ঘণ্টাছয়েক পরে কিছুটা কাটল উদ্বেগ। এসএসকেএম হাসপাতাল সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাঁ-পায়ের গোড়ালি ফুলে গিয়েছে। তবে অসম্ভব যন্ত্রণার কারণে হাড় ভেঙে গিয়েছে বলে যে আশঙ্কা করা হয়েছিল, তেমন কিছু হয়নি। শরীরের একাধিক জায়গায় অবশ্য চোট আছে।
রাত সাড়ে আটটা নাগাদ এসএসকেএমে নিয়ে আসার পর মমতার এক্স-রে এবং সিটি স্ক্যান করা হয়েছে। ঘণ্টা আড়াই পরে এমআইআর, স্নায়ু সংক্রান্ত -সহ একাধিক পরীক্ষার জন্য তাঁকে বাঙুর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। মধ্যরাতের পর আবারও এসএসকেএমে ফিরে আসেন মমতা। এসএসকেএম সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার রাতে সেখানেই থাকবেন। মমতার কোমরের নীচের অংশে চোট রয়েছে। তাঁর বাঁ পায়ের পেশিতে চোট লেগেছে। চোট লাগা অংশে তীব্র ব্যথা রয়েছে বলেও চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। তাঁকে ইতিমধ্যেই ব্যথা উপশমের ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়েছে। তবে এমআরআই রিপোর্ট হাতে এলে চোটের মাত্রা পুরোপুরি বোঝা যাবে।
অথচ দিনের শুরুটা একেবারেই সেভাবে হয়নি মমতার। বুধবার বেলা থেকে ঠাসা কর্মসূচির পর নন্দীগ্রামের তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দেন তৃণমূল সুপ্রিমো। তারপর নন্দীগ্রামের একাধিক মন্দিরে যান। বিকেলের দিকে রানিবাঁধের একটি মন্দিরে হরিনাম এবং সংকীর্তন শুনতে যান। সেখান থেকে রেয়াপাড়ায় নিজের অস্থায়ী ডেরায় দিকে রওনা দেন। আর সেই সময় চোট পান মমতা। প্রাথমিকভাবে একটি মহল থেকে জানানো হয়, মমতা যখন মন্দির থেকে বেরোচ্ছিলেন, তখন ভিড়ের মধ্যে থেকে ধাক্কা দেওয়া হয়। তার জেরে মুখ থুবড়ে পড়ে যান। বাঁ-পায়ে আঘাত লাগে তাঁর। মাথায় এবং কপালেও চোট লাগে। নিরাপত্তারক্ষীরা তাঁকে কোনওক্রমে গাড়িতে নিয়ে যান। তারপর রেয়াপাড়ার কাছে ভাড়াবাড়ির দিকে রওনা দেয় মমতার কনভয়। কিন্তু বরুলিয়া বাজারের কাছে থেমে যায় গাড়ি। পায়ে যন্ত্রণা হওয়ায় তাঁর জন্য পাশের একটি দোকান থেকে বরফ নিয়ে আসা হয়। তাঁর পায়ে কাপড় বেঁধে দেওয়া হয়। যন্ত্রণা বাড়তে থাকায় তাঁকে পাঁজাকোলা করে গাড়ির পিছনের আসনে নিয়ে যাওয়া হয়। সেই অবস্থায় বাড়ির দিকে এগিয়ে যায় মমতার কনভয়। কিন্তু যন্ত্রণা আরও বাড়তে থাকায় চিকিৎসদের পরামর্শে কলকাতায় ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নেন মমতা। নাহলে বুধবার তাঁর নন্দীগ্রামেই থাকার কথা ছিল।
যদিও পরে মমতা নিজে বলেন, ‘আমি গাড়ির কাছে দাঁড়িয়ে নমস্কার করছিলাম। তখন চার-পাঁচজন লোক আচমকা দরজা বন্ধ করে দেয়। পায়ে পুরো আটকে গিয়েছিল। পা পুরো ফুলে গিয়েছে। অনেক মানুষ ছিলেন। কিন্তু তাঁরা করেননি। এটা চক্রান্ত তো বটেই। চক্রান্ত তো বটেই। পুলিশ সুপার ছিলেন না। সারাদিন অনুষ্ঠান করলাম। আমার বুকে ব্যথা হচ্ছে।’
সেই পরিস্থিতিতে দু'ঘণ্টা ২০ মিনিটের মতো সময় নন্দীগ্রাম থেকে এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। সূত্রের খবর, তাঁর চিকিৎসায় সাত সদস্যের একটি মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। তাতে হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগের বিশেষজ্ঞরা আছেন।