নিমতায় তৃণমূলের হামলায় নিহত বিজেপি কর্মীর বৃদ্ধা মায়ের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় দফার ভোটগ্রহণ চলাকালীন দক্ষিণ ২৪ পরগনার জয়নগরে ভোটপ্রচারে এসে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘শোভাজির (নিহত বৃদ্ধার নাম) মুখ আমি ভুলতে পারছি না।’
এদিন বক্তব্যের শুরুতেই প্রয়াত শোভা মজুমদারকে শ্রদ্ধা জানান মোদী। বলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলের হাতে নির্যাতিত মা – বোনেদের নাম শোভা মজুমদার। আমি ওনার মুখটা ভুলতে পারছি না।’
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণ করেন মোদী। তাঁর বক্তব্য রাখার ভাষাকে সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘যে দিদি এতদিন গালি দিচ্ছিলেন তিনি এখন বলছেন কুল কুল। কিন্তু বাংলার মানুষের জন্য তৃণমূল কুল নয়, শূল। বাংলাকে অসহ্য যন্ত্রণা দিয়েছে তৃণমূল নামের এই শূল।’
ঝাঁঝ বাড়িয়ে মোদী বলেন, ‘দিদি, আপনাকে বাংলার ভাই-বোনেদের হত্যার হিসাব দিতে হবে। সন্তানকে হত্যার হিসাব মায়েদের দিতে হবে। রক্তের খেলা চলবে না।’
মোদী বলেন, ‘দিদির হাবভাব দেখেই কী হতে চলেছে তা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। প্রথমে হাওয়া বুঝে উনি ভবানীপুর থেকে নন্দীগ্রামে চলে এলেন। নন্দীগ্রামে সুবিধা হবে না বুঝে সেখানকার মানুষকে অপমান করতে শুরু করলেন। প্রথম দফার ভোটগ্রহণের পর উনি আরও উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছেন। গতকালই দেশের বহু নেতাকে বার্তা পাঠিয়ে সাহায্যের আবেদন জানিয়েছেন দিদি। বহিরাগত ওই সব নেতাকে উনি দেখা করার সময় পর্যন্ত দিতেন না। এখন বিপদে পড়ে তাদের সাহায্য চাইছেন। ১০ বছর মানুষের কাজ করলে কি এসব করতে হতো?’
এর পরই হিন্দুত্বের লাইনে চলে আসেন মোদী। বলেন, ‘এতদিন দিদি জয় শ্রীরাম ধ্বনী সহ্য করতে পারতেন না। এখন তো গেরুয়া পোশাক, তিলকও সহ্য করতে পারছেন না। এমনকী দিদির লোকেরা টিকি দেখলেও ক্ষেপে যাচ্ছেন।’
মমতাকে মোদীর পরামর্শ, ‘ভোটের জন্য আপনার যদি কাউকে তোষণ করতে হয় তো করুন। সেটা আপনার ব্যাপর। আমাকে গালি দিতে ইচ্ছা করলে দিন। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মানুষের আস্থাকে, রামকৃষ্ণ পরমহংস, স্বামী বিবেকানন্দ, চৈতন্য মহাপ্রভুকে আমি গালি দিতে দেব না।’
হিন্দিভাষীদের নিয়ে তৃণমূলনেত্রীর অবস্থানে তাঁকে তাঁর সাংবিধানিক দায়িত্ব স্মরণ করান মোদী। বলেন, ‘দিদি যে ভাবে বিহার, উত্তর প্রদেশের বাসিন্দাদের বিরুদ্ধে শত্রুর মতো ভাষা ব্যবহার করছেন তা ওনার রাজনৈতিক বোধকে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করায়। দিদি আপনার মনে রাখা উচিত, মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে আপনি সংবিধানের শপথ নিয়েছেন। ভারতের সংবিধান আপনাকে এই অনুমতি দেয় না’।
তাঁর বাংলাদেশ সফরে ওড়াকান্দি যাওয়া নিয়ে মমতার আপত্তিকেও কটাক্ষ করেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘আমি ভেবে পাই না দিদির কী হয়েছে। কয়েকদিন আগে আমি বাংলাদেশে গিয়েছিলাম। সেখানে আমি ৫১ শক্তিপীঠের অন্যতম যশোরেশ্বরী কালী মন্দিরে পুজো দিতে গিয়েছিলাম। দিদি তাতে রেগে গেলেন। আমি কি অপরাধ করেছি? তার পর ওড়াকান্দিতে হরিচাঁদ – গুরুচাঁদের জন্মভূমিতে গিয়ে দেশের মানুষের জন্য প্রার্থনা করা অপরাধ না কি? দিদি আপনি আমাকে চেনেন না। আমি মরশুমি শ্রদ্ধা জানানোর লোক নই’।