জাতিগত, ধর্মীয় মেরুকরণের এক নজিরবিহীন ভোট দেখেছে এবারের বাংলা। কিন্ত গণনা শেষে কী বলছে বাংলার ফলাফল? বাসিন্দাদের একাংশের মতে, রাজবংশী, নমঃশূদ্র ভোটব্যাংককে নিজেদের আয়ত্তে রাখতে এবার একেবারে প্রতিশ্রুতির ফুলঝুড়িও ফুটিয়েছিলেন দুপক্ষই। কিন্তু ভোটগণনার শেষে কার দিকে পাল্লা কত ভারী? রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, বাংলার তফশিলি জাতির জন্য সংরক্ষিত আসনগুলি মূলত রাজ্যের উত্তরভাগে, দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্ব ভাগে রয়েছে। অন্যদিকে তফশিলি উপজাতির জন্য সংরক্ষিত আসনগুলি মূলত উত্তর ও পশ্চিমভাগে রয়েছে।
প্রথমে দেখা যাক প্রচারপর্বে কী বলে মন জয়ের চেষ্টা করেছিল গেরুয়া শিবির? রাজনৈতিক মহলের মতে, উদ্বাস্তু, শরনার্থীদের নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা বলে মন জয়ের চেষ্টা করেছিল বিজেপি। অন্যদিকে সিএএকে হাতিয়ার করে তফশিলি ও নমশূদ্রদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরির চেষ্টা করে তৃণমূল। ভোটের ফলাফল বের হওয়ার পর দেখা যাচ্ছে তৃণমূলের দাওয়াইতে কাজ হয়েছে। তফশিলি জাতিভুক্ত অনেকেই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন বিজেপির দিক থেকে। অনেকেই বলছেন, শুধু নাগরিকত্বের কথা বললে পেট ভরে না। কর্মসংস্থানের কী হবে সেব্যাপারে কিছু দিশা দেখাতে পারেনি বিজেপি। তবুও তফশিলি সংরক্ষিত আসনে তুলনামূলকভাবে ভালো ফল করেছে বিজেপি, অসংরক্ষিত আসনের তুলনায়।
এসসি সংরক্ষিত ৬৮টি আসনের মধ্যে ৩২টিতে জয়ী হয়েছে বিজেপি। ৩৬টিতে জয়ী হয়েছে তৃণমূল।তবে আঞ্চলিক কিছু বিষয়ও রয়েছে। উত্তরবঙ্গে যখন গেরুয়া গড় রক্ষা পেয়েছে কিছু ক্ষেত্রে তখন দক্ষিণবঙ্গে তৃণমূলের ফল ভালো। উত্তরবঙ্গে এসসি সংরক্ষিত ২০টি আসনের মধ্যে১১টি বিজেপির দখলে, ৯টি গিয়েছে তৃণমূলের দখলে।এদিকে দুই ২৪ পরগনায় এসসি সংরক্ষিত আসনে তৃণমূলের ফল অপেক্ষাকৃত ভালো। জঙ্গলমহলেও ভালো ফল তৃণমূলের। অন্যদিকে এসটি সংরক্ষিত যে আসনগুলি এবার বিজেপির দখলে গিয়েছে সেখানেও ভোটের ব্যবধান গত লোকসভার তুলনায় কমেছে। কিন্তু কেন এসসিদের একটা বড় অংশ আস্থা রাখল তৃণমূলের উপর? রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে,সরকারি নানা স্কিম, জাতিগত শংসাপত্র বণ্টন, একাধিক উন্নয়ন বোর্ডের সুফল পেয়েছেন বাসিন্দারা। সিএএ নিয়েও নানা বিভ্রান্তি ছড়িয়েছিল তাঁদের মধ্যে। এর জেরে অনেকে মুখ ফিরিয়েছেন বিজেপির দিক থেকে। এমনকী যার ফলস্বরূপ বলাগড় কেন্দ্রে দলিত লেখক বলে পরিচিত মনোরঞ্জন ব্যাপারী হারিয়ে দিয়েছেন বিজেপি প্রার্থীকে। যেখানে ২০১৯এর লোকসভা ভোটে এই আসনে প্রায় ৩৫ হাজার ভোটে পিছিয়ে ছিল তৃণমূল। মোটের উপর সিএএর আশ্বাসে চিঁড়ে ভেজেনি।ভোট বাজারে দক্ষিণের মাটিতে কার্যত তফশিলি ভোটের বড় অংশ মুখ ফিরিয়েছে বিজেপির দিক থেকে, যা তৃণমূল শিবিরে এনেছে স্বস্তির হাওয়া।