বাংলার বিধানসভা নির্বাচনে সোশ্যাল মিডিয়ার ভূমিকা খুবই জরুরি। তাই রাজ্য সফরে এসে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলার সাইবার সেলকে ১০ লক্ষ মোবাইল গ্রাহকের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার বার্তা দিলেন। আর তা করতে হবে মার্চ–এপ্রিল মাসের মধ্যে বলেও নির্দেশ দেন তিনি। আর সেখানে অভিনব মেসেজ পাঠাতে হবে বলেও নিদান দেন তিনি। আইটি সেলের প্রতিটি দলকে চারটি ভাগে ভাগ করার পরামর্শ দিলেন তিনি। সায়েন্স সিটি অডিটোরিয়ামে বিজেপির সোশ্যাল মিডিয়া স্বেচ্ছাসেবকদের সঙ্গে আলাপচারিতায় এই কথাগুলি বললেন অমিত শাহ।
এদিন রীতিমতো ক্লাস নেন শাহ। আইটি সেলের সদস্যদের তিনি স্পষ্টভাষায় জানিয়ে দেন, ‘শুধু উৎসাহ, উদ্দীপনা দিয়ে ভোটে জেতা সম্ভব নয়। আমাদের বুদ্ধিমত্তা এবং অভিনত্ব ব্যবহার করতে হবে।’ একইসঙ্গে প্রত্যেকটি পোলিং স্টেশনে একটি করে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ তৈরি করতে হবে। রাজ্যে মোট ৮০ হাজার পোলিং স্টেশন আছে। সেখানে এই গ্রুপ তৈরি করে বিজেপির কথা তুলে ধরার কথাও বলেছেন তিনি। এই নিদান পাওয়ার পরই কাজে নেমে পড়েছে গেরুয়া শিবিরের আইটি সেল বলে সূত্রের খবর।
বিধানসভা নির্বাচনে সরাসরি প্রচার, জনসভার পাশাপাশি এভাবে বাংলায় জায়গা করতে চাইছে বিজেপি বলে জানা গিয়েছে। নতুন প্রজন্মের কাছে এভাবে পৌঁছতে পারলেই ভোটব্যাঙ্ক বাড়বে বলে মনে করেন শাহ। তাই সোশ্যাল মিডিয়াকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে চাইছেন তিনি। এখানে তিনি বার্তা দেন, ‘বাংলায় বিধানসভা নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর বিজেপিকে জিততে হবে ওড়িশা, তেলঙ্গানা, অন্ধ্রপ্রদেশ, তামিলনাড়ু এবং অবশেষে কেরলে। বিজেপির পতাকা সারা দেশে যেন উড়ে। মোবাইল ফোনে প্রবেশ করে মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নিন। তৃণমূল কংগ্রেসের দুষ্কৃতিরা আপনাদের এই কাজে বাধা দিতে পারবে না।’
উত্তরপ্রদেশে এভাবেই জয় এসেছিল বলেও আইটি সেলের সভায় জানান দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি পরামর্শ দেন, ‘তিন ভাগে আপনারা কাজকে ভাগ করে নিন। প্রথম কাজ—ধর্মীয় বিষয় এবং সামাজিক আবেগকে কাজে লাগানো। দ্বিতীয় কাজ—মানুষকে বোঝানো বাংলা আগে কোন জায়গায় ছিল আর এখন কোথায় নেমে এসেছেন। তৃতীয় কাজ—গণতান্ত্রিক অধিকারে বামেদের জমানায় কিভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছিল এবং ভোটের অধিকারের উপর কিরকম হিংসা নামিয়ে আনা হয়েছিল। মানুষের কাছে মেসেজ পাঠান গ্রাফিক্স করে। তাহলে মানুষ পড়বে। শুধু লেখা মানুষ পড়তে চায় না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতিও এখানে তুলে ধরতে হবে।’
উল্লেখ্য, বিভিন্ন জনসভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী বারবার বিজেপির বিরুদ্ধে ভুয়ো ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন। এমনকী সেই সব ভিডিও–কে বিশ্বাস করতেও নিষেধ করেছেন। এই পরিস্থিতিতে বাংলায় টুকরে টুকরে গ্যাং সক্রিয়। তাদের মুখোশ খুলে দিতে হবে বললেন শাহ। সুতরাং আগামী দিনে ভোটের সময় যত এগোবে সোশ্যাল মিডিয়া প্রচার তত বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে। এদিনের রুদ্ধদ্বার সম্মেলনে ছিলেন অমিত মালব্য, দিলীপ ঘো্ষ এবং শুভেন্দু অধিকারীও।
চারটি সাইবার টিম তৈরি করতেও বলেছেন শাহ। সেখান থেকে প্রত্যেক পরিবারের কাছে মেসেজ পাঠান, শুধুমাত্র প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বাংলাকে বাঁচাতে চান। এখানে তিনি চারটি টিমের বাগও বলে দেন। তিনি বলেন, ‘প্রথম টিমের কাজ হবে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষণ এবং পরিসংখ্যানগত মেসেজ তৈরি করা। দ্বিতীয় টিম নতুন আঙ্গিকে কন্টেন্ট তৈরি করবে। তৃতীয় টিম সেই মেসেজ চারিদিকে ছড়িয়ে দেবে এবং চতুর্থ টিম এই মেসেজ ছড়িয়ে পড়ার পর যে প্রতিক্রিয়া উঠে আসছে তা সংগ্রহ করবে।’