দার্জিলিং বিধানসভা নির্বাচনে ৫৩,২২৭ ভোট পেয়ে জয়ী বিজেপির নীরাজ তামাঙ জিম্বা।
পাহাড়ের তিনটি আসন গোর্খা জনমুক্তি মোর্চাকে ছেড়ে দিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। তিন আসনেই গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার বিনয় তামাং এবং বিমল গুরুং গোষ্ঠী পৃথক প্রার্থী ঘোষণা করেছে। দার্জিলিঙে বিনয় তামাং গোষ্ঠীর প্রার্থী কেশবরাজ পোখরেল। বিমল গুরুং গোষ্ঠীর প্রার্থী হলেন পি টি ওলা। এই আসনে বিজেপির তরফে দাঁড়াচ্ছেন নীরজ জিম্বা। বাম-কংগ্রেস-ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্টের (আইএসএফ) তরফে দাঁড়াচ্ছেন সিপিআইএমের গৌতম রাজ রাই।
দার্জিলিং বিধানসভা কেন্দ্র দার্জিলিং জেলার একটি বিধানসভা কেন্দ্র। ভারতের সীমানা পুনর্নির্ধারণ কমিশনের নির্দেশিকা অনুসারে ২৩ নম্বর দার্জিলিং বিধানসভা কেন্দ্রটি দার্জিলিং পুরসভা, দার্জিলিং পুলবাজার সিডি ব্লক ও ধুতরিয়া কলেজ ভ্যালি, ঘুম খাসমহল, সুখিয়া-সিমানা, রংভাং গোপালধারা, পোখারিবং-১, পোখারিবং-২, পোখারিবং-৩, লিঙ্গিয়া মারায়েবং, পেরমাগুড়ি তামসাং, প্লাংডাং ও রংবুল গ্রাম পঞ্চায়েতগুলি জোড়বাংলো-সুকিয়াপোখরি সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের অন্তর্গত। দার্জিলিং বিধানসভা কেন্দ্রটি দার্জিলিং লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত।
২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার অমর সিং রাই তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী তৃণমূলের সারদা রাই সুব্বাকে পরাজিত করেছিলেন। ২০১১ সালের ১৮ জুলাই দার্জিলিং পার্বত্য অঞ্চলে গোর্খাল্যান্ড আঞ্চলিক প্রশাসন (জিটিএ) গঠনের উদ্দেশ্যে রাজ্য সরকার, কেন্দ্রীয় সরকার ও গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার মধ্যে একটি ত্রিপাক্ষিক চুক্তি সাক্ষরিত হয়। আনুষ্ঠানিকভাবে জিটিএ প্রতিষ্ঠার আগে পর্যন্ত একটি প্রশাসক বোর্ডের অধীনে ডিজিএইচসি-র কাজকর্ম চলতে থাকে। এই বোর্ডের সদস্য ছিলেন দার্জিলিং, কার্শিয়াং ও কালিম্পং বিধানসভা কেন্দ্রের তিন বিধায়ক, দার্জিলিঙের জেলাশাসক এবং ডিজিএইচসি-র প্রশাসক।
২০১২ সালের অগস্ট মাসে বিধানসভা পাশ হওয়া একটি আইনের আওতায় ডিজিএইচসি-র পরিবর্তে দার্জিলিং পার্বত্য অঞ্চলে জিটিএ গঠিত হয়। ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে গুরুঙের নেতৃত্বে গোরুবাথান থেকে জয়গাঁ পর্যন্ত জিজেএম সমর্থকরা ‘লং মার্চ’ করছিলেন। সেই মিছিলের রেশ ধরেই পাহাড়ে হিংসা শুরু হয়ে গিয়েছিল। আর তা পর টানা নয় দিনের বনধ হয়। এর ৩ বছর পর্যন্ত পাহাড় ও তরাই অঞ্চলে শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতি থাকার পর ফের নতুন করে উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি হতে শুরু করে। আর তা হয়েছে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার বিমল গুরুঙের আচমকা, নাটকীয় এবং রহস্যজনক আর্বিভাব ঘিরে। ২০১৭ সাল থেকে তিনি জনগণের নজরের আড়ালে চলে গিয়েছিলেন। ওই সময় তাঁর বিরুদ্ধে রাজ্য পুলিশ কিছু মামলা দায়ের করেছিল। তাঁর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা। পুলিশের দ্বারা মামলা দায়ের পর থেকেই বিমল গুরুংকে আর প্রকাশ্যে দেখা যায়নি।
গুরুঙের বিরুদ্ধে পাহাড়ে হিংসা ছড়ানোর ষড়যন্ত্রে মূলচক্রী হওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। পাহাড়ের ওই হিংসায় সরকার বিরোধী প্রতিবাদে অংশ নেওয়া ১১ জন পুলিশের গুলিতে মারা গিয়েছেন বলে অভিযোগ। আর একজন অ্যাসিস্ট্যান্ট সাব-ইনস্পেক্টর মারা গিয়েছেন। গুরুং দিল্লি, সিকিম, নেপাল ও ঝাড়খণ্ডে লুকিয়ে ছিল বলে খবর পাওয়া যাচ্ছিল। আর তাঁকে একেবারেই প্রকাশ্যে দেখা যায়নি বললেই চলে। আইনগত দিকটি ছেড়ে দিলেও গত ২১ অক্টোবর গুরুঙের ফের প্রকাশ্যে আসার বিষয়টির মধ্যে আরও একটি তাৎপর্য রয়েছে। আর তা হল প্রকাশ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি সমর্থন প্রকাশ এবং বিজেপি-র প্রতি অনাস্থা ব্যক্ত করা। কারণ গুরুং ২০০৭ সাল থেকে বিজেপিকে সমর্থন করে আসছেন। ২০০৯ সাল থেকে পরপর তিনবার গেরুয়া দলের হয়ে দার্জিলিং লোকসভা আসনে জিততে সুবিধা হয়েছে। এখন গুরুঙের অভিযোগ, দার্জিলিং ও পৃথক রাজ্য নিয়ে তাঁদের আশা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে বিজেপি।
২০১১, জিজেএমের ত্রিলোক দেওয়ান তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জিএনএলএফ এর বিম সুব্বাকে পরাজিত করেছিলেন। ২০০৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে জিএনএলএফের প্রণয় রাই দার্জিলিং কেন্দ্র থেকে জয়ী হয়েছিলেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী নির্দল অমর লামাকে পরাজিত করেছিলেন তিনি।