নন্দীগ্রামে 'গুরুতর' চোট পেলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর বাঁ পা, কপালে চোট লেগেছে বলে প্রাথমিকভাবে জানানো হয়েছে। মমতা অভিযোগ করেন, চার-পাঁচজন চক্রান্ত করে ধাক্কা মেরেছে। গ্রিন করিডর করে তাঁকে কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। তারপর স্ট্রেচারে করে তাঁকে হাসপাতালের ভিতরে নিয়ে যাওয়া হয়। তাঁর জন্য পাঁচ সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। সেই ঘটনায় জেলা প্রশাসনের কাছে রিপোর্ট তলব করেছে নির্বাচন কমিশন।
বুধবার মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর নন্দীগ্রামে এসে একাধিক মন্দিরে যান মমতা। বিকেলের দিকে রানিবাঁধের একটি মন্দিরে হরিনাম এবং সংকীর্তন শুনতে যান। একটি মহল থেকে জানানো হয়েছে, তিনি যখন মন্দির থেকে বেরোচ্ছিলেন, তখন ভিড়ের মধ্যে থেকে ধাক্কা দেওয়া হয়। তার জেরে মমতা মুখ থুবড়ে পড়ে যান। বাঁ-পায়ে আঘাত লাগে তাঁর। মাথায় এবং কপালেও চোট লাগে। নিরাপত্তারক্ষীরা তাঁকে কোনওক্রমে গাড়িতে নিয়ে যান। তারপর রেয়াপাড়ার কাছে ভাড়াবাড়ির দিকে রওনা দেয় মমতার কনভয়। কিন্তু বরুলিয়া বাজারের কাছে থেমে যায় গাড়ি। পায়ে যন্ত্রণা হওয়ায় তাঁর জন্য পাশের একটি দোকান থেকে বরফ নিয়ে আসা হয়। তাঁর পায়ে কাপড় বেঁধে দেওয়া হয়। যন্ত্রণা বাড়তে থাকায় তাঁকে পাঁজাকোলা করে গাড়ির পিছনের আসনে নিয়ে যাওয়া হয়। সেই অবস্থায় বাড়ির দিকে এগিয়ে যায় মমতার কনভয়। কিন্তু যন্ত্রণা আরও বাড়তে থাকায় চিকিৎসদের পরামর্শে কলকাতায় ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নেন মমতা। নাহলে বুধবার তাঁর নন্দীগ্রামেই থাকার কথা ছিল।
যদিও সাংবাদিকদের মমতা বলেন, ‘আমি গাড়ির কাছে দাঁড়িয়ে নমস্কার করছিলাম। তখন চার-পাঁচজন লোক আচমকা দরজা বন্ধ করে দেয়। পায়ে পুরো আটকে গিয়েছিল। পা পুরো ফুলে গিয়েছে। অনেক মানুষ ছিলেন। কিন্তু তাঁরা করেননি। এটা চক্রান্ত তো বটেই। চক্রান্ত তো বটেই। পুলিশ সুপার ছিলেন না। সারাদিন অনুষ্ঠান করলাম। আমার বুকে ব্যথা হচ্ছে।’
বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘তাঁর দ্রুত আরোগ্য কামনা করি। তিনি যে অভিযোগ করেছেন, তা অত্যন্ত গুরুতর অভিযোগ। উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করে তদন্ত করা উচিত।’ যদিও বিজেপির সাংসদ অর্জুন সিং কটাক্ষ করেন, মুখ্যমন্ত্রী তো রাজ্যের পুলিশমন্ত্রী। তিনি যেখানে যান, তার দু'কিলোমিটার আগে থেকেই গাড়ি আটকে দেওয়া হয়। যদি কেউ ধাক্কা মেরে থাকেন, তাহলে তাঁর ফাঁসি হওয়া উচিত। সঙ্গে তিনি অভিযোগ করেন, মমতা আগেও মিথ্যা কথা বলেছেন। এখন হারবেন জেনে মিথ্যা কথা বলে সহানুভূতি নেওয়ার জন্য নাটক করছেন। একই সুরে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী দাবি করেন, রাজনৈতিক ভাবাবেগের জন্য রাজনৈতিক ‘ভণ্ডামি’ করছেন মমতা।
যদিও মমতার অভিযোগের পর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে বড়সড় প্রশ্নচিহ্ন উঠে গিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে জেড প্লাস ক্যাটেগরির নিরাপত্তা পান মমতা। তা সত্ত্বেও কীভাবে তাঁর নিরাপত্তা বলয় ভেদ করে কয়েকজন ঢুকে পড়লেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। কলকাতার প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার বলেন, 'এটা বড়সড় অভিযোগ। একজন মুখ্যমন্ত্রীর কাছে এত লোকজন কীভাবে আসতে পারেন? জেলা পুলিশ কী করছিল? জেলা পুলিশের তো মুখ্যমন্ত্রীর জন্য নির্দিষ্ট সুরক্ষা পরিকল্পনা থাকে। তারপরও কীভাবে হল?' সূত্রের খবর, সেই ঘটনার ইতিমধ্যে পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিশ সুপারের সঙ্গে কথা বলেছেন রাজ্য পুলিশের ডিজি নীরজনয়ন। তাঁর থেকে ঘটনার পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট চেয়েছেন বলে সূত্রের খবর।