তৃণমূল কংগ্রেস থেকে একের পর এক হেভিওয়েট নেতা চলে এসেছে বিজেপি অন্দরে। আর তাতেই কি কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন মুকুল রায়? বিধানসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে এই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে রাজ্য–রাজনীতিতে। কারণ বিজেপির সর্বভারতীয় সহ–সভাপতি হয়েও তাঁর কথা, ‘এখন জায়গা ছেড়ে দেওয়ার পালা শুরু হয়েছে। আমি জায়গা ছেড়ে দিচ্ছি। জায়গা ছাড়াটাও একটা আর্ট। এটাও শিখতে হয়।’ কাকে জায়গা ছাড়ছেন মুকুল রায়? কেনই বা তাঁকে জায়গা ছাড়তে হচ্ছে? কী এমন হল, যে বিধানসভা নির্বাচনের আগে তাঁকে এই কথা বলতে হচ্ছে? উঠছে প্রশ্ন।
সম্প্রতি কালনায় দলীয় সভায় বক্তৃতা করেন মুকুল রায়। সেখানে অপর বক্তা ছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। ওই সভাতেই মুকুলবাবুর বক্তব্য নিয়ে দলের অন্দরে জোর চর্চা শুরু হয়েছে। বিধানসভা নির্বাচনের ঠিক আগের মুহূর্তে মুকুলবাবুর তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য, ‘পরীক্ষাটা একশোয় দেব। যদি ৩০ বাদই দিয়ে দাও, তা হলে ৭০–তে ৫১ পেতে হবে।’
অনেকেই অঙ্কটা ধরতে পারেননি প্রথমে। পরে বোঝা যায়, রাজ্যে সংখ্যালঘু ভোট ৩০ শতাংশের মতো। আর সেটা তৃণমূল কংগ্রেসেরই ঘরে যাবে বলতে চেয়েছেন বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা। মুকুল বলেন, ‘আমি কট্টর হিন্দু। তবে সবাইকে সম্মান করি।’ অর্থাৎ নানা সমীকরণ মিলিয়ে তিনি দেখেছেন ভরসা রাখতে হবে হিন্দু ভোটের উপরই। ভাঙানো যাবে না সংখ্যালঘু ভোট। তাই এই মন্তব্য বলে মনে করা হচ্ছে।
এদিকে পূর্ব বর্ধমানের একাধিক বিজেপি নেতার নাম করে মুকুল বলেন, ‘আমি জায়গা ছেড়ে দিচ্ছি। যাতে এঁরা মানুষের কাছে যেতে পারেন। আমার একটি পুত্র আছে। সে দু’বারের বিধায়ক। আমি যদি এখন বলি, আমিই রাজনীতি করব, তা হলে ওদের কী হবে?’ অর্থাৎ তিনি বোঝাতে চেয়েছেন এবার ছেলেকে জায়গা করে দিয়ে নিজে সরে যাবেন। সুতরাং এখানেও তিনি পরিবারতন্ত্রই নিয়ে আসতে চান বলে বিরোধীদের দাবি।
লোকসভা নির্বাচনে ১৮টি আসন ঘরে তুলে ক্যারিশ্মা দেখিয়ে ছিলেন তিনি। কিন্তু বিধানসভা নির্বাচনের আগে শুভেন্দু অধিকারী, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো মন্ত্রী থেকে সাংসদ, বিধায়ক–সহ বিভিন্ন স্তরের তৃণমূল কংগ্রেস নেতারা বিজেপিতে যোগ দিচ্ছেন। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের ব্যবস্থাপনায় বিশেষ বিমানে দিল্লি গিয়ে রাজীবের যোগদান এই পর্বে নতুন মাত্রা আনে। দিল্লি থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী উড়ে এসে শুভেন্দুকে বলেন, ‘ভালো কাজ করছ’। তখন থেকেই মুকুল রায়কে কোণে সরে যেতে হচ্ছে বলে একাংশের দাবি।
সূত্রের খবর, তৃণমূল কংগ্রেস ভাঙিয়ে দল ভারী করার যে প্রবণতা বিজেপিতে দেখা যাচ্ছে এবং তৃণমূল কংগ্রেস থেকে আসা লোকজনেরা যেভাবে ‘গুরুত্ব’ পাচ্ছেন, তা নিয়ে পদ্ম–শিবিরে ক্ষোভ চাপা নেই। তৃণমূল কংগ্রেস থেকে বিজেপিতে গিয়ে মুকুলবাবু সেখানে যে স্থান পেয়েছিলেন, তার তুলনায় আড়ালে চলে যাচ্ছেন বলে অনেকের ধারণা। সেটা কি শুভেন্দু–রাজীবদের উত্থানের জন্য? উঠছে প্রশ্ন।
অন্যদিকে অমিত শাহও গত কয়েকদিন বারবার রাজীবের সঙ্গে সরাসরি কথা বলেছেন। এমনকী তিনি যে ডুমুরজলার সভায় ভার্চুয়াল বক্তৃতা করবেন, সেই তথ্য প্রথম শোনা যায় রাজীবের মুখেই। তবে কি শুভেন্দু এবং রাজীব সম্পর্কেও আলাদা আলাদা ‘মূল্যায়ন’ করতে শুরু করেছে বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব? এই বিষয়ে কৈলাস বিজয়বর্গীয় বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য, রাজ্যে যে কোনওভাবে সরকার দখল করা। তবে এবার আমরা যোগদান বন্ধ করব।’