দীনেশ ত্রিবেদী কি বিশ্বাসঘাতক? তাঁর চলে যাওয়ায় কোনও প্রভাব কী পড়বে না দলে ও বিধানসভা নির্বাচনে? নির্বাচনের ঠিক প্রাক্কালে এই প্রশ্ন দুটিই প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠল। কারণ শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, দীনেশের দলত্যাগে কোনও প্রভাব ফেলতে পারবে না। কারণ সে অর্থে মোটেও দীনেশ ‘জননেতা’ নন। তাঁর সঙ্গে বিপুল লোকজন নেই বলেই রাজনৈতিক মহলের খবর। বরং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় লোকসভায় হেরে যাওয়ার পরেও দীনেশকে রাজ্যসভায় নিয়ে গিয়ে যে আস্থা দেখিয়েছিলেন, তার প্রতিদান দিতে পারলেন না।
তবে ঘটনা হল, বল যে ঘাসফুল পিচে টার্ন করবে, উইকেট দেখে তা বুঝেছিলেন পোড়খাওয়া মারাঠা রাজনীতিবিদ শরদ পাওয়ার। একদা তিনি ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ডের সভাপতি ছিলেন। তৃণমূল কংগ্রেসে থেকে দীনেশ যে খুশি নন, পাওয়ারকে ফোন করে তা বলেছিলেন দীনেশ। তাই উইকেট পতনের পরিস্থিতি আঁচ করেই পাওয়ার ফোন করেছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের প্রবীণ সাংসদ সৌগত রায়কে। এখন প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কেন আটকানো হল না দীনেশ ত্রিবেদীকে?
সূত্রের খবর, শরদ পাওয়ার এই কথা সৌগত রায়কে জানালেও মমতাকে জানাতে পারেননি। সেটা হয়ে ওঠেনি আর কী। কিন্তু সৌগত রায় এই ঘটনা ঘটতে পারে বলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জানিয়ে ছিলেন। তখন নেত্রী বিষয়টি নিয়ে পরে কথা বলবেন বলে জানিয়েছিলেন। তারপর আর কথা হয়নি। এদিকে দীনেশ ত্রিবেদী পদত্যাগ করতেই সৌগত রায় তাঁর প্রতিক্রিয়ায় বলেছিলেন, ‘দীনেশ পদত্যাগ করায় আমি দুঃখিত। উনি দলের বিভিন্ন বিষয়ে অখুশি ছিলেন ঠিকই। তবে দলের সঙ্গে ওঁর কোনও আলোচনা হয়নি।’ নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক তৃণমূল কংগ্রেসের সংসদীয় দলের এক সাংসদের কথায়, ‘সেদিন দিদির যদি হেলিকপ্টারে ওঠার তাড়া না থাকত, তা হলে সৌগতদার সঙ্গে তাঁর দীনেশ প্রসঙ্গে কথা হতে পারত।’
দলের অন্দরের খবর, তৃণমূল কংগ্রেস যাঁরা ছাড়তে চাইছেন, তাঁদের আর আটকানো হবে না বলেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে দলীয় স্তরে। তাই তৃণমূল সুপ্রিমো যেটুকু শুনেছিলেন সৌগত রায়ের কাছ থেকে তাতে তিনি ফোন করে দীনেশ ত্রিবেদীকে আটকাতে পারতেন। কিন্তু সিদ্ধান্তে অটল থেকেছেন তিনি। কারণ দীনেশ ত্রিবেদীকে আটকে দলের কোনও লাভ হত না। যেমন—তিনি আটকাননি শুভেন্দু অধিকারী, প্রবীর ঘোষাল, বৈশালী ডালমিয়া, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়কে। কারণ এরা প্রত্যেকেই মমতার জন্য রাজনীতির লাইমলাইটে এসেছিলেন। নিজেদের ক্যারিশ্মায় নয়। যেখানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বয়ং জননেত্রী। তাই তিনি বলছেন, ‘আমি আজও স্ট্রিট ফাইটার। আমায় চমকে লাভ নেই। আসুন ব্রিগেডে একটা খেলা হয়ে যাক। সেখানে আমি গোলকিপার থাকব। দেখি কটা গোল দিতে পারেন ও কে জেতে?’ আসলে এবারও দিদির ক্যারিশ্মাতেই ভোট হবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।