
রাজনীতির ম্যাচ ফিক্সিং করছে বাম-কংগ্রেস-তৃণমূল, বামেদের ভোট নয় : মোদী
Updated: 07 Feb 2021, 06:24 PM IST- শুভেন্দু অধিকারীর জেলায় বছরের প্রথম রাজনৈতিক কর্মসূচি মোদীর।
বাম কর্মীদের বিজেপিতে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। আর সেই শুভেন্দুর তালুকে বাম-কংগ্রেস জোটকে ভোট দিতে নিষেধ করলেন নরেন্দ্র মোদী। দাবি করলেন, তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে ‘ম্যাচ ফিক্সিং’ করেছে বাম-কংগ্রেস। তাই বাম-কংগ্রেসকে ভোট দেওয়া মানে আদতে তৃণমূলের হাত শক্ত করা। তবে সেই সময়টুকু বাদ দিয়ে বাকি সময়টার প্রায় পুরোটাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূলকেই আক্রমণ করে গেলেন মোদী। দাবি করলেন, যে পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন মমতা, তা পূরণ হয়নি। ‘আসল পরিবর্তন’ আনবে বিজেপি। সেই সঙ্গে তৃণমূলের আমলে বাংলার ‘দুর্দশার’ কাহিনিও তুলে ধরেন। শিল্প-পরিকাঠামোর অবস্থা নিয়েও সরব হন। তার কিছুক্ষণ পরেই একাধিক উন্নয়নমূলক প্রকল্পের সূচনা এবং শিলান্যাস করে বিজেপিকে উন্নয়নের কাণ্ডারী হিসেবে তুলে ধরলেন। তা থেকে রাজনৈতিক মহলের মত, এক ঢিলে দুই পাখি মারার কৌশলে নিখুঁত তাক করেছিলেন মোদী।
'বাংলায় তো সপ্তম বেতন কমিশন চালু হয়নি', ভোটের আগে ‘ক্ষত’ খুঁচিয়ে দিলেন মোদী – বিস্তারিত পড়তে ক্লিক করুন এখানে
‘ফাউল’ করেছে তৃণমূল, ‘রাম কার্ড’ দেখাবে জনতা, হলদিয়ায় বললেন মোদী – বিস্তারিত পড়তে ক্লিক করুন এখানে
বিজেপি ক্ষমতায় এলে বকেয়া সমেত PM কিসান প্রকল্পের টাকা মিটিয়ে দেবে সরকার: মোদী – বিস্তারিত পড়তে ক্লিক করুন এখানে
হলদিয়ায় সরকারি অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
মোদী : বাংলায় আমাদের লড়াই তৃণমূলের সঙ্গে। কিন্তু ওদের লুকিয়ে থাকা বন্ধুদের থেকেও সতর্ক থাকতে হবে। কিন্তু ম্যাচ-ফিক্সিং হয় শুনেছেন তো। বাম-কংগ্রেস-তৃণমূল কংগ্রেস মিলে রাজনীতির পর্দার পিছনে ম্যাচ ফিক্সিং করছে। বাংলায় হাত মিলিয়ে আছে বাম-তৃণমূল। তাই বাম-কংগ্রেসকে ভোট দেওয়া মানেই তৃণমূলের সুবিধা। তাই সতর্ক থাকতে হবে। অন্যদেরও সতর্ক করতে হবে।
মোদী : পশ্চিমবঙ্গে আসল পরিবর্তন হবে। পরিবর্তন আদতে কী হয়, তা দেখাবে বিজেপি সরকার। সেই প্রমাণ তো পাচ্ছে ত্রিপুরা। দেশের বিভিন্ন রাজ্যে সপ্তম বেতন কমিশন লাগু হয়েছে। এখানে এখনও সপ্তম বেতন কমিশন কার্যকর হয়নি। এমনকী আমায় তো বলেছে যে এখানকার কর্মচারীরা সময় মতো বেতনও পান না। বাংলার মানুষ তো ফুটবল ভালোবাসেন। তৃণমূল অনেক 'ফাউল' করেছে, খুব শীঘ্রই বাংলা তৃণমূলকে রাম কার্ড দেখাবে।
মোদী : কৃষকদের নামে কে রাজনীতির রুটি সেঁকছেন আর কে কৃষকদের যাবতীয় সমস্যা দূর করার চেষ্টা করছেন, তা গত বছর ছ'বছর ধরে দেখে আসছে দেশ। এই নির্বাচনে যে বিজেপি ক্ষমতায় আসবে, তা বাংলার মানুষরা ঠিক করে ফেলেছেন। আমি বলে যাচ্ছি, বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী সম্মান নিধি প্রকল্প চালু করার সিদ্ধান্ত নেবে। আর এতদিন যে টাকা পাননি রাজ্যের কৃষকরা, তাও দেওয়া হবে।
মোদী : আমার অত্যন্ত খারাপ লাগে যে পশ্চিমবঙ্গের কৃষকরা লাখ লাখ টাকা পাননি। করোনাভাইরাসের সময় লাখ লাখ-কোটি কোটি দেওয়া হয়েছে। দেশের ১০ কোটি ছোটো কৃষক সেই টাকা পেয়েছেন। তাতে পশ্চিমবঙ্গের লাখ-লাখ পরিবার থাকতে পারত। কিন্তু তা হয়নি। পশ্চিমবঙ্গের সরকারের আপত্তিতে তা হয়নি। এখন কৃষকরা চেপে ধরেছেন বলে বাধ্য হয়ে এখন শুধু দেখানো সম্মতি দিয়েছে মমতা সরকার।
মোদী : দিদিকে নিজের অধিকার 'ভারতমাতা কী জয়'-এর ধ্বনি দিলেই রেগে যান দিদি। কিন্তু দেশের বিরুদ্ধে যাঁরা বিষ ঢেলে যাচ্ছেন, তাঁদের বিষয়ে তো কোনও কথাই বলছেন না। চা-বাগান, যোগ নিয়ে আন্তর্জাতিক স্তরে ষড়যন্ত্র করছে। কিন্তু তা নিয়ে দিদির মুখে কিছু শুনেছেন! মা-মাটি-মানুষের স্লোগান দেওয়া লোকেরা আজ ভারতমাতার জন্য স্বর উঁচু করতে পারছেন না। সাহস করতে পারছেন না। মরিচঝাঁপির গণহত্যা হয়েছিল। নন্দীগ্রামের ঘটনায় যাঁরা দোষী ছিল, তাঁরা কেন তৃণমূলের দলে এখন? গরিবরা কি শুধু ভোট নেওয়ার জন্য?
মোদী : ২০১১ সালে মমতাদি বাংলায় পরিবর্তনের ডাক দিয়েছিলেন। তাঁর সেই আহ্বানের ফলে সারাদেশের নজর বাংলার দিকে ছিল। কিন্তু তাঁর থেকে যা আশা ছিল, তা তো মেলেনি। উলটে নির্মমতা বেড়েছে। মমতার আশা ছিল, ১০ বছরে নির্মমতার শিকার হয়েছে বাংলা।
মোদী : আমি এবার পশ্চিমবঙ্গে এসে একটা প্রশ্ন করতে চাই। পরাধীনতার সময় দেশের মধ্যে সবথেকে উন্নত জায়গার মধ্যে অন্যতম ছিল পশ্চিমবঙ্গ। পরিকাঠামো, বাণিজ্যের নিরিখে সারাদেশে বিশেষ ছিল পশ্চিমবঙ্গের। আগে বাংলা থেকে যাঁরা শিক্ষা নিয়ে বেরোতেন, তাঁদের বিশেষ সম্মান ছিল। এখনও আছে, সেই আগের জন্য। বাংলা কেন পিছিয়ে পড়েছে? আগে বাংলার যেমন উন্নয়ন হত, গত দশকে তা পিছিয়ে পড়েছে। গত ১০ বছরে বাংলার শিল্পের কী অবস্থা হয়েছে? পশ্চিমবঙ্গের এরকম অবস্থার সবথেকে কারণ এখানকার রাজনীতি।
নরেন্দ্র মোদী বললেন, ‘বাংলার উন্নয়ন কলকাতায় মেট্রো প্রকল্পের কাজ চলছে। এবারের বাজেটে এই প্রকল্পে আরও গতি দিয়েছে। এবার বাজেটে পশ্চিমবঙ্গে হাইওয়ে তৈরির জন্য টাকা ঢালা হয়েছে। গতবারের তুলনায় রেলওয়েতে ২৫ শতাংশ বেশি খরচ করা হবে।’ একইসঙ্গে মেদিনীপুরের মত্স্যজীবী, চা-বাগান শ্রমিকদেরও বার্তা দিলেন মোদী।
উত্তরাখণ্ডের বিপর্যয় দিয়ে ভাষণ শুরু করলেন মোদী। তারপর বাংলার প্রসঙ্গ আসতেই বাংলায় কথা বলা শুরু করলেন। বাংলায় বললেন, ‘আমার প্রিয় মা-বো-ভাই-বন্ধুরা, মেদিনীপুরের এই পবিত্র মাটিতে আসতে পেরে নিজেকে ধন্য বোধ করছি। শহিদ মা মাতঙ্গিনী, শহিদ ক্ষুদিরামের রক্ত রাঙা হয়েছে এই ভূমি। এই মাটিতে তৈরি হয়েছিল তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার। এই মাটির বীর সন্তান বিদ্যাসাগর মহাশয় বাঙালিকে বর্ণপরিচয় দিয়েছে।’
হলদিয়ায় নরেন্দ্র মোদীর সভা।
বিকেল ৪ টে ৫ মিনিট নাগাদ হলদিয়ার হেলিপ্যাড ময়দানে অবতরণ করল মোদীর হেলিকপ্টার। মোদী হলদিয়ায় নামার সময় ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি উঠল। সঙ্গে ‘ভারতমাতা কী জয়’-ও স্লোগান দেওয়া হয়েছে।
কলকাতায় পৌঁছালেন নরেন্দ্র মোদী। দুপুর ৩ টে ১৩ মিনিটে তাঁর বিমান কলকাতায় অবতরণ করে। রাজ্যের তরফে বিমানবন্দরে তাঁকে হাজির আছেন মন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু এবং রাজ্যের মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়। এছাড়াও আছেন বিজেপির একঝাঁক নেতা।
অসম থেকে বাংলায় আসবেন মোদী। দুপুর ৩ টে ১০ মিনিটে কলকাতা বিমানবন্দরে অবতরণ করবেন মোদীর বিমান। সেখান থেকে হেলিকপ্টারে করে হলদিয়ায় পৌঁছাবেন।
হলদিয়ায় মোদীর সভার আগে উত্তপ্ত নন্দীগ্রাম, BJP-র বৈঠকে হামলার অভিযোগ, আহত ৫ – আরও পড়ে নিন
এক ঢিলে দুই পাখি - রবিবার হলদিয়ায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ঝটিকা সফর নিয়ে এমনই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। একে তো আসন্ন বিধানসভা ভোটের জন্য চলতি বছর প্রথম রাজনৈতিক সভা করবেন। তারপরেই সরকারি অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। কয়েকটি উন্নয়নমূলক প্রকল্পের সূচনা করবেন। রাজনৈতিক মহলের মতে, এমনভাবেই সূচি তৈরি হয়েছে যাতে প্রথমে তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানাবেন মোদী, তারপর একাধিক প্রকল্পের মাধ্যমে বার্তা দেবেন যে রাজ্যের ‘উন্নয়নের’ জন্য কেন্দ্রের বিজেপি সরকার কতটা উদ্যোগী। অর্থাৎ হলদি নদীর পাড়ে শুভেন্দু অধিকারীর তালুকে দাঁড়িয়ে বঙ্গ জয়ের ঘুঁটি সাজিয়ে দিয়ে যাবেন মোদী।