গত লোকসভা নির্বাচনে আরামবাগ লোকসভা আসনে কোনওক্রমে মান বাঁচিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। কিন্তু পুরশুড়া বিধানসভা আসনে প্রায় ২৬,০০০ ভোটে পিছিয়ে ছিল। সোমবার তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে জর্জরিত হুগলি জেলার এই পুরশুড়ায় সেকেন্দারপুর বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন ময়দানে সভা মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের। বিস্তীর্ণ চাষজমির মধ্যে বিরাট এলাকা নিয়ে সভাস্থল এবং হেলিপ্যাড বানানোকে ঘিরে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। চাষিদের একাংশ জমি নষ্ট হওয়ার অভিযোগ তুলেছেন। জেলা তৃণমূল কংগ্রেস নেতৃত্বের দাবি, চাষিদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে। তাঁরা স্বেচ্ছায় জমি ছেড়ে দিয়েছেন।
গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে জর্জরিত হুগলি জেলার এই পুরশুড়া। তার উপর প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক পদ্মশিবিরে নাম লিখিয়েছেন। তার মধ্যেই সভা থেকে কী বার্তা দেবেন তৃণমূলনেত্রী সেদিকেই তাকিয়ে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা। যে জমিতে সভা হবে, সেখানে চাষিদের একটা অংশ বোরো চাষের বীজতলা তৈরি করেছিলেন। অনেক চাষি আলুও বসিয়েছিলেন। তাঁদের অভিযোগ, তৃণমূল নেতাদের চাপে বোরো চাষের বীজতলা ছেড়ে দিতে হয়েছে। জমির আলুও অপরিণত অবস্থায় তুলে নিতে হয়েছে।
এক বোরো চাষি ক্ষোভের সঙ্গে জানান, ‘আমার বীজতলার উপর হেলিপ্যাড হয়েছে। ৫৩ শতক বীজতলার জন্য নেতারা ২,০০০ টাকা দিয়েছেন। ওই বীজ থেকে দেড় বিঘা জমিতে বোরো চাষ করি। বিঘাপিছু ধান ফলে ১২ কুইন্টাল করে। এক কুইন্টাল ধান বিক্রি করে ১,৪০০ টাকা পাই। জমিটারও দফারফা হয়ে গেল।’ এদিকে, পুরশুড়ায় মুখ্যমন্ত্রীর সভায় থাকছেন না বেসুরো বিধায়ক প্রবীর ঘোষাল। তাঁর অভিযোগ, আজকের সভায় তাঁকে কোনও আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। এমনকী আজকে তৃণমূলনেত্রীর জনসভার প্রস্তুতি বৈঠকেও তাঁকে ডাকা হয়নি। তাই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জনসভায় তিনি থাকছেন না বলে স্পষ্ট জানালেন উত্তরপাড়ার বিধায়ক।
অন্যদিকে সিপিআইএমের পুরশুড়া এরিয়া কমিটির সম্পাদক ফারুক আহমেদ লস্কর বলেন, ‘তৃণমূল কংগ্রেস নিজেদের কৃষকদরদী হিসেবে তুলে ধরে। এখানে কয়েকজনকে সামান্য ক্ষতিপূরণ দিয়ে জোর করে জমি নেওয়া হয়েছে।’ তৃণমূলের জেলা সভাপতি দিলীপ যাদবের দাবি, ‘আমাদের নেত্রী কোনওদিন মানুষের কোনও অসুবিধা করেননি। আজও করছেন না।’ উল্লেখ্য, ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে হুগলিতে খারাপ ফলের পর তপন দাশগুপ্তকে সরিয়ে উত্তরপাড়া পুরসভার চেয়ারম্যান দিলীপ যাদবকে জেলা সভাপতি করে দল। তারপর থেকেই সংগঠনের কাজ নিয়ে মুখ খোলেন প্রবীর ঘোষাল, বেচারাম মান্না, অপরূপা পোদ্দাররা।