'অত্যন্ত উস্কানিমূলক এবং প্ররোচনামূলক' ভাষণ দিয়েছেন। সেজন্য চব্বিশ ঘণ্টার জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রচারে নিষেধাজ্ঞা চাপাল নির্বাচন কমিশন। তার ফলে সোমবার রাত আটটা থেকে আগামিকাল আটটা পর্যন্ত প্রচার করতে পারবেন না তৃণমূল কংগ্রেস সুপ্রিমো। যিনি সেই ‘অগণতান্ত্রিক এবং অসাংবিধানিক’ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আগামিকাল বেলা ১২ টা থেকে গান্ধীমূর্তির পাদদেশে ধরনায় বসতে চলেছেন।
সেই নিষেধাজ্ঞার ফলে পঞ্চম দফার ভোটের আগে ধাক্কা খেল তৃণমূল। মঙ্গলবার বারাসত, বিধাননগর, হরিণঘাটা ও কৃষ্ণগঞ্জে সভা করার কথা ছিল মমতার। কিন্তু কমিশনের নিষেধাজ্ঞার পর সেই সভা করতে পারবেন না তিনি। রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, মমতার প্রচারের নিষোধজ্ঞা উঠবে মঙ্গলবার রাত আটটার পর। আর প্রচারের সময়সীমা এগিয়ে আনায় পঞ্চম দফায় প্রার্থীদের প্রচার শেষ করতে হবে বুধবার (১৪ এপ্রিল) সন্ধ্যা ৬ টা ৩০ মিনিটের মধ্যে। তার ফলে পঞ্চম দফার আগে হাতে বেশি সময় পাবেন না মমতা।
তবে মমতার প্রচারে নিষেধাজ্ঞায় তৃণমূল ধাক্কা খাবে বলে স্বীকার করেনি তৃণমূল। বরং পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলেছে ঘাসফুল শিবির। তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষের অভিযোগ, ‘স্বেচ্ছাচারী, হিটলারি কায়দায়’ ভোট করতে চাইছে নির্বাচন কমিশন। বুলেটের ডগায় রেখে ভোট করানো হচ্ছে। মমতা সেই কাজের প্রতিবাদ করায় বিজেপির রাজনীতি দিয়ে তাঁকে থামানোর চেষ্টা করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশন বিজেপির শাখা সংগঠনে পরিণত হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন। তাঁর বিশ্বাস, বাংলার মানুষ ভোটের মাধ্যমে এই কাজের জবাব দেবেন।
কমিশনের তরফে অবশ্য কড়া ভাষায় জানানো হয়েছে, আদর্শ আচরণবিধি লঙ্ঘনের পাশাপাশি জনপ্রতিনিধিত্ব আইনের ১২৩ (৩) ও ৩ (এ) ধারা এবং ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৮৬, ১৮৯ এবং ৫০৫ ধারা ভঙ্গ করেছেন মমতা। নির্দেশিকায় জানানো হয়েছে, গত ৭ এপ্রিল সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্ক ভাগ না করার জন্য মমতা যে আর্জি জানিয়েছিলেন, তাতে নোটিশ জারি করা হয়েছিল। দু'দিন পর তিনি যে উত্তর দিয়েছিলেন, তা সন্তোষজনক ছিল না। বরং বেছে বেছে, আংশিকভাবে উত্তর দিয়েছিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো। সেইসঙ্গে চিঠিতে কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিরুদ্ধেও একপ্রস্থ অভিযোগ তুলেছিলেন। তা নিয়েও যে নোটিশ পাঠানো হয়েছিল, তাতেও একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এড়িয়ে যান মমতা।
কিন্তু কী বলেছিলেন মমতা? গত ৩ এপ্রিল তারকেশ্বরের সভায় নাম না করে ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্টের (আইএসএফ) আব্বাস সিদ্দিকিকে আক্রমণ শানিয়েছিলেন। ‘শয়তান ছেলে’ হিসেবে উল্লেখ করে মমতা বলেছিলেন, ‘হাতজোড় করে বলছি যে সংখ্যালঘু ভোট ভাগ হতে দেবেন না। মনে রাখবেন, বিজেপি এলে সমূহ বিপদ আছে। সবচেয়ে বেশি (বিপদ) আপনাদের।’ সেই মন্তব্যের পর কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিরুদ্ধেও তোপ দেগেছিলেন মমতা। যিনি প্রথম থেকেই কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে সরব হয়েছিলেন। তারইমধ্যে ৭ এপ্রিল কোচবিহারের জনসভা থেকে মমতা বলেছিলেন, ‘যদি কেন্দ্রীয় বাহিনী বিশৃঙ্খলা তৈরি করে, তাহলে একদল মহিলা তাদের ঘেরাও করে রাখবেন। আর অপর দল ভোট দিতে যাবেন। শুধু ঘেরাও করে রাখলে হবে না। আপনাদের ভোট নষ্ট করবেন না।’
কমিশন জানিয়েছে, মমতা যে মন্তব্য করেছেন, তা অত্যন্ত উস্কানিমূলক এবং প্ররোচনামূলক। তার জেরে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির গুরুতর অবনতি হতে পারত। যা নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। সেই মন্তব্যের নিন্দার করার পাশাপাশি কড়া ভাষায় সতর্ক করা হয়েছে মমতাকে। সেই সঙ্গে আদর্শ আচরণবিধি কার্যকর থাকার সময় এইরকম মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকার 'পরামর্শ' দিয়েছে কমিশন।