সমাবেশের যৌক্তিকতা কতটা? রাজ্য–রাজনীতির অলিন্দে এখন এই প্রশ্নই উঠতে শুরু করেছে। তবে সেটা বামেদের ব্রিগেড বলে নয়। যে কোনও ব্রিগেড সমাবেশ থেকে রাজনীতির ঝড় তুলে কোনও লাভ হয় কি? ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে বিভিন্ন দল নিয়ে এখানে সমাবেশ করেছিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু সেই ফসল পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘরে তোলা যায়নি। আবার ২০১৯ সালের বামেদের শেষ ব্রিগেড সমাবেশে মঞ্চের পিছনে এসে দাঁড়িয়েছিল সাদা রঙের অ্যাম্বাসেডর গাড়িটা। ভিতরে বসে ছিলেন রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। শারীরিক অসুস্থতার কারণে গাড়ি থেকে নামতে পারেননি। তবে তাঁর অদৃশ্য উপস্থিতিতেই মঞ্চের সামনে হাজির লাল সমুদ্রের শব্দব্রহ্মই বুঝিয়ে দিয়েছিল তাঁকেই রাজনীতির নায়ক বলে মানেন সবাই। কিন্তু ফলাফল! সেটা ছিল বামেদের কাছে ঐতিহাসিক খারাপ ফলাফলের নজির।
এখন একুশের বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে নরেন্দ্র মোদী সভা করতে আসবেন এই ব্রিগেডেই। তার আগে আজ (রবিবার) হাইভোল্টেজ সভা করতে চলেছে বামেরা। যেখানে কংগ্রেসের পাশাপাশি উপস্থিত থাকবেন পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকি ও তাঁর দলবল। আর বামেরা তো রইলই। সুতরাং ১০ লাখ মানুষের সমাবেশ করার টার্গেট নিয়েছে তারা। কিন্তু এত মানুষ কি বাম–কংগ্রেস–আইএসএফ জোটকে ভোট দেবে? উঠছে প্রশ্ন। এবার যদিও এই ব্রিগেড সমাবেশের নতুন আঙ্গিকের স্লোগান হল—‘তোকে নিয়ে ব্রিগেড যাব টুম্পা। চেন–ফ্ল্যাগে মাঠ সাজাব টুম্পা।’ কিন্তু তাতে কী ভোটবাক্স ভরবে?
গতবার ব্রিগেড সমাবেশ থেকে একটা আওয়াজ উঠেছিল - ‘ওদের আমরা ছাড়বক নাই।’ ব্রিগেড ফেরত বাম–কর্মীদের মুখে এটাই শোনা গিয়েছিল। তারপর, ওখানেই শেষ। এগোতে পারেনি বামেরা। সেদিন ব্রিগেড কাঁপিয়ে ছিলেন সিপিআইএমের রাজ্য কমিটির সদস্য তথা জনজাতি নেত্রী দেবলীনা হেমব্রম। তিনি যে বার্তা দিয়েছিলেন সিপিআইএম তা করে উঠতে পারেনি। সামনের সারিতে আনতে পারেনি নতুন প্রজন্মকে। এবারও দেবলীনা বলবেন তো? উঠেছে প্রশ্ন। সূত্রের খবর, জোটের ব্রিগেডে বক্তা হিসেবে দেবলীনাকে পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। কংগ্রেস ও আব্বাস সিদ্দিকির ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্টের ক্ষেত্রে প্রথম থেকেই দরাজ বামেরা।
এই পরিস্থিতিতে বিবাদ নিয়েই মঞ্চে অধীরের হাত ধরবেন ভাইজান। আবার বক্তা তালিকায় থাকছে না কোনও চমক। তাই মুখ বাঁচাতে শেষ ভরসা ছিলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। রাতেই লিখিতবার্তা পাঠিয়েছেন বুদ্ধবাবু। কর্মীদের মনোবল চাঙ্গা করতে লেখেন, ‘মাঠে ময়দানে কর্মীরা লড়াই করছেন। আর আমি গৃহবন্দি হয়ে রয়েছি। এত বড় সমাবেশ হবে অথচ আমি যেতে পারছি না। এটা আমার কাছে যন্ত্রণার।’ এবার আনা গেল না রাহুল গান্ধীকে। ব্রিগেড সমাবেশের পরে ফের কংগ্রেস ও ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্টের মধ্যে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা হবে বলে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে। দুই দলের দ্বন্দ্ব যে স্পষ্ট শনিবার স্বীকার করে নিয়েছেন অধীর চৌধুরী ও মহম্মদ সেলিমের মতো জোটের শীর্ষনেতৃত্ব। সমাবেশের পরে ফের বৈঠক হবে বলে জানান তাঁরা।
সিপিআইএমের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখার কথা সীতারাম ইয়েচুরি, সূর্যকান্ত মিশ্র ও সংখ্যালঘু নেতা মহম্মদ সেলিমের। কংগ্রেসের পক্ষে বক্তা তালিকায় রয়েছেন ছত্তিশগড়ের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বাঘেল ও অধীর চৌধুরী। ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট জোটে যোগ দেওয়ায় তাঁদের পক্ষে বক্তব্য রাখবেন পীরজাদা আব্বাসউদ্দিন সিদ্দিকি। আর প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী শুনতে চেয়েছিলেন কমরেডদের কলতান। তবে চিকিৎসকরা অনুমতি দেননি। মন চাইলেও শরীর সায় দিচ্ছে না। তবে খবর রাখছেন ভারাক্রান্ত বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। সুতরাং তিনি থাকছেন না এটা নিশ্চিত। কিন্তু সিপিআইএমের রাজ্য কমিটির এক সদস্যের কথায়, ‘বুদ্ধবাবু না থেকেও থাকবেন। থাকবেন বেকারদের চাকরির দাবিতে। থাকবেন শিল্পের দাবিতে।’ আর দেবলীনা বলছেন, ‘মাঠেই দেখা যাবে।’ সূত্রের খবর, মাঠে থাকলেও মঞ্চ পাবেন না দেবলীনা। আর বাকি প্রশ্নের উত্তর মিলবে ২ মে।