রাজ্যে আসার পর থেকেই কার্যত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিশানায় ছিল কেন্দ্রীয় বাহিনী। একাধিক জনসভায় কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে সরব হয়েছে। এবার সেই মন্তব্যের জেরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নোটিশ দিল নির্বাচন কমিশন। তাঁকে আগামিকাল (শনিবার) সকাল ১১ টার কমিশনের নোটিশের জবাব দিতে হবে।
শুক্রবার কমিশনের চিঠিতে গত ২৮ মার্চ এবং ৭ এপ্রিল মমতার ভাষণকে তুলে ধরা হয়েছে। ২৮ মার্চ নির্বাচনী জনসভায় নাম না করে শুভেন্দু অধিকারী, শিশির অধিকারীদের আক্রমণ শানিয়েছিলেন মমতা। সেই রেশ ধরেই অভিযোগ করেছিলেন, মহিলাদের ভোটদানে বাধা দিচ্ছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। মমতার বক্তব্যকে উদ্ধৃত কমিশন জানিয়েছে, মহিলাদের যদি আক্রমণ করা হয়, তাহলে পালটা আক্রমণ করতে বলেছিলেন তৃণমূূল কংগ্রেস সুপ্রিমো। সেইসঙ্গে ভোটকেন্দ্রে ঢুকতে না দিলে মহিলাদের বিদ্রোহেরও পরামর্শ দিয়েছিলেন। পূর্ব মেদিনীপুরের সভায় মমতা বলেছিলেন, ‘মেয়েদের ভোট দিতে দিচ্ছে না কেন্দ্রীয় বাহিনী। হুমকি দিচ্ছে। কে ওদের (কেন্দ্রীয় বাহিনী) এত ক্ষমতা দিয়েছে? বাংলায় যে ওরা রয়েছে, তার থাকার, খাওয়ার খরচ দিচ্ছি আমরা। আর এখানকার মানুষকে লাঠি দিয়ে মারছে? ২০১৬ ও ২০১৯ সালেও একই জিনিস দেখেছি। কার নির্দেশে কেন্দ্রীয় বাহিনী ভোটারদের মারধর করছে জানি। এবার মারতে এলে হাতা, খুন্তি, বঁটি নিয়ে তেড়ে যাবেন মা-বোনেরা। বুথ থেকে বের করে দিতে এলে বিদ্রোহ করবেন।'
পরে ৭ এপ্রিল কোচবিহারে মমতার ভাষণকে উদ্ধৃত করে কমিশনের চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘যদি কেন্দ্রীয় বাহিনী বিশৃঙ্খলা তৈরি করে, তাহলে একদল মহিলা তাদের ঘেরাও করে রাখবেন। আর অপর দল ভোট দিতে যাবেন। শুধু ঘেরাও করে রাখলে হবে না। আপনাদের ভোট নষ্ট করবেন না।’ পাঁচজন করে ঘেরাও এবং পাঁচজন করে ভোট দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন মমতা।
সেই মন্তব্য নিয়ে আগে রিপোর্ট তলব করেছিল। এবার নোটিশ পাঠিয়ে কমিশনের তরফে জানানো হয়েছে, প্রাথমিকভাবে মনে হয়েছে যে মমতার মন্তব্য ‘মিথ্যা’, ‘প্ররোচনামূলক’। যা নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণকারী বাহিনীর মনোবলে ধাক্কা দিচ্ছে। অথচ যে কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিভিন্ন রাজ্যের ভোটে নিরাপত্তা দায়িত্বে থেকেছে। ‘শান্তিপূর্ণ এবং অবাধ’ নির্বাচনের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় বাহিনীর ভূমিকার প্রশংসা করেছে কমিশন। সেইসঙ্গে ছত্তিশগড়ে মাওবাদীদের সঙ্গে গুলির লড়াই প্রসঙ্গেও উত্থাপন করা হয়েছে। কমিশনের তরফে কড়া ভাষায় জানানো হয়েছে, মমতা যে কাজ করছেন, তাতে সম্ভবত রাজ্য পুলিশ এবং কেন্দ্রীয় বাহিনীর মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরির কাজ প্রশস্ত হচ্ছে। এমনকী মমতা সেই ব্যবধান তৈরির বিষয়টি সুনিশ্চিত করতে কোনও কসুর ছাড়ছে না বলে জানিয়েছে কমিশন।
যদিও সেই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তৃণমূল কংগ্রেস নেতা ফিরহাদ হাকিম। তিনি দাবি করেন, বিজেপির নির্দেশে কাজ করছে কমিশন। বিজেপি যা বলছে, তাই নিয়েই নোটিশ পাঠিয়ে দিচ্ছে। সঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, প্রথম চিঠির মতো দ্বিতীয় চিঠিরও উত্তর দেবেন মমতা।