স্নায়ুর লড়াইয়ে শেষপর্যন্ত পিছু হটল ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট (আইএসএফ)। পুরো রাজ্যে না হলেও দক্ষিণবঙ্গের অধিকাংশ আসনে পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকির দলের সঙ্গে রফাসূত্র মিলল। উত্তরবঙ্গের কয়েকটি আসনে এখনও জট কাটেনি। যদিও সিদ্দিকির দল অনেকটা সুর নরম করে নেওয়ায় আলোচনার মাধ্যমেই এগোতে চাইছে বাম এবং কংগ্রেস।
আসন্ন বিধানসভা ভোটের আসন সমঝোতা নিয়ে শনিবার হুগলির বৈদ্যবাটিতে সিপিআইএমের এরিয়া কমিটির বৈঠকে বসে বাম, কংগ্রেস এবং আইএসএফ। দ্বিতীয় দফার ত্রিপাক্ষিক বৈঠকে কংগ্রেসের তরফে হাজির ছিলেন আবদুল মান্নান এবং প্রদীপ ভট্টাচার্য। ছিলেন সিপিআইএম নেতা মহম্মদ সেলিম এবং আইএসএফের চেয়ারম্যান নৌসাদ সিদ্দিকি। বৈঠক শেষে সাংবাদিক বৈঠকে সিদ্দিকির দলের প্রতিনিধি জানান, রাজ্যের আসন বণ্টন নিয়ে আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে আলোচনা বসেছিল তিন পক্ষ। দক্ষিণবঙ্গে আসন বণ্টন নিয়ে আলোচনা প্রায় শেষের পথে। উত্তরবঙ্গে কোন আসনে কোন দল প্রার্থী দেবে, সে বিষয়ে বিবেচনার আর্জি জানানো হয়েছে। সেইসঙ্গে একটা সময় যে আব্বাসের দল কমপক্ষে ৭০ আসনের দাবি জানিয়েছিল, সেই দলের চেয়ারম্যান নৌসাদ শনিবার জানান, আগামিদিনে রাজ্যকে দিশা দেখাবে বাম-কংগ্রেস-আইএসএফ জোট। তাই ‘বৃহত্তর স্বার্থে’ ৪৪ টিরও কম আসনে লড়াই করতে পারেন আব্বাসরা। সেই সংখ্যটা শেষপর্যন্ত ৪৫-এর বেশিও হতে পারে।
সূত্রের খবর, দক্ষিণবঙ্গের ৮০ শতাংশ আসন নিয়ে একমত হয়েছে তিন দল। কয়েকটি আসন নিয়ে আলোচনা চলছে। আব্বাসের দলকে পাঁচটি আসন ছাড়ার আশ্বাস দিয়েছে কংগ্রেস। এমনকী দক্ষিণবঙ্গে নিজেদের একটি জেতা আসনও বামেদের ছেড়ে দিতে রাজি হয়েছেন কংগ্রেস নেতারা। পরিবর্তে ওই জেলায় আইএসএফকে একটি আসন ছাড়বে বামেরা। তবে উত্তরবঙ্গে এখনও রফাসূত্র পাওয়া যায়নি। সেখানে এমন কয়েকটি আসন দাবি করছে সিদ্দিকির দল, যা মানতে রাজি নন কংগ্রেস। বিশেষত কংগ্রেসের গড় হিসেবে পরিচিত এলাকাগুলিতে আইএসএফকে আসন ছাড়তে চাইছে না হাত শিবির। তবে তা নিয়ে চাপ বাড়ানোর পথে না হেঁটে আলোচনার মাধ্যমেই জোটের জট কাটানোর বিষয়ে হয়েছে আইএসএফ। উত্তরবঙ্গে বামেদের কয়েকটি বাড়তি আসন ছাড়ার আর্জি জানিয়েছে সিদ্দিকির দল। বামেদের সাহায্য চেয়েছে কংগ্রেস।
সেই ত্রিপাক্ষিক বৈঠক নিয়ে খুশি সিপিআইএম। সেলিম জানান, ‘সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে’ আলোচনার মধ্য দিয়েই দক্ষিণবঙ্গের রূপরেখা স্পষ্ট হয়েছে। জেলা ভিত্তিতে আসন বণ্টনের বিষয়ে কথাবার্তা হচ্ছে। বাম-কংগ্রেস যে ফর্মুলা মেনে হাত মিলিয়েছে, তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই জোটে সামিল হয়েছে আইএসএফ। কংগ্রেসের দাবি, খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে আলোচনা চলছে। তাই কিছুটা দেরি হচ্ছে। সেজন্য জোট ভেস্তে যাওয়ার প্রশ্ন উঠছে না। তিন দলেরই আশা, আগামী কয়েকদিনের মধ্যে জোটের চূড়ান্ত রূপরেখা তৈরি হয়ে যাবে। তারপর তিন দলের নেতারা একসঙ্গে বিষয়টি স্পষ্ট করে দেবেন।