ডায়মন্ড হারবারের বিধায়ক দীপক হালদারের পর এবার মালদহের দুলাল সরকার। বিধানসভা ভোটের মুখে 'বেসুরো' মালদহ জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের আহ্বায়ক দুলাল সরকার। দলেরই একাংশের বিরুদ্ধে তাঁকে চেপে রাখার অভিযোগে সরব হলেন তিনি। ঝরে পড়ল বিস্তর আক্ষেপ। তিনি বলেন, ‘দল সেকেন্ড ম্যান করে রেখেছে, সেনাপতি করেনি। যোগ্য মনে করেনি বলে চেয়ারম্যান করেনি। যোগ্য মনে করেনি বলে সভাপতি করেনি। কিছু লোক হিংসা করে। যখন মালদহের সব নেতা তৃণমূল কংগ্রেস ছেড়েছিল, তখন আমি আমার স্ত্রী ও কয়েকজন অনুগামী ছাড়া সবাই কংগ্রেসে গিয়েছিল। সেই সময় আমায় গুলি খেতে হয়েছিল। অনুশোচনা হয়।’
জানা গিয়েছে, ১৯৯৮ সালে তৃণমূল কংগ্রেসের জন্মলগ্ন থেকে ঘাসফুল শিবিরের সঙ্গে যুক্ত পাঁচবারের কাউন্সিলর। তৃণমূল কংগ্রেস পরিচালিত ইংরেজবাজার পুরসভায় চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানের দায়িত্ব সামলেছেন। ২০০৬ এবং ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে মালদা জেলায় তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী ছিলেন। জেলা তৃণমূল সভাপতি, তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি, যুব তৃণমূল সভাপতির মতো একাধিক গুরুত্বপূর্ণে পদে দায়িত্ব সামলেছেন। কিন্তু তিনি নাকি শুভেন্দু অধিকারীর অনুগামী। তাই এই 'বেসুরো' গেয়ে দলবদল করতে চাইছেন বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।
আর দুলাল সরকারের দাবি, 'দল মনে করেছে এর চেয়ে বেশি যোগ্যতা আমার নেই। তাই এমন করে রেখেছে। বামন হয়ে চাঁদে হাত দিতে চাইনি। মালদহের নেতারা মেরেছেন, অপমান করেছেন, আমার বিরুদ্ধে অনেক কিছু করেছেন। তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমায় জায়গা দিয়ে রেখেছেন। কিন্তু আর কোনও নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করব না।'
এই বিষয়ে অবশ্য মালদা তৃণমূল কংগ্রেস চেয়ারম্যান কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী বলেন, ‘বিষয়টা সুব্রত বক্সি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দেখবেন। উনি মর্যাদা পেয়েছেন। মর্যাদা পাননি একথা ভুল।’ সূত্রের খবর, ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটে পরাজয়ের জন্য দলেরই একাংশের অন্তর্ঘাতকে দায়ী করেছিলেন দুলাল সরকার।
২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের আগে কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেন মৌসম বেনজির নূর। মালদহ উত্তর লোকসভা আসনে হেরে যাওয়ার পর জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি হন মৌসম। এক সময় জেলা সভাপতির দায়িত্ব সামলানো দুলাল সরকারকে করা হয় দলের জেলা আহ্বায়ক। গত পুরভোটে টিকিটে জয়ী হওয়ার পর ইংরেজবাজার পুরসভার চেয়ারম্যান হয়েছিলেন দুলাল সরকার। কিন্তু এক মাসের মধ্যে তাঁকে সরিয়ে চেয়ারম্যান পদে বসানো হয় নীহার ঘোষকে। বাম–কংগ্রেস জোট সমর্থিত নির্দল প্রার্থী নীহার ঘোষ তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেওয়ার পরই ইংরেজবাজার পুরসভার চেয়ারম্যান পদে বসেন।
সুতরাং আদি তৃণমূল কংগ্রেস নেতার ক্ষোভ বেরোতেই স্বাগত বার্তা এসেছে বিজেপি শিবির থেকে। জেলা বিজেপির সহ–সভাপতি অজয় গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘যাঁরা দুর্দিনে দল তৈরি করেছিলেন, তাঁরাই এখন তৃণমূল কংগ্রেসে অক্সিজেন নিতে পারছেন না। তাঁদেরকে আমরা বিজেপিতে স্বাগত জানাচ্ছি।’ বিধানসভা নির্বাচনের মুখে তৃণমূলের ব্লক কমিটি, অঞ্চল কমিটি গঠন নিয়ে একাধিক গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের অভিযোগ উঠেছে মালদহে। যার জন্য কলকাতায় নেতৃত্বকে ডেকে বৈঠক করেছিল অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু তারপর দুলাল সরকারের বিক্ষোভ শাসক শিবিরে অসন্তোষে নতুন মাত্রা যোগ করল বলে মনে করা হচ্ছে।