বেহালা পূর্বে শোভনই ছিলেন একচ্ছত্র অধিনায়ক। কিন্তু সময়ের সঙ্গে নদীতে বয়ে গিয়েছে অনেক জল। তবে তাঁর ছেড়ে যাওয়া মসনদে স্থলাভিষিক্ত হতে পারেন শোভন পত্নী রত্না চট্টোপাধ্যায়। বেহালা পূর্ব কেন্দ্রে তৃণমূলের প্রার্থী হতে পারেন শোভন পত্নী রত্না। রাজনৈতিক আলিন্দে এই জল্পনাই এখন ঘোরাফেরা করছে। সুতরাং স্বামী–স্ত্রীর মুখোমুখি লড়াই সংসারের পর রাজপথে দেখতে চলেছে মহানগরী বলে মনে করছেন রাজনৈতিক কুশীলবরা।
সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই তাঁকে প্রার্থী হিসাবে তৈরি থাকতে নির্দেশ দিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব। তবে এই বিষয়ে তাঁকে এখনই মুখ খুলতে নিষেধ করা হয়েছে। যদিও আর কয়েকদিনের মধ্যেই তৃণমূলের প্রার্থী তালিকা ঘোষণা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তখনই দলের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে রত্না চট্টোপাধ্যায়ের নাম জানানো হতে পারে। তবে যদি শোভনকেও বিজেপি ওই এলাকার প্রার্থী করে, সেক্ষেত্রে সম্মুখসমরে স্বামী—স্ত্রী’র ভোট যুদ্ধ দেখবে রাজ্য।
উল্লেখ্য, গত ১৪ আগস্ট ২০১৯ সালে বান্ধবী বৈশাখী বন্দোপাধ্যায়কে সঙ্গে নিয়ে দিল্লিতে জেপি নড্ডার হাত থেকে পতাকা তুলে বিজেপিতে যোগ দেন শোভন চট্টোপাধ্যায়। সেদিনই বেহালার এক দলীয় কর্মসূচিতে যোগ দিয়ে রত্নাকেই স্বামীর ছেড়ে যাওয়া জায়গার দায়িত্ব নিতে বলেছিলেন মমতা বন্দোপাধ্যায়। কিন্তু ওই বছরে ভাইফোঁটার দিন পুনরায় বৈশাখীকে নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর কালীঘাটের বাসভবনে উপস্থিত হন শোভন। সেদিনই এই সমীকরণের বদলে শোভনের দলে ফেরার জল্পনা দেখা দেয়। আরও খবর, শোভন–বৈশাখীরা শর্ত দিয়েছেন, রত্নাকে যাবতীয় দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিতে হবে। তখনই বেহালা পূর্বের ‘কো–অর্ডিনেটর’ পদের দায়িত্ব দিয়েও রত্নাকে সরিয়ে দেওয়া হয়। এই নিয়ে পারিবারিক বিবাদ চরমে উঠলে, বেহালার বাড়ি ছেড়ে গোলপার্কের বহুতল আবাসনে গিয়ে ওঠেন শোভন। তখনও শোভন বেহালা পূর্বের বিধায়ক ছাড়াও ১৩১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ছিলেন। শোভনের অনুপস্থিতিতে রত্নাই ওই এলাকার পুর পরিষেবার দায়িত্ব হাতে তুলে নিয়েছিলেন।
কলকাতা পুরসভার কাউন্সিলরদের মেয়াদ শেষের পর রত্নাকেই আবার ‘কো–অর্ডিনেটর’ নিয়োগ করেন তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব। জানা গিয়েছে, শোভনকে জবাব দিতে তাঁর কেন্দ্রে রত্নাকেই প্রার্থী করার বিষয়ে মনস্থির করেছেন তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব। ওই বিষয়ে রত্না বলেন, ‘আমি প্রার্থী হবো কি না— তা দল ঠিক করবে। এখনও আমাকে প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে কিছুই জানানো হয়নি। দল আমাকে যখন যে দায়িত্ব দিয়েছে, তা পালন করার চেষ্টা করেছি। যেখানে লড়াই করতে পাঠাবে লড়ব।’
দলের শীর্ষনেতাদের একটা বড় অংশের ধারণা, রত্নাকে ওই কেন্দ্রে দাঁড় করালে, জয় অনেকটাই নিশ্চিত। ঘটনাচক্রে, একটি রোড–শো করতে এসে শোভনের বান্ধবী বৈশাখী জানিয়েছিলেন, বিজেপি নেতৃত্ব চাইলে, বেহালা পূর্ব থেকেই প্রার্থী হবেন শোভন। রত্নাকে প্রার্থী করার প্রশ্নে বৈশাখী ওই মন্তব্যও করে থাকতে পারেন বলে তৃণমূলের একাংশের ধারণা।