রাজ্য–জেলার পুলিশ–প্রশাসনের কর্তাদের কাছ থেকেই আইনশৃঙ্খলা–সহ যাবতীয় রিপোর্ট নেয় কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন। বঙ্গ সফরেও তা নিয়েছে কমিশনের ফুল বেঞ্চ। কিন্তু কমিশন নিজস্ব নিখুঁত তথ্য পেশ করে তাদের সমান্তরাল প্রশাসনের যে নমুনা তুলে ধরেছে, তা কার্যত নজিরবিহীন বলেই মনে করছেন রাজ্য পুলিশ ও প্রশাসনের কর্তারা। কারণ এতটা আশা করা যায়নি। সেখানে নির্বাচনের দু’মাস আগে কমিশনের ‘হোমওয়ার্কে’ কার্যত স্তম্ভিত হয়ে পড়েছেন তাঁরা। সূত্রের খবর, কোভিড পরিস্থিতিতে যখন সবাই ঘরবন্দি, তখন রাজ্য ধরে ধরে হোমওয়ার্ক করে রেখেছে নির্বাচন কমিশন। তারই প্রতিফলন দেখা গেল প্রশাসনের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের ফুলবেঞ্চের বৈঠকে।
কমিশন নির্বাচনী বিধি এবং ভোট পরিচালনা নিয়ে একের পর এক নির্দেশ দিয়েছে। আর বুঝিয়ে দিয়েছে, রাজ্যের পুলিশ–প্রশাসনের অতীত ও সাম্প্রতিক নানা খুঁটিনাটি তথ্য তাদের ঠোঁটের ডগায় রয়েছে। গত ২১ জানুয়ারি কলকাতার এক পাঁচতারা হোটেলে জেলাশাসক ও পুলিশকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিল মুখ্য নির্বাচন কমিশনার সুনীল অরোরার নেতৃত্বাধীন ফুলবেঞ্চ। সেই বৈঠকে অরোরা জানান, সমান্তরাল প্রশাসনের মাধ্যমে সব খবরই রাখছে কমিশন। তাঁর দেওয়া সব খুঁটিনাটি তথ্যই একদম ঠিক বলে জানাচ্ছেন বৈঠকে উপস্থিত জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারেরা।
সূত্রের খবর, প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টার বৈঠকে জেলাশাসক ও পুলিশকর্তাদের বিভিন্ন বিষয়ে সতর্ক করে দেন কমিশনের কর্তারা। পক্ষপাতমূলক আচরণ ধরা পড়লে চাকরিতে কালো দাগ পড়তে পারে বলেও হুঁশিয়ারি দেন তাঁরা। কমিশনের সমান্তরাল প্রশাসনের পদক্ষেপ দেখে কপালে ভাঁজ পড়েছে পুলিশ–প্রশাসনের কর্তাদের। কারণ এত বিস্তারিত তথ্য দিল্লিতে বসে কীভাবে জানা সম্ভব, তা ভাবাচ্ছে তাঁদের। ফুলবেঞ্চ যে তথ্যগুলি তুলে ধরেছিল, তা কড়া নজরদারি ছাড়া জানা সম্ভব নয়।
গত কয়েক বছরে কোনও কোনও জেলায় তিন থেকে চারটি পুলিশ জেলা গড়া হয়েছে। একই জেলায় এক পুলিশ জেলা থেকে অফিসারকর্মী বদলি করা হয়েছে অন্য পুলিশ জেলায়। ফলে কার্যত সংশ্লিষ্ট পুলিশকর্মীরা একই জেলায় থেকে গিয়েছেন। অথচ দেখানো হয়, নির্বাচনী বিধি অনুযায়ী এক পুলিশ জেলা থেকে অন্যত্র বদলি করা হয়েছে। কিন্তু ওই বিধি অনুযায়ী এক জেলা থেকে অন্য জেলায় বদলি করাটাই নিয়ম। শুধু পুলিশের রদবদল নয়, প্রশাসনিক কর্তাদের রদবদল নিয়েও সব তথ্য রয়েছে কমিশনে। যা তুলে ধরা হয়েছিল ফুলবেঞ্চের পক্ষ থেকে।
রাজ্য সরকারের ঘনিষ্ঠ পুলিশ ও প্রশাসনের কর্তাদের তালিকাও কমিশনের হাতে রয়েছে বলে সূত্রের খবর। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলের ভিত্তিতে পুলিশ–প্রশাসনের কর্তাদের একটি তালিকা তৈরি করেছে কমিশন। গত দু’বছরের কিছু ঘটনা যাচাই করছে তারা। সেই সব ঘটনায় সরকার ঘনিষ্ঠ অফিসারদের ভূমিকা কী ছিল, কমিশনের নজর এখন সেদিকেই।