বিজেপির প্রথম স্লোগান ছিল, উনিশে হাফ, একুশে সাফ। এরপর একুশের লড়াই শুরু হতেই বিজেপি স্লোগান তোলে, আব কি বার ২০০ পার। তবে বিজেপি ১০০ পার করতে পারেনি। এবং হার নিশ্চিত হতেই কাঁটাছেড়া শুরু করল বিজেপি। অমিত শাহরে ভবিষ্যদ্বাণী না মেলার কারণ হিসেবে অনেক ফ্যাক্টর। তার মধ্যে অন্যতম হল মুর্শিদাবাদ-মালদায় কংগ্রেসের ভরাডুবি। পাশাপাশি সার্বিক ভাবে বামেদের ভরাডুবি তৃণমূলকে সাহায্য করেছে।
মুর্শিদাবাদে কংগ্রেসকে নিশ্চিহ্ন করে দিয়ে তৃণমূল ঘাসফুল ফুটিয়েছে। এমনকী অধীর রঞ্জন চৌধুরীর খাসতালুক বহরমপুরেও ব্যাপক ব্যবধানে ছিলেন তিনবারের বিধায়ক মনোজ চক্রবর্তী। এই পরিস্থিতিতে উত্তরের একাধিক মুসলিম অধ্যুষিত আসনে তৃণমূলের জয়জয়কার বিজেপির অঙ্ক মিলতে দেয়নি। ভোট কাটাকাটির যেই সমীকরণে বিজেপি বাংলা জয়ের ছক কষেছিল, সেই ছক বানচাল হয়ে যায় মমতার 'আবেদনে।'
পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির এই খারাপ ফল নিয়ে কৈলাশ বিজয়বর্গীয়র সঙ্গে ইতিমধ্যেই ফোনে কথা বলেছেন অমিত শাহ। অমিত শাহ কৈলাশের কাছ থেকে ফলাফল নিয়ে তথ্য নিয়েছেন। তবে পুরো ফল আসার পর বিস্তারিত আলোচনা হবে।
এদিকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে বিজেপি কোনও 'মুখ' দাঁড় করাতে পারেনি। যা তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা কমিয়ে থাকতে পারে। মমতার প্রশাসন মানুষ দেখেছে। তবে বিজেপি জিতলে মসনদে কে বসবে, তা ছিল অজানা। এবং সেই অজানার 'ফাঁদে' হয়ত পা দিতে চায়নি বাংলার ভোটাররা।
এদিকে মহিলা এবং মুসলিম ভোটাররা একটি বড় ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়িয়েছিল এই ভোটে। নির্বাচনের আগে স্বাস্থ্য সাথী কারড সহ একাধিক জনমুখী প্রকল্প এবং সেগুলি মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে 'দুয়ারে সরকার' তৃণমূলকে অনেকটা সাহায্য করেছে বলে মত বিশঅলেষকদের।
এদিকে বিজেপির গড় হিসেবে চিহ্নিত হওয়া জঙ্গলমহলে জমি ফিরে পেয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। ঝাড়গ্রাম জেলার ৪টি আসনের ৪টিতেই জেতে তৃণমূল। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের নিরিখে এসব আসনে পিছিয়ে ছিল তৃণমূল। তবে ঝাড়খণ্ডের নির্বাচনে বিজেপির হার এবং হেমন্ত সোরেন ফ্যাক্টর এখানে তৃণমূলকে সাহায্য করেছে।
অপরদিকে দল ভাঙিয়ে যেসকল তৃণমূল নেতাদের গেরুয়া শিবির টিকিট দিয়েছিল, তাদের অধিকাংশই হেরে গিয়েছেন। যার জেরে বিজেপির দল ভাঙানোর ছক নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এবং তৃণমূলের 'গদ্দার' ডাকে সাড়া দিয়ে ভোটাররা ভরসা রেখেছেন তৃণমূল কংগ্রেসের উপরই।
এবং শেষ পর্যন্ত মমতা ফ্যাক্টর তৃণমূলের 'ইউএসপি' হয়ে দাঁড়ায়। মমতা নিজে নন্দীগ্রামে অল্প ব্যবধানে হেরেও দলকে জিতিয়েছেন। মূলত মমতার ব্যক্তিগত ক্যারিশ্মাকে কাজে লাগিয়েই টানা তৃতীয়বার রাজ্যে ঘাসফুল ফোটাল তৃণমূল কংগ্রেস। এছাড়া করোনার বাড়বাড়ন্তের মাঝে শহুরে ভোটারদের মধ্যে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের বিরোধী মনোভাব তৈরি হয়েছিল। যার জেরে তৃণমূল ফের একবার ২০০ পার!