দ্বিতীয় দফার ভোটের দিন নন্দীগ্রামের বয়ালের বুথে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল প্রার্থী মমতা বন্দোপাধ্যায়। সেখানেই তাঁর সঙ্গে কথা হয় এক আইপিএস অফিসারের। সেই ভিডিয়ো ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। সেখানে দেখা গিয়েছে, মমতা ওই অফিসারকে লক্ষ্য করে প্রশ্নের পর প্রশ্ন ছুঁড়েছেন। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্নবাণও টলাতে পারেনি তাঁকে। মুখ্যমন্ত্রীর চোখে চোখ রেখে উত্তর দিয়ে গিয়েছেন ওই জাঁদরেল অফিসার। ওই ভিডিয়োতে নিজের উর্দির কলার টেনে তাঁকে বলতে শোনা যায়, ’ম্যাডাম, খাকি পরে দাগ নেব না।’ ওই আইপিএস আধিকারিকের নাম নগেন্দ্র ত্রিপাঠী। বৃহস্পতিবার এমনই দৃশ্যের সাক্ষী থেকেছে নন্দীগ্রামের বয়াল।
এদিন ভোট চলাকালীন তৃণমূলে অভিযোগ, বয়াল মক্তব প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৭ নম্বর বুথে তৃণমূলের এজেন্টকে বুথ থেকে বার করে দেওয়া হয়েছে। ওই বুথে ছাপ্পা দেওয়ার অভিযোগও ওঠে বিজেপি’র বিরুদ্ধে।
দুপুর সওয়া ১টা পর্যন্ত নন্দীগ্রামের রেয়াপাড়ায় নিজের ভাড়া বাড়িতেই ছিলেন মমতা। তারপর তিনি সেখান থেকে বেরিয়ে সোজা চলে যান বয়ালে। হুইলচেয়ারে বসে গ্রামের রাস্তায় ঢুকে পড়েন। স্থানীয় তৃণমূল কর্মীরা নেত্রীকে দেখতে পেয়ে বুথ দখলের নালিশ জানাতে শুরু করেন। এর পরই সরাসরি বুথে ঢুকে পড়েন মমতা। বুথের বাইরে তখন তৃণমূল ও বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনার পারদ চড়তে শুরু করে।
বয়ালের ওই বুথের ভিতরে মমতার মুখোমুখি হন নগেন্দ্র। তাঁকে সামনে পেয়ে মমতা প্রশ্ন করেন, ‘আমাকে একটা কথা বল, ২০০ মিটারের মধ্যে কেউ থাকতে পারে না। তবে ওরা কী ভাবে ২০০ মিটারের মধ্যে আছে?’ নগেন্দ্র উত্তর দেন, ‘এখন নেই ম্যাডাম। আপনি চেক করতে পারেন।’ পরক্ষণেই মমতার কটাক্ষ, ‘২০০ মিটারের মধ্যে কী করে আছে? ওরা তো এখানে দাঁড়িয়ে স্লোগান দিচ্ছিল দেখলাম? সকাল থেকে সুনীলকে অনেকবার বলা হয়েছে। তোমাকেও অনেকবার বলা হয়েছে। পাল্টা নগেন্দ্র বলেন, ‘আমি এখানে পার্সোনালি ঘুরে দেখে গিয়েছি ম্যাডাম।’ উত্তর শুনে কিছুটা উত্তেজিত গলাতেই পাল্টা মমতা বলেন, ‘ কোনও লাভ নেই। ও সব তোমরা শিখিয়ে দাও। আমরা এখানে যাচ্ছি, সরে যা। অবজার্ভার যাচ্ছে, সরে যা। ফর নাথিং নন্দীগ্রামটাকে তোমরা ইস্যু করলে কিন্তু।’ মমতার চোখে চোখ রেখেই জবাব দেন নগেন্দ্র। কয়েক পা এগিয়ে গিয়ে বলেন, ‘ম্যাডাম, এই খাকি পরে দাগ নিই না। আমি আপনাকে আশ্বস্ত করছি। এই পরে দাগ নেব না।’ মমতাও নাছোড়। তিনি পাল্টা বলেন, ‘দাগ তো সবাই নিয়ে নিয়েছে।’ নগেন্দ্রর জবাব, ‘আমি নেব না—ম্যাডাম। আমি এখানে পার্সোনালি দেখে গিয়েছিলাম। এখানে এমন কোনও সমস্যা ছিল না। হতে পারে পরে জড়ো হয়েছে। তাদের এখান থেকে সরিয়ে দিয়েছি। আপনাকে আশ্বস্ত করছি যে আমরা শান্তিপূর্ণ ভোট করাব। যে ভোটার আছে ওরাই ভোট দেবে।’
তখন মুখ্যমন্ত্রীকে তাঁকে নির্দেশ দেন, যারা ভোট দেবেন তাদেরই অ্যালাও করুন, বাদ বাকিদের সরিয়ে দিন এখান থেকে। নগেন্দ্রর সঙ্গে কিছুক্ষণ টানা কথোপকথন চলার পর, বুথ ছেড়ে বেরিয়ে যান মমতা। পরে কমিশন বিবৃতি দিয়ে জানায়, প্রায় ঘণ্টা দেড়েক বয়ালের ওই বুথে কাটিয়ে, বেরিয়ে যান মমতা। তাঁকে শান্তিপূর্ণ ভাবে ভোট পরিচলনার আশ্বাস দেন নগেন্দ্রও। এর আগে ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনেও ‘দাবাং’ ভূমিকায় দেখা গিয়েছিল নগেন্দ্রকে। তখন তিনি কলকাতা পুলিশের ডেপুটি কমিশনার ছিলেন।